বিশেষ প্রতিবেদন

দেশের অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রাখবে ই-কমার্স

রাজীব আহমেদ। ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইক্যাব) প্রেসিডেন্ট। কাজ করছেন ই-কমার্স নিয়ে। দেশে ই-কমার্সের সম্ভাবনা ও তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য ই-কর্মাস ক্ষেত্রে সম্ভাবনা এসব বিষয় নিয়ে রাজীব আহমেদ সম্প্রতি মুখোমুখি হন জাগো নিউজ-এর। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আবু সালেহ সায়াদাত ।

জাগো নিউজ : দেশে ই-কমার্সের বিকাশটা কেমন হয়েছে?রাজীব আহমেদ : এই মুহূর্তে ই-কমার্সে জড়িত এমন  এক হাজার ওয়েবসাইট আর  আট হাজার ফেসবুক পেজ আছে।এখানে প্রতিদিন প্রায় ২০ হাজারের মতো ডেলিভারি হয়, যা প্রতি মাসে দাঁড়ায় আনুমানিক ৫ থেকে ৬ লাখের মতো।তবে এটা খুব ইতিবাচক নয়। কারণ চীনে প্রতিদিন ডেলিভারি হচ্ছে ৫ কোটি।দেশের জনসংখ্যার তুলনায় এ ডেলিভারি খুবই কম। তবে আশার কথা হলো, কিছুদিন আগেও বাজার ঢাকা ও চট্টগ্রামের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। এখন ৬৪ জেলা থেকেই অর্ডার আসে। আগামীতে দেশের অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রাখবে ই-কমার্স।জাগো নিউজ : ই-কমার্সের মাধ্যমে কতটা উপকৃত হতে পারে?রাজীব আহমেদ : দেশের ৬৪ জেলায় বিভিন্ন ধরনের প্রোডাক্ট আছে। যেমন বগুড়ার দই, যা ঢাকা বা অন্য জায়গায় পাওয়া যায় না। তবে ই-কমার্সের কারণে একজন ক্রেতা যে কোনো জেলা থেকেই সেটা ডেলিভারি পেতে পারেন। একদিকে এ মার্কেট যেমন ২৪ ঘণ্টা  খোলা, অন্যদিকে স্থান ও দূরত্বের বাধা দূর হচ্ছে এর মাধ্যমে। একটা ওষুধের দোকান  ২৪ ঘণ্টা রাজধানী বা জেলা শহরে হয়তো খোলা পাবেন। কিন্তু  উপজেলায় পাবেন না। কিন্তু এটা একমাত্র ই-কমার্সই চেঞ্জ করতে পারে। যে কোনো বই নীলক্ষেত বা বাংলাবাজার পাবেন কিন্তু অন্য জেলা বা উপজেলা পর্যায়ে পাবেন না; এটার জন্যই ই-কমার্স দরকার।জাগো নিউজ : ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ -ইক্যাবের যাত্রা শুরু কীভাবে?রাজীব আহমেদ : ২০০৯ সাল পর্যন্ত দেশে  অনলাইনে লেনদেন অবৈধ ছিলো। এরপর থেকে  ই-কমার্স কিছু কিছু কোম্পানির মধ্যে গড়ে ওঠে  ফেসবুক বা ওয়েবসাইটের মাধ্যমে। ২০১৪ সালের জুনে আমাদের মনে হলো একটা অ্যাসোসিয়েশন হওয়া দরকার।  তা না হলে এ ইন্ডাস্ট্রি আর এগোবে না। সেই চিন্তা থেকে কাজ শুরু।পরে ৮ নভেম্বর  সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করলাম। তবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের স্বীকৃতি পাই ২০১৫ সালের ৮ জুলাই।জাগো নিউজ : ইক্যাব এর উদ্দেশ্য কি?রাজীব আহমেদ : ইক্যাব  দেশের অনলাইন ব্যবসায়ীদের সংগঠন। ইক্যাবে বর্তমান সদস্য সাড়ে ৪০০ ’র বেশি। লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ছিলো ইন্ডাস্ট্রির স্বার্থ রক্ষা করা। যেসব কোম্পানি কাজ করছে, তাদের একত্রিত এবং সরকারের কাছে দাবি দাওয়া পেশ করা। আর অ্যাসোসিয়েশনের মাধ্যমে একটা বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরি হয়।  জাগো নিউজ : সাড়া পাওয়া যাচ্ছে কেমন?রাজীব আহমেদ : ই-কমার্স এমন একটা সেক্টর, যেখানে ২৪ ঘণ্টা ব্যবসা হতে পারে। এখানে কোনো ঈদ, পূজার ছুটি নেই। আমাদের অনেক অর্ডার আসে রাত ১২টার পর। কারণ মানুষ দিনে কাজ করে রাতে রিলাক্সে ফেসবুক বা ওয়েবসাইট ভিজিট করে। এমনকি ঈদের দিনেও অর্ডার আসে। মূল কথা টাকা যত হাত বদলাবে,  জিডিপি তত বাড়বে। এটা অর্থনীতির বেসিক ব্যাপার। এ কারণে অর্থনীতির চাকা ২৪ ঘণ্টাই ঘুরাবে ই-কমার্স।  জাগো নিউজ : ই-কমার্স বর্তমানে কোন পর্যায়ে পৌঁছেছে?রাজীব আহমেদ : বর্তমানে প্রায় সব জেলা থেকেই অর্ডার পাচ্ছি।  তাই বলা যায় জেলা পর্যন্ত পৌঁছেছে।     জাগো নিউজ : বর্তমানে ই-কমার্সে কোন শ্রেণির ক্রেতা বেশি?রাজীব আহমেদ : যাদের ইন্টারনেট সম্পর্কে ধারণা আছে, একটু শিক্ষিত তারাই ই-কমার্সে   কেনাকাটা করছে। তবে অনলাইন কেনাকাটায় এগিয়ে নারীরা।ছেলেরা চাকরি- ব্যবসা নিয়ে  ব্যস্ত থাকে, মেয়েরা কেনাকাটার জন্য বেশি আগ্রহী হয়। মার্কেটও তাই। এটারই রিফলেক্ট হচ্ছে অনলাইনে। জাগো নিউজ : অনলাইন কেনাকাটায় পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর তুলনায় আমরা অনেক পিছিয়ে। কেন?রাজীব আহমেদ : ই-কমার্সের প্রধান শর্ত ইন্টারনেটের মাধ্যমে অর্থ লেনদেন।কিন্তু  দেশে ২০০৯ সাল পর্যন্ত তা অবৈধ ছিলো। ২০১৪ সালে অ্যাসোসিয়েশন করার পর কিছুটা গতি এসেছে। আমরা অনেক দেরিতে শুরু করেছি। চলতি বছর শেষে বাজার অনুযায়ী ৬০০ বিলিয়ন ডলার মার্কেট হবে চীনের। প্রতি বছর ১০০ বিলিয়ন ডলার করে বাড়ছে। দেশে আমরা বলছি ১ হাজার  কোটি  বা প্রায় ১২০ মিলিয়ন ডলারের একটা মার্কেট হবে এ বছর।যেখানে চীনে ৬০০ বিলিয়ন ডলার। আমাদের এ ক্ষেত্রে এখন পর্যন্ত কোনো অবকাঠামো নেই। ঢাকার বাইরে ভালো সার্ভিস নেই।জাগো নিউজ : এটার জন্য তাহলে কি করা উচিত?রাজীব আহমেদ : সরকারের নীতিনির্ধারকসহ বেসরকারি পর্যায়ে যারা আছেন, তারা যত তাড়াতাড়ি বুঝবেন ততই মঙ্গল। ই-কমার্স একটা সিরিয়াস বিজনেস কিন্তু তারা এটিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না। একটা ই-কমার্স সাইটে আপনি ১০ হাজার প্রডাক্টের ছবি দিয়ে রাখতে পারেন কিন্তু দোকানে অত সব প্রোডাক্ট রাখতে বড় ধরনের সুপারশপ করতে হবে। ই-কমার্সের মাধ্যমে আমরা যেটা দোকানে রাখতাম, সেটা ওয়েবসাইটে রাখছি ছবি তুলে। তাই নতুন পদ্ধতির সঙ্গে যারা তাল মেলাতে না পারবে তারা এক সময় বিলুপ্ত হয়ে যাবে। এটাই বাস্তবতা । এই বাস্তবতাকে আমরা যখন বুঝবো তখন উন্নয়ন হবে।জাগো নিউজ : তরুণরাই বেশি  আগ্রহী হচ্ছে ই-কমার্সে।তাদের জন্য পরামর্শ কি?রাজীব আহমেদ : নতুনদের মূল বিষয় হচ্ছে এটা সম্পর্কে বিস্তারিত জানা। ইক্যাবের ব্লগে ৩৫০টির মতো আরটিক্যাল আছে। এ ব্যবসা শুরুর আগে তা দেখে নিলে ভালো ফল পাওয়া যাবে।   জাগো নিউজ : ই-কমার্সের প্রসারে প্রধান সমস্য কি?রাজীব আহমেদ : যদি কুরিয়ার সার্ভিসের বিষয়টা ঠিক করা যায়, তাহলে রাতারাতি মার্কেট ৫ গুণ ডেলিভারি বেড়ে যাবে। একজন ব্যবসায়ীর যদি পণ্য ডেলিভারির চিন্তা না থাকে শুধু তাদের কাজ হবে অর্ডার নিয়ে কুরিয়ার সার্ভিসে দেওয়া, তাহলে এ ব্যবসার প্রসার অনেক বাড়বে।  জাগো নিউজ : গ্রাম পর্যায়ে  ই-কমার্সকে নিয়ে যেতে কি করা যেতে পারে?রাজীব আহমেদ : ডেলিভারির বিষয় নিয়ে  পোস্ট অফিসকে বোঝানোর চেষ্টা করছি। ভারতে এক-দুই  বছর আগে লোকসানের মধ্যে ছিলো ডাক বিভাগ, তখন তারা ই-কমার্সের সঙ্গে যুক্ত হয়ে গেলো । এরপর খুব সম্ভবত এ বছর তাদের ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা লাভ হবে।আর আগামী বছর ৫ হাজার কোটি রুপি লাভ হবে। ইউপি পর্যায় পর্যন্ত ডাক বিভাগের অবকাঠামো চলে গেছে। আশা করছি এক বছরের মধ্যে এ সমস্যার সমাধান হবে।  জাগো নিউজ : ই-কমার্সের মাধ্যমে কেনাকাটায় ঝুঁকি কি?রাজীব আহমেদ : অনেকে ফেসবুক পেজ খুলে, সস্তা বিজ্ঞাপন দিয়ে টাকা নিয়ে উধাও হয়ে যায়। এজন্য সরকারের কাছে আমাদের দাবি থাকবে ট্রেড লাইসেন্স এবং ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নম্বর  ই-কমার্স ব্যবসায় বাধ্যতামূলক করতে হবে। কারণ যারা একটা ট্রেড লাইসেন্স নম্বর বা টিন নস্বর নিয়ে ব্যবসা করছে তাদের চিহ্নিত করা সহজ। এজন্য কাস্টমারদেরও সচেতন হতে হবে। আস্থার জায়গা দুই পক্ষকেই করতে পারে।  জাগো নিউজ : ই-কমার্সকে কোন জায়গায় দেখতে চান?রাজীব আহমেদ :  দেশের ব্যবসা পরিমণ্ডলে ই-কমার্স ইতোমধ্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। আশা করা যায় আগামীতে অর্থনীতিতে ব্যাপক  অবদান রাখবে ই-কমার্স। আমরা এমন এক বাংলাদেশ দেখতে চাই, যেখানে প্রতিটি গ্রামের মানুষ অনলাইনে তাদের পণ্য কেনাবেচা করবে।জাগো নিউজ : জাগো নিউজকে সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।রাজীব আহমেদ: জাগো নিউজকেও ধন্যবাদ।এএস/এএইচ/এবিএস