মানুষ তিন ধরনের স্বপ্ন দেখে। কিছু স্বপ্ন আসে মানুষের কল্পনা থেকে। মানুষ যা ভাবে বা কল্পনা করে সেটাই ঘুমের মধ্যে স্বপ্ন হয়ে আসে। এসব স্বপ্ন মানুষ দেখে আবার ভুলে যায়। এগুলোতে বিশেষ কোনো ইশারা বা অর্থ থাকে না। কিছু স্বপ্ন আসে আল্লাহর পক্ষ থেকে যা সুসংবাদ, সতর্ক করা বা ভবিষ্যতের কোনো ঘটনার ইশারা হিসেবে আসে। আর কিছু স্বপ্ন আসে শয়তানের পক্ষ থেকে যা দেখে মানুষ ভয় পায়, আতঙ্কগ্রস্ত হয়।
আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত নবীজি (সা.) বলেছেন, যখন কেয়ামত নিকটবর্তী হবে, তখন বেশিরভাগ সময়ই মুসলমানদের স্বপ্ন মিথ্যা হবে না। আপনাদের মধ্যে সর্বাধিক সত্যভাষী ব্যক্তি সর্বাধিক সত্য স্বপ্ন দেখবে। আর মুসলমানের স্বপ্ন নবুয়তের পঁয়তাল্লিশ ভাগের এক ভাগ। স্বপ্ন তিন প্রকার, ভাল স্বপ্ন আল্লাহর পক্ষ থেকে সুসংবাদ হিসেবে আসে। কিছু স্বপ্ন শয়তানের পক্ষ থেকে আসে যা দুশ্চিন্তা বা দুর্ভাবনা তৈরি করে। আর কিছু স্বপ্ন মানুষের নিজের চিন্তা-ভাবনা থেকে তৈরি হয়। (সহিহ মুসলিম)
এ হাদিস থেকে বোঝা যায় অর্থহীন অনেক স্বপ্নের পাশাপাশি মানুষ অর্থবহ স্বপ্নও দেখে যা আল্লাহর পক্ষ থেকে আসে। কেউ যদি স্বপ্নে মৃত কোনো ব্যক্তিকে জীবিত দেখে, ওই স্বপ্নও অর্থহীন বা অর্থবহ দুই রকমই হতে পারে। নিজের স্মৃতি বা কল্পনা দেখে যেমন কেউ মৃত কোনো ব্যক্তিকে জীবিত দেখতে পারে, কারো স্বপ্নে আল্লাহর পক্ষ থেকে ইশারা হিসেবেও তাদের দেখানো হতে পারে।
সপ্নে মৃত ব্যক্তিকে জীবিত দেখার ব্যাখ্যা সম্পর্কে স্বপ্নের ব্যাখ্যাকার প্রখ্যাত তাবেঈ ইমাম মুহাম্মাদ ইবনে সীরীন (রহ.) বলেন, যদি (অর্থবহ) স্বপ্নে কেউ মৃত ব্যক্তিকে (জীবিত) দেখে তাহলে তাকে যে অবস্থায় দেখবে সেটাই বাস্তব বলে ধরা হবে। তাকে যা বলতে শুনবে, সেটা সত্যি বলে ধরা হবে। কারণ সে এমন জগতে অবস্থান করছে যেখানে সত্য ছাড়া আর কিছু নেই। যদি কেউ মৃত ব্যক্তিকে ভালো পোশাক পরা অবস্থায় বা সুস্বাস্থের অধিকারী দেখে, তাহলে বুঝতে হবে সে ভালো অবস্থায় আছে। আর যদি জীর্ণ, শীর্ণ স্বাস্থ্য বা খারাপ পোশাকে দেখে তাহলে বুঝতে হবে, ভালো নেই। তার জন্য তখন বেশি করে মাগফেরাত কামনা ও দোয়া করতে হবে। (তা’বীরুর রু’য়া লিইবনি সীরীন)
এ ছাড়া মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়া, আমল বা দান-সদকা করার কথা মনে করিয়ে দেওয়ার জন্যও মৃত ব্যক্তিকে স্বপ্নে দেখানো হতে পারে। তাই মৃত বাবা-মা বা আত্মীয় স্বজনকে যে কোনো অবস্থায় দেখলে তার জন্য বেশি বেশি দোয়া করা উচিত, তার রুহে সওয়াব পাঠানোর নিয়তে দান-সদকা করা উচিত।
স্বপ্নে মৃত ব্যক্তিকে জীবিত দেখার দুটি ঘটনাআব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত বিদ্রোহীরা যখন ইসলামের তৃতীয় খলিফা ওসমানের (রা.) বাসভবন ঘেরাও করল, তখন ওসমান (রা.) একদিন বলেন, আমি গত রাতে স্বপ্নে দেখলাম, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, ওসমান আমাদের সাথে তুমি ইফতার করবে। ওই দিনই ওসমান (রা.) শহীদ হলেন। (আল কাওয়ায়েদুল হুসনা ফী তাবীলির রুইয়া)
আনাস ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, আবু মুসা আশআরী (রা.) একদিন আমাকে বললেন, আমি স্বপ্নে দেখেছি, আমি একটি পাহাড়ের কাছে গেছি, পাহাড়ের ওপর রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) রয়েছেন আর পাশে আবু বকর (রা.)। আবু বকর (রা.) তার হাত দিয়ে ওমরের (রা.) দিকে ইশারা করছেন।
আমি আবু মুসার (রা.) এ স্বপ্নের কথা শুনে বললাম, ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন! ওমর (রা.) তো মারা যাবেন! আপনি কি এ স্বপ্নের কথা ওমরকে (রা.) লিখে জানাবেন? আবু মুসা (রা.) বললেন, ওমর (রা.) বেঁচে আছেন, আমি কীভাবে তাকে তার মৃত্যুর সংবাদ দেব!
কিছুদিনের মধ্যেই তার স্বপ্নটা সত্যে পরিণত হয়। ওমর (রা.) শহীদ হন। (আল কাওয়ায়েদুল হুসনা ফী তাবীলির রুইয়া)
ওএফএফ