দেশজুড়ে

মধুমতির ভাঙনে দিশেহারা তারা

নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার তেতুলিয়া ও কামঠানা গ্রামে মধুমতি নদীর ভাঙন ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। গত দুই সপ্তাহে মধুমতির গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে ২৮টি বসতবাড়ি। ভাঙন অব্যাহত থাকায় ঝুঁকিতে রয়েছে আরো শতাধিক ঘরবাড়িসহ একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়। সহায়-সম্বল হারিয়ে ভাঙনকবলিত পরিবারগুলো দিশেহারা হয়ে পড়েছে।স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত দুই সপ্তাহে মধুমতিতে বিলীন হয়েছে লোহাগড়া ইউনিয়নের তেতুলিয়া ও কামঠানা গ্রামের ২৮ বসতভিটা। এর মধ্যে আলতাফ মোল্লা, লুৎফর মোল্লা, খায়ের মোল্লা, আনোয়ার মোল্লা, তোরাফ মোল্লা, হামিদ মোল্লা, কুদ্দুস মোল্লা, মনি মিয়া, আলী মিয়া, আজগর মোল্লা, ইউনুছ ফকির, পারভীন, সাইফুল মোল্লা, আলেক মোল্লা ও ইলিয়াছ ফকিরের বাড়ির চিহ্নও নেই। যেকোনো সময় নদীগর্ভে বিলীন হতে পারে ঘাঘা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।এছাড়া নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে ফসলি জমি ও গাছপালা। ঝুঁকিতে রয়েছে শতাধিক বসতবাড়ি। গত বছর তেতুলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন বর্ষা মৌসুমে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। নদীর তীরে ছাপড়া ঘর তুলে কোনো মতে চলছে শিশু শিক্ষার্থীদের পাঠদান। এলাকার প্রবীণেরা বলছেন, গত দুই যুগ ধরে এ দুই গ্রামের বসতবাড়ি, ফসলিজমি ও গাছপালা নদীতে বিলীন হয়ে অন্তত দেড় হাজার পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ৩-৪ বারও ভাঙনের শিকার হয়েছে গ্রামের অনেক পরিবার।ওই এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, ক্ষতিগ্রস্ত মানুষজন ভাঙন আতঙ্কে অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন তাদের ঘরবাড়ি। ঘরবাড়ি বিলীন হয়ে কেউ প্রতিবেশী বা আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে, আবার কেউ রাস্তার পাশে ছাপরা তুলে আশ্রয় নিয়েছেন। নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন অনেকে। ফলে তারা মানবেতর জীবনযাপন করতে বাধ্য হচ্ছেন। তেতুলিয়া গ্রামের জয়তুন বেগমের বাড়ি ভাঙনের মুখে। তিনি বলেন, ‘১৫ বছর বয়সে বউ হয়ে এখানে আসি। জমিজমাসহ শ্বশুরবাড়িতে সুখের সংসার ছিল। নদীর ভাঙনে সব হারিয়েছি। দুইবার বসতঘর সরাতে হয়েছে। এখন এই ঘরটি ভেঙে গেলে কোথায় যাব?’একই গ্রামের হামিদ মোল্লা জানান, তাদের প্রায় ৩০ একর ফসলি জমি ছিল। সব এখন নদীতে। এ বছরসহ তিনবার বসতবাড়ি নদীতে গেছে। এখন তারা নিঃস্ব পথের ফকির।স্থানীয় ছয় নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. চান মিয়া মোল্লা বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্তরা এখনো সরকারি কোনো সাহায্য পাননি। গত বৃহস্পতিবার ইউনিয়ন পরিষদ সচিবের কাছে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা দেওয়া হয়েছে।’লোহাগড়া সদর ইউপি চেয়ারম্যান নজরুল শিকদার বলেন, ‘ভাঙন প্রতিরোধে জরুরিভাবে ব্যবস্থা নেয়া না হলে এসব জনপদ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। এ ব্যাপারে সহযোগিতার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) জানিয়েছি।’ইউএনও মো. সেলিম রেজা জানান, সাহয্যের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে আবেদন করতে বলা হয়েছে। আর ভাঙন প্রতিরোধে জেলা প্রশাসক ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্মকর্তাদের অবহিত করা হয়েছে। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (নড়াইল প ও র বিভাগ) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শরিফুল ইসলাম জানান, আমরা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিষয়টির ব্যাপারে অবহিত করেছি। তাই তাদের পদক্ষেপ ছাড়া এর প্রতিকার করা আমাদের পক্ষে ম্ভব নয়।হাফিজুল নিলু/এসএস/পিআর