পঞ্চগড়ে জেলায় বেড়েছে শীতের প্রকোপ। জেলায় দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ২৬ থেকে ২৭ এবং রাতের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১১ থেকে ১২ এর ঘরেই উঠানামা করছে।
বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) সকাল ৯টায় সর্বনিম্ন ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করে তেঁতুলিয়া আবহাওয়া অফিস।
বুধবার (৩ ডিসেম্বর) সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১২ ডিগ্রি। এর আগে মঙ্গলবার চলতি শীত মৌসূমের সর্বনিম্ন ১১ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় তেঁতুলিয়ায়।
কয়েকদিন ধরে দিন ও রাতের তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় উত্তরের হিমেল বাতাস আর ঘনকুয়াশায় শীতের প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিদিন সন্ধ্যার পর থেকে হালকা কুয়াশার সাথে কনকনে শীত অনুভূত হয়। রাতভর হালকা থেকে ঘনকুয়াশায় ঢেকে থাকে এলাকা। তবে ভোরের দিকে সূর্য উদয়ের সঙ্গে কমতে থাকে ঠাণ্ডার অনুভূতি। তবে প্রতিদিন বিকেলের পর থেকে আবারও শুরু হয় শীতের অনুভূতি।
অন্যদিকে দিনে গরম এবং রাতে শীতের কারণে কারণে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বাড়ছে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা। পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের বহিঃবিভাগে প্রতিদিন গড়ে তিন শতাধিক রোগী কাশি, সর্দি, শ্বাসকষ্ট নিয়ে চিকিৎসা সেবা নিচ্ছেন। বিশেষ করে শিশু ও বেশি বয়স্করা সর্দি, কাশি, নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন। হাসপাতালের বিভিন্ন কক্ষে স্থান সংকুলান না হওয়ায় মেঝে বা বারান্দায় স্থান নিয়েছেন অনেক রোগী।
জেলা প্রশাসন জানায়, শীতের জেলা পঞ্চগড়ে অন্য এলাকার তুলনামূলক আগেই শীতের অনুভূতি শুরু হয়। এজন্য শীতের শুরুতেই এখানে শীতবস্ত্রের বিতরণ শুরু করা হয়েছে। সরকারিভাবে প্রাপ্ত ৩০ লাখ টাকা দিয়ে ইতোমধ্যে ৮৬৪০ পিছ শীতের কম্বল ক্রয় করে বিতরণ করা হয়েছে। আরও শীতবস্ত্রের চাহিদা জানিয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
জেলা শহরের তুলার ডাংগা খালপাড়া এলাকার ইজিবাইক চালক মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে প্রতিদিন সন্ধ্যার পর থেকে সকাল পর্যন্ত ভালই ঠাণ্ডা লাগে। রাতে কুয়াশাচ্ছন্ন থাকে এলাকা। ফজরের সময় বেশ শীত অনুভূত হয়।
মসজিদ পাড়ার সাদেকুল ইসলাম বলেন, ফজরের আযানের সময় আমাদের ঘুম থেকে উঠতে হয়। তখন কনকনে ঠাণ্ডা থাকে। নামাজ পরে হাটতে বের হই।
পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. মনোয়ার হোসেন বলেন, শীতের শুরুর দিকে প্রতি বছর শীতজনিত কাশি, সর্দি, শ্বাসকষ্ট নিয়ে চিকিৎসা সেবা নেন। বিশেষ করে শিশু ও বেশি বয়স্করা সর্দি, কাশি, নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হন। এবারও একই অবস্থা দেখা যাচ্ছে। আমরা সচেতনের পরামর্শ এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা দিচ্ছি।
তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জিতেন্দ্রনাথ রায় বলেন, বৃহস্পতিবার সকাল ৯ টায় সর্বনিম্ন ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৮৪ শতাংশ। বুধবারও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১২ ডিগ্রি। চলতি মাসের শুরু থেকে মাঝামাঝি সময়ে এক বা দুইটি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে।
জেলা প্রশাসক কাজী মো. সায়েমুজ্জামান বলেন, উত্তরের হিমালয়ের শৈত্য প্রবাহে এখানে শীতের তীব্রতা বেশি এবং অধিকাংশ দিন সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বিরাজ করে। চরম ঠাণ্ডা আবহাওয়া মোকাবেলা করতে শীতের কম্বল কেনার জন্য প্রাপ্ত টাকা দিয়ে ৮ হাজার ৬৪০ পিস কম্বল ক্রয়পূর্বক বিতরণ করা হয়েছে। আরও ৬৫ হাজার পিছ কম্বলের চাহিদা জানিয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, কম্বলের চাহিদা বেশি থাকায় ২৭৫ থেকে ৩২৫ টাকার মধ্যে কম্বল ক্রয় করা হয়। এ মানের কম্বল এক বছরের বেশি ব্যবহার করা যায় না। একটি কম্বল যাতে কয়েক বছর ব্যবহার করা যায়, সেজন্য কমপক্ষে ১ হাজার টাকা মূল্যের মানসম্মত কম্বল বিতরণ করা প্রয়োজন। এতে এ বছর কম্বল বিতরণ করা হলে পরবর্তী বছর একই ব্যক্তিকে কম্বল বিতরণ করতে হবে না।
সফিকুল আলম/এনএইচআর/এমএস