দেশজুড়ে

ইয়াসমিন ট্র্যাজেডির ২১ বছর পরও থেমে নেই নারী নির্যাতন

ইয়াসমিন ট্র্যাজেডি দিবস আজ। ১৯৯৫ সালের এই দিনে কতিপয় বিপথগামী পুলিশ সদস্য কর্তৃক ধর্ষণ ও হত্যার শিকার হন কিশোরী ইয়াসমিন। এর প্রতিবাদ করতে গিয়ে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে দিনাজপুরের মানুষ। বিক্ষুব্ধ জনতার ওপর নির্বিচারে গুলি চালায় পুলিশ। পুলিশের গুলিতে নিহত হন সাতজন। সেদিন থেকেই সারাদেশে এই দিবসটি পালিত হচ্ছে ‘নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস’ হিসেবে। কিন্তু এ ঘটনার ২১ বছর পর এখনো অনেক নারী ও শিশু নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। বিচার প্রক্রিয়ার ধীরগতি, বিচারহীনতার সংস্কৃতি আর রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়াকেই এজন্য দায়ী করছেন বিশিষ্টজনরা। আবার সামাজিক সচেতনতার মাধ্যমেই এর প্রতিকার সম্ভব বলে মনে করছেন অনেকে।১৯৯৫ সালের ২৪ আগস্ট। দীর্ঘদিন পর মাকে দেখার জন্য আকুল হয়ে ঢাকা থেকে দিনাজপুরে বাড়ি ফিরছিল কিশোরী ইয়াসমিন। কিন্তু দিনাজপুরের কোচে না উঠতে পেরে পঞ্চগড়গামী একটি কোচে ওঠায় কোচের লোকজন তাকে দশমাইল নামক স্থানে নামিয়ে দিয়ে সেখানকার চায়ের দোকানে জিম্মায় দেয়। ওই চায়ের দোকানে একটি পুলিশের ভ্যান এসে নিরাপদে ইয়াসমিনকে দিনাজপুর শহরে মায়ের কাছে পৌঁছে দেবে বলে তুলে নিয়ে যায়। কিন্তু রক্ষক সেজে ভক্ষক হয়ে পথিমধ্যে ভ্যানের ভিতরেই কিশোরী ইয়াসমিনকে উপর্যুপরি ধর্ষণ করে হত্যা করেন পুলিশ সদস্যরা। পরে তার মরদেহ রাস্তার পাশে ফেলে পালিয়ে যান তারা। এ ঘটনার পরদিন মরদেহ পেয়ে প্রথমে দশমাইল এলাকায় প্রতিবাদ সমাবেশ হয়। পরে তা ধীরে ধীরে আন্দোলনে রূপ নেয়। পুলিশের এই বর্বরোচিত ঘটনার প্রতিবাদ জানাতে শান্ত দিনাজপুরবাসী হয়ে ওঠে অশান্ত। বিক্ষোভে ফেটে পড়ে গোটা দিনাজপুরের মানুষ। বিক্ষুব্ধ জনতাকে দমাতে পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালায়। পুলিশের গুলিতে নিহত হয় সামু, সিরাজ, কাদেরসহ সাতজন। গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয় অনেকে। পরে আন্দোলনের মুখে এ ঘটনায় জড়িত তিন পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে ১৯৯৭ সালের ৩১ আগস্ট ফাঁসির রায় হয়। এরপর ২০০৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে জড়িত তিন পুলিশ সদস্যের ফাঁসির রায় কার্যকর হয়। ঘটনার পর ২১ বছর হয়ে গেলেও একমাত্র মেয়েকে হারানোর বেদনা আর দুঃখ নিয়ে এখনো কাঁদছেন ইয়াসমিনের মা শরিফা বেগম। তিনি জানান, দিবসটি আসলে মনে পড়ে তার মেয়ের কথা। আর যাতে কোনো মায়ের কোল খালি না হয় সেই কামনা করেন তিনি। ওই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন শ্রমিক নেতা হারেস আলী। তিনি জানান, ইয়াসমিনকে সেদিন পুলিশ জোরপূর্বক ভ্যানে তুলে নিয়ে ধর্ষণ শেষে হত্যা করে মরদেহ রাস্তার ধারে ফেলে পালিয়ে যায়। পরে প্রতিবাদে তারা বিক্ষোভ মিছিল ও আন্দোলনে নামেন। অনেক আন্দোলন সংগ্রামের পর জড়িত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে ফাঁসির রায় হয়ও রায় কার্যকর হয়। সেদিন আন্দোলনে ভূমিকা রেখেছিল মহিলা পরিষদ। দিনাজপুর মহিলা পরিষদের সভানেত্রী কানিজ রহমান জানান, এখনও অনেক নারী-শিশু নির্যাতনের শিকার হচ্ছে, কিন্তু কোনো বিচার হচ্ছে না। দ্রুত বিচার না চলা, বিচারহীনতার সংস্কৃতি, রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ার ফলে এসব হচ্ছে বলেই মন্তব্য করেন তিনি।ওই সময়ে ইয়াসমিন আন্দোলনকে যিনি বেগবান করেছিলেন তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন বর্তমান দিনাজপুর-১ (বীরগঞ্জ-কাহারোল) আসনের সংসদ সদস্য মনোরঞ্জন শীল গোপাল। তিনি জানান, ইয়াসমিনের ঘটনার পর যে আন্দোলন হয়েছিল তা দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। কিন্তু এখনও নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে। এজন্য আইনের দুর্বলতাকেই দায়ী করেন তিনি। এসব বন্ধ করতে সামাজিক আন্দোলন সচেতনতা প্রয়োজন। আর সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা সম্ভব হলে নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে না। এফএ/এবিএস