এখন বর্ষাকাল। নড়াইলের খাল-বিলে পানি থৈথৈ। এ সময় বিল এলাকার মানুষের চলাচলের অন্যতম একটি বাহন হলো তালের তৈরি নৌকা, যাকে আঞ্চলিক ভাষায় বলা হয় ডুঙ্গা। কোনো কোনো এলাকায় এটি কোষা নৌকা নামেও পরিচিত। খাল-বিল ঘেরা নড়াইলের বিভিন্ন এলাকায় এখন তাল গাছের তৈরি ডুঙ্গার যত্রতত্র ব্যবহার চলছে। খাল-বিল পাড়ের হাজারো মানুষের একমাত্র বাহন এই ডুঙ্গা। নদী থেকে খালে প্রবেশ করতে, খাল পাড়ি দিয়ে বাজার বা বিভিন্ন কাজে যেতে ও বিল থেকে মাছ-শাপলা তোলাসহ সব কিছুতেই এটি একমাত্র বাহনে পরিণত হয়েছে। তুলনামূলক কম পানিতেই ডুঙ্গা চলে। আকারে ছোট আর চালনায় সহজ বলে শিশু থেকে বয়োবৃদ্ধরাও এই বাহন অতি সহজে ব্যবহার করে থাকেন। অতি প্রয়োজনীয় এই বাহন কেনা বেচার জন্য জেলার বিভিন্ন প্রান্তে বসেছে ডুঙ্গার হাট। নড়াইল-যশোর সড়কে তুলারামপুরের হাট তেমনি একটি বড় ডুঙ্গার হাট। এখানে শুক্রবার আর সোমবার হাট বসে। বর্ষার শুরু থেকে অর্থাৎ জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৪ মাস এই হাটে ডুঙ্গা কেনা-বেচা চলে। আয়তন বুঝে একেকটি ডুঙ্গা ১৫শ থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। বর্ষার কারণে বিলে পানি বাড়লে তখন ডুঙ্গার চাহিদাও বেড়ে যায়।আশেপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে তুলারামপুর হাটে ডুঙ্গা কিনতে আসেন কৃষকসহ গৃহস্থ বাড়ির কর্তারা। যশোরের অভয়নগর থেকে হাটে ডুঙ্গা কিনতে এসেছেন রকিব মোল্যা। বড় সাইজের একটি ডুঙ্গা কিনেছেন সাড়ে ৩ হাজার টাকায়। তিনি জানান, নৌকা দিয়ে সারা বছর চলাচল করা যায় না, তাছাড়া কম পানিতে ডুঙ্গা দিয়ে সব ধরনের কাজ যেমন বিলে মাছ মারা, শাপলা তোলা ঘুনি পাতার কাজ করা যায়, এ বাড়ি ও বাড়ি যেতেও ডুঙ্গা লাগে।ডুঙ্গা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত চর শালিখা গ্রামের সেলিম (নিজেও তৈরী করেন) জানান, একেকটি তালগাছ ১২শ থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত দামে কেনা হয়। ৩ জন শ্রমিক ১ দিন কাজ করলে দুটি ডুঙ্গা তৈরি করা যায় এবং বাজারে নেয়া খরচসহ বিক্রি হিসেবে অন্তত ৩ হাজার টাকা লাভ করা যায়। এসব ডুঙ্গা চাচুড়ী, তুলারামপুর, দিঘলিয়াসহ বিভিন্ন হাটে বিক্রি হয়। সিজিনাল এই ব্যবসা করে এলাকার কয়েকশ মানুষ জীবিকা নির্বাহ করছেন।মূলত একটি ভালো তালগাছের গোড়া মাটির ভিতর থেকে বের করে শিকড়সহ গাছটি কাটা হয়। এরপর গোড়ার অংশটি সুচালো করে ৯ হাত রেখে আলাদা করা হয়। গাছটির মাঝামাঝি অংশে দাঁগ দিয়ে ধীরে ধীরে এপাশ ওপাশ কেটে দুভাগ করে ফেলা হয়। ভিতরের নরম অংশ কোদাল আর শাবল দিয়ে কুপিয়ে শাস পরিস্কার করে তৈরি হয় ডুঙ্গা।সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তির এই বাহন লোক সংস্কৃতির অংশ তাই একে টিকিয়ে রাখা প্রয়োজন বলে লোক সংস্কৃতি গবেষক এবং স্থানীয় সংস্কৃতিসেবীদের অভিমত। তবে এলাকার লোকেরা বলছেন বিল আর খালের পানি কমে যাওয়ায় ধীরে ধীরে ডুঙ্গার ব্যবহার কমছে। খালে-বিলে পানি প্রবাহ সঠিক রাখার দাবিও জানান সংশ্লিষ্ট এলাকাবাসী।হাফিজুল নিলু/এফএ/পিআর