`১৯৭৬ সালে ৭০ টাকা বেতনে গ্রাম পুলিশে চাকরি নেই। ৪০ বছরেরও বেশি সময় কাটাইয়া দিলাম। সামান্য ৩ হাজার টাকা বেতন দিয়া বউ পোলাপাইন লইয়া কোনো রকমে বাইচ্যা আছি। অহন বাজারে জিনিসপত্রের যা দাম, তার ওপর পোলাপাইনের লেখাপড়ার খরচ, আর চলতে পারছি না।’ এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে অত্যন্ত ভারাক্রান্ত মনে জীবনযুদ্ধের এসব কথা বলছিলেন ঝালকাঠি সদর উপজেলার বাসন্ডা ইউনিয়নের গ্রাম পুলিশ বৃদ্ধ ওয়াজেদ আলী। শুধু ওয়াজেদ আলীই নন, তার মতো এমন কষ্টের কথার সায় দেন দফাদার আ. সোবাহান, সৈয়দ আলী, আ. মতিন, নান্না তালুকদার, নুরুল ইসলাম, জয়নাল, আ. মান্নান, চান মিয়া ও নেপাল। তারা জানান, সাধারণ মানুষের কাছে তারা দফাদার ও চৌকিদার নামে পরিচিত হলেও তারা গ্রামীণ ট্যাক্স কালেকশন, জন্ম-মৃত্যুর তালিকা প্রণয়ন, ভিজিভি ভিজিএফ বণ্টন, বিধবা ভাতা, বয়স্ক ভাতা বিষয়ে অনুসন্ধান ও তালিকা প্রণয়ন, ইউনিয়ন পরিষদের নোটিশ জারি, পুলিশের সঙ্গে আসামি ধরার কাজ, নির্বাচনী ডিউটি পালনের কাজ করেন। এছাড়া যে কোনো সরকারি অনুষ্ঠানের চিঠি বিলি, রাতে পাহারা দেয়া, নিজস্ব এলাকার আইনশৃঙ্খলা শান্ত রাখা, এলাকার অপরাধ সাধ্যমতো সমাধান করা, ইউপি চেয়ারম্যানের নির্দেশে পরিষদের দায়িত্ব পালন, থানার অর্পিত দায়িত্ব পালন, রুটিন অনুযায়ী পরিষদের পাহারার দায়িত্ব পালন ও নিয়মিত থানায় হাজিরা দেয়াসহ ৭০ ধরনের কাজ করি। কোনো ছুটি নেই। কিন্তু বেতন পায় মাত্র ৩ হাজার টাকা। তাদের দাবি, গ্রাম পুলিশকে চতুর্থ শ্রেণির সরকারি কর্মচারীর ন্যায় জাতীয় বেতন স্কেলে অন্তর্ভুক্তকরণ, কেন্দ্রীয়ভাবে স্থায়ী হেডকোয়ার্টার ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন, স্বল্পমূল্যে রেশনিং ব্যবস্থা চালু, ন্যূনতম পাঁচ লাখ টাকা অবসর ও ঝুঁকি ভাতা প্রদানসহ চাকরির নিশ্চয়তা প্রদান। তারা আরো জানান, গ্রাম পুলিশের কোনো স্বতন্ত্র বেতন স্কেল নেই। আগে দফাদাররা ২১০০ টাকা ও চৌকিদাররা ১৯০০ টাকা বেতন পেত। বর্তমান সরকারের আমলে দফাদারদের বেতন ৩৪০০ ও চৌকিদারদের বেতন ৩০০০ টাকা। বেতনের অর্ধেক সরকারি কোষাগার ও বাকি অর্ধেক ইউনিয়ন পরিষদ অফিস দেয়। গ্রাম পুলিশের বেতন সরকারি চতুর্থ শ্রেণির বেতন স্কেলে উন্নীত করা হলে গ্রামীণ উন্নয়ন আরও উন্নত হবে বলে আশা করেন তারা। এসএস/এবিএস