দেশজুড়ে

নড়াইলে প্রস্তুত ২১ হাজার গরু

নড়াইলে জমে উঠেছে পশুর হাট। এ বছর পবিত্র কোরবানি ঈদের জন্য ২১ হাজার গরু প্রস্তুত। দেশি গরুর চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। দেশীয় পদ্ধতিতে জেলার চাষিরা গরু মোটাতাজা করে। তাই এই জেলার গরুর চাহিদা বেশি। এ সকল গরুর মাংসের চাহিদাও রয়েছে বেশ। প্রতি বছর কোরবানি ঈদ সামনে রেখে খামারিরা ও কৃষক বাড়িতে গরু মোটাতাজা করে। গত বছর কোরবানি ঈদে জেলার চাহিদা মিটিয়ে প্রায় ৩ হাজার ৭৩৭টি গরু বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা সম্ভব হয়েছে। এ বছর স্থানীয় চাহিদা মিঠিয়ে অন্তত ৮ হাজার উদ্বৃত্ত গরু জেলার বাইরে বিক্রি করতে পারবে বলে দাবি জেলা প্রাণী সম্পদ অফিসের।জেলা প্রাণী সম্পদ অফিস সূত্রে জানা গেছে, প্রতি বছর নড়াইলের কৃষকেরা ও খামারীরা কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে দেশিয় পদ্ধতিতে গরু মোটাতাজা করে। গত বছর ১৫ হাজার ৭৭৪টি গরু মোটাতাজা করেছিল। যার মধ্যে নড়াইল সদর উপজেলায় ৪ হাজার ৫৩২টি, লোহাগড়ায় ৬হাজার ৫৬০টি এবং কালিয়ায় ৪ হাজার ৬৮২টি। চলতি বছর জেলার কৃষকের ব্যক্তিগত খামারী চাষীদের মিলেয়ে বর্তমানে প্রায় ২১ হাজার দেশি গরু পালন করা হচ্ছে। প্রতিবারের নেয় এ বছরও তিনটি উপজেলার মধ্যে নড়াইল সদরে বেশি গরু মোটাতাজা করা হচ্ছে। গত বছরের তুলনায় এ বছর জেলায় ৫ হাজার ২২৬টি গরু বেশি মোটাতাজা করছে। বর্তমানে জেলায় মোট রেজিস্ট্রিকৃত গরুর খামার রয়েছে ৩৫৫টি। যার মধ্যে নড়াইল সদরে ২০৭টি লোহাগড়ায় ৯৬টি এবং কালিয়ায় ৯৪টি।গত বছর সরকারি ভাবে ভারত থেকে গরু আমদানি না করায় স্থানীয় গরুর চাহিদা ছিল বেশি। তাই জেলার গরু খামারীরা ভালো লাভ করেছে। এ কারণে কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে চলতি বছর জেলার খামারিরা গত বারের তুলনায় আরও বেশি গরু পালন করেছে। অনেক নতুন খামার গড়ে উঠছে। খামারি ছাড়াও জেলার সাধারন কৃষকেরা বাড়তি আয়ের আশায় বাড়িতে  গরু মোটাতাজা করছে।গত বছর জেলায় কোরবানির গরুর চাহিদা ছিল প্রায় ১২ হাজার। সে হিসেবে জেলার চাহিদা মিটিয়ে ৩ হাজার ৭৭৪টি গরু বেশি মোটাতাজা করেছিল। আর এ সকল উদ্বৃত্ত গরু বিভিন্ন জেলার কোরবানির চাহিদা মিঠিয়েছে।  জেলা পশু অফিসের হিসাব অনুযায়ী চলতি বছর জেলায় কোরবানি গরুর চাহিদা হবে সর্বোপরি ১৩ হাজার আর এর বিপরীতে উৎপাদন হবে ২১ হাজার। অর্থাৎ জেলার চাহিদার চেয়ে ৮ হাজার দেশি গরু মোটাতাজা করছে জেলার কৃষকেরা।সংশ্লিষ্টরা কৃষকরা জানান, দেশিয় পদ্ধতিতে আর স্থানীয় খাবার দিয়ে এখানকার চাষিরা গরু মোটাতাজা করেন বলে এই জেলার গরুর চাহিদা বেশি। আকার ভেদে গত বছর প্রতিটি গরু ত্রিশ হাজার থেকে ৭৫ হাজার টাকায় বিক্রয় করেছে এখানকার চাষিরা। এ বছর ভালোভাবে প্রস্তুতি নেয়ার ফলে প্রতিটা দেশি গরু ৪৫ হাজার থেকে ৯০ হাজার টাকায় বিক্রি হবে বলে কৃষকদের আশা।নড়াইল সদরের মির্জাপুর, চাকই, সিংগাশোলপু, গোবরা, কমখালি, শাহবাদ,সিমানন্দপুর, জুড়ুলিয়া লোহাগড়া উপজেলার শিয়েরবর, চাচই, কোলা, কুমড়ি, দিঘলিয়া, মল্লিকপুর, মাকড়াইল, লাহুড়িয়া ও কালিয়া উপজেলার বড়দিয়া, মহাজন, টোনা, খাশিয়ালে পশুর হাটে বেশি গরু উঠেছে। এসব এলাকার কৃষকের গোয়াল ঘরে অন্যান্য গরুর পাশাপাশি একটি দুইটি করে কোরবানির গরু মোটাতাজাকরণ চলছে। জেলায় মোট যে গরু মোটাতাজা করা হয় তার ৩৫ ভাগ গরু খামারে (সর্বনিম্ন ৩টায় খামার) আর বাকি ৬৫ ভাগ গরু মোটাতাজা করছে সাধারণ কৃষকরা।কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সাধারণত বছরের শুরুতে দেশি প্রজাতির প্রতিটি বাছুর ১০/১২ হাজার টাকায় ক্রয় করে পালন করতে থাকে। সারা বছর বিল থেকে কাঁচা ঘাস কেটে এনে খাওয়ানো হয়। ঈদের দুই মাস পূর্বে খড়, খৈল, কুড়া, ও ভুষি খাওয়ানো হয়। বছরে যে খাবার লাগে অধিকাংশ খাবারই বিলের কাঁচা ঘাস। এই ঘাস ক্রয় করা লাগে না তায় খরচ অনেক কম হয়। একটি বাছুর সারা বছর পোষার পরে ঈদের সময় আকারভেদে ৪৫/৯০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। কৃষকেরা প্রতিটা গরু থেকে বছর শেষে আকারভেদে ৪৫/৫০ হাজার টাকা লাভ করে।নড়াইলের তিন উপজেলায় নির্দিষ্ট হাটে গরু বেচাকেনা হলে ও কোরবানির সময় আরো কয়েকটি অস্থায়ী হাট বসে। স্থানীয় গরুর মালিকেরা এ সকল হাটে নগদ টাকায় গরু বিক্রয় করেন। এ সকল হাটের মধ্যে তুলারামপুর, মাইজপাড়া, লোহাগড়া, শিয়েরবর, পুরুলিয়া, মাদ্রাসা, বাশগ্রাম গরুরহাট অন্যতম। বিভিন্ন জেলার খদ্দেররা এসে এখানকার গরু ক্রয় করে ট্রাকে ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় নিয়ে বিক্রি করে। এছাড়া স্থানীয় বেপারিরা এলাকায় কৃষকের বাড়ি বাড়ি গিয়ে গরু ক্রয় করে হাটে নিয়ে যায়। বর্তমানে এই পেশায় খামারি, কৃষক ও বেপারি মিলিয়ে জেলার প্রায় ১৪ হাজার মানুষ জড়িত।খামারিরা জানান, গত বছর দেশের বাইরে থেকে বেশি বিদেশি গরু নড়াইলের কোনো হাটে আসেনি তাই দেশি গরুর চাহিদা ছিল অনেক বেশি। আমরা খামারিরা ও স্থানীয় কৃষকেরা নিজেদের গরু ভালো দামে বিক্রয় করতে পেরেছি। লাভ খুব ভালো হয়েছিল। আশা করছি সরকার এ বছরও বিদেশি গরু আমদানি করবে না। সরকার যদি বিদেশি গরু আমদানি না করে তাহলে আমরা খামারিরা ভালো দাম পাবো। লাভবান হতে পারবো।নড়াইল সদরের কামাল প্রতাপ এলাকার কৃষক হান্নান জানান, আমি গত বছর কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে একটি বাছুর ১০ হাজার টাকায় ক্রয় করে এক বছর পালন করে কোরবানির আগে ৭০ হাজার টাকায় বিক্রয় করেছিলাম। খরচ বাদে আমার একটি গরু থেকে ৪০ হাজার টাকা লাভ হয়েছিল। এ বছর আমি ২০ হাজার টাকা দিয়ে দুইটি এড়ে বাছুর ক্রয় করে পালন করছি। গরু দুইটি অনেক বড় হয়ে গেছে। আশা করছি কোরবানি সামনে রেখে দুইটি গরু এক লাখ টাকার বেশি বিক্রয় করতে পারবো।নড়াইল জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ড. অমলেন্দু ঘোষ জানান, গত ৪/৫ বছর আগেও নড়াইলের চাষিরা অল্প পরিসরে গরু মোটাতাজা করতো। সে সময় সরকার বিদেশ থেকে ঈদের সময় গরু আমদানি করায় জেলার অনেক খামারি ও কৃষকেরা গরুর নায্যমূল্য না পেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গত বছর সরকার বিদেশ থেকে গরু আমদানি না করায় জেলার স্থানীয় কৃষকের গরুর চাহিদা ছিল অনেক বেশি। স্থানীয় খামারি ও কৃষকেরা লাভবান হয়েছে। তাই এবছ অনেক কৃষক গরু মোটাতাজাকরণে আগ্রহী হয়েছে। আমরা সরকারিভাবে তাদের ৪৫/৫০ ভাগ ওষুধ ফ্রি দিয়ে থাকি। এছাড়া বিভিন্ন পরামর্শসহ সব সময় খোঁজ খবর রাখা হয়। আশা করছি এ বছরো জেলার খামারি ও কৃষকেরা লাভবান হবে। আগামীতে গরু চাষের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করবো। হাফিজুল নিলু/এআরএ/আরআইপি