নরসিংদীর প্রতিমার কদর দেশজুড়ে। তাই দেশের বিভিন্ন স্থানের হিন্দু ধর্মালম্বীদের প্রতিমার চাহিদা মেটাতে শেষ মুহূর্তের তুলির আঁচড় নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন এখানকার প্রতিমা শিল্পীরা।আসন্ন দুর্গাৎসবকে সামনে রেখে প্রায় ৩৫০টি প্রতিমা তৈরি করছে নরসিংদীর মৃৎ শিল্পীরা। ষষ্ঠীবোধনীতে দেবী দুর্গাকে পূজা মণ্ডপে পৌঁছে দিতে প্রতিমা শিল্পালয়গুলোতে সাজসজ্জার কাজ চলছে দিন-রাত। এলাকা ঘুরে জানা যায়, আগে মৃৎ শিল্পীরা তাদের বসতবাড়িতে প্রতিমা তৈরি করতো। তবে আশির দশকে সদর উপজেলার পাঁচদোনা গ্রামের মৃৎ শিল্পী বলরাম পালের হাত ধরে সেই অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। অন্যান্য জেলার তুলনায় নরসিংদীর মৃৎ শিল্পীদের তৈরি প্রতিমার নজরকাড়া গঠন ও কারুকার্যে কদর বাড়ে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়। গত দুই দশকের ব্যবধানে নরসিংদীর বিভিন্ন উপজেলায় প্রায় ১৮টি প্রতিমা শিল্পালয় গড়ে উঠেছে। এতে প্রায় দেড় শতাধিক লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে। আসন্ন দুর্গাৎসবকে সামনে রেখে মৃৎ শিল্পীরা গত ৩ মাস যাবত দুর্গা প্রতিমা তৈরির কাজ করছে। এখন বাকি রংয়ের প্রলেপ ও অঙ্গ সজ্জার কাজ। তাই প্রতিমা শিল্পীদের দম ফেলার ফুসরত নেই। দুর্গা দেবীকে দৃষ্টিনন্দন ও আকর্ষণীয় করে তুলতে রং তুলির আঁচড়ে এখন পুরোদমে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন প্রতিমা শিল্পীরা।বৈশিষ্ট্যের উপর ভিক্তি করে অজন্তা, অরিয়েন্টেল, দেবী ও সাম্য নামে ৪ প্রকারের প্রতিমা তৈরি করে মৃৎ শিল্পীরা। সংশ্লিষ্টরা জানায়, এদের মধ্যে পূজা আয়োজকদের পছন্দের শীর্ষে রয়েছে অজন্তা প্রতিমা।নরসিংদী তুর্যয় প্রতিমা শিল্পালয়ের সত্ত্বাধিকারী দুলাল চন্দ্র পাল জানান, এ বছর জেলার বিভিন্ন কারখানায় ও ব্যক্তিগতভাবে প্রায় ৩৫০টি প্রতিমা তৈরি হয়েছে। আকার ও গঠন ভেদে ২০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ৭০ হাজার টাকা দরে এ সকল প্রতিমার কার্যাদেশ নেয়া হয়েছে। তিনি আরো বলেন, নরসিংদীর এসব প্রতিমা ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন জেলাতে সরবরাহ করা হয়। দেশে সাম্প্রতিক জঙ্গি হামলা ও পুরোহিত হত্যার ঘটনায় সংশ্লিষ্টদের ধারণা ছিল এবার কম মণ্ডপে দুর্গাপূজা হবে। এ কারণে মৃৎ শিল্পীরা প্রতিমা কম তৈরি করায় শেষ মুহূর্তে প্রতিমা সংকট দেখা দিচ্ছে।পাঁচদোনা শ্রী শ্রী বাবা লোকনাথ প্রতিমা শিল্পালয়ের সত্ত্বাধিকারী বলরাম পাল বলেন, মৃৎ শিল্পীদের হাতের নৈপুণ্যের উপর নির্ভর করে প্রতিমার সৌন্দর্য। মানে ভাল ও দামে কম হওয়ায় নরসিংদীর প্রতিমার চাহিদা দেশজুড়ে। পাশ্ববর্তী দেশ ভারতের মৃৎ শিল্পীরা সরকারের কাছ থেকে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা পেলেও এদেশের মৃৎ শিল্পীরা অবহেলিত। এই শিল্পটি মহাজনী ঋণের উপর নির্ভরশীল। তাই নরসিংদীর সুখ্যাত প্রতিমার শিল্পীদের বিনা সুদে ঋণের দাবি জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের।নরসিংদী জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক সূর্যকান্ত দাস বলেন, আগামী ৭ অক্টোবর মহাষষ্ঠীর মধ্য দিয়ে দুর্গাপূজা শুরু হবে। ১১ অক্টোবর বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে পূজা শেষ হবে। তবে এবার প্রতিটি মণ্ডপেই আমাদের সতর্ক অবস্থানে থাকতে হবে। অরাজকতা সৃষ্টির জন্য একটি মহল অপচেষ্টা চালাতে পারে। পুলিশ ও জেলা প্রশাসন আমাদের সব রকম নিরাপত্তার আশ্বাস দিয়েছেন। সঞ্জিত সাহা/এসএস/পিআর