দেশজুড়ে

আছমা ও শান্ত’র জন্য কান্না করছে গ্রামবাসী

দাদার বাড়ি থেকে নিজ বাড়িতে ফেরা হলো না নরসিংদীর পলাশের অষ্টম শ্রেণির স্কুলছাত্র শান্ত’র। তেমনি স্বামীর ঘরে ফেরা হয়নি শান্তর মা আসমা বেগমেরও। সহিংস রাজনীতি আর পেট্রল বোমায় দগ্ধ হয়ে চলে গেছেন না ফেরার দেশে। পরিবার জুড়ে রেখে গেছেন শোক আর কান্না। স্বজনদের আহাজারিতে ভারী হয়ে গেছে নরসিংদীর পলাশের ভাড়ারিয়া গ্রাম। এই কান্না কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে যাত্রীবাহী বাসে পেট্রলবোমায় নিহত মা ও ছেলের স্বজনদের। স্বজনদের পাশাপাশি এঘটনায় ক্ষুব্দ এলাকাবসীও। তাদের দাবি, মানুষ পোড়ার দেশ চাই না। স্বভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি চাই। এভাবেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন কুমিল্লায় যাত্রীবাহী বাসে পেট্রলবোমায় নিহত আছমা বেগমের (৩৫) বোন হোসনে আরা আক্তার চুকমী।গতকাল মঙ্গলবার ভোরে যাত্রীবাহী বাসে ছোড়া পেট্রলবোমায় যে সাত জন নিহত হয়েছে আছমা তাদের একজন। একই ঘটনায় তার ছেলে শান্ত মজুমদারও (১৩) নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে অপর ছেলে মুন্না মজুমদার (১৪)। নিহতরা নরসিংদীর পলাশ উপজেলার ভাড়ারিয়া পাড়ার মানিক মিয়ার স্ত্রী-সন্তান।পুলিশ ও নিহতের পরিবারের লোকজন জানায়, ভাড়ারিয়া পাড়ার কাপড় ব্যবসায়ী মানিক মিয়া। গত শুক্রবার স্ত্রী আছমা বেগম ও দুই ছেলে শান্ত মজুমদার ও মুন্না মজুমদার চট্টগ্রামের দাদার বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিল । সেখানে ৩দিন বেড়ানো শেষে গত সোমবার রাত বারটায় নরসিংদীর উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। তাদের বহনকারী বাসটি কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে পৌঁছলে পেট্রলবোমা ছুড়ে দুর্বৃত্তরা। এতে আছমা বেগম ও ছোট ছেলে পলাশ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র শান্ত মজুমদার আগুনে পুড়ে নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে অপর ছেলে একই বিদ্যালয়ের মুন্না মজুমদার। তাকে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। রাতেই আহত মুন্না দুর্ঘটনার সংবাদ বাবা মানিক মিয়াকে জানালে তিনি পাগলের মতো ঘটনাস্থলে ছুটে যায়। কিন্তু আগুনে পুড়ে লাশগুলো কঙ্কাল হয়ে যাওয়ায় তাদের সনাক্ত করতে পারেনি। পরে চিকিৎসকদের সহযোগীতায় বেলা ১১টায় শান্ত মজুমদারের ও বিকেল ৪টায় আছমা বেগমের মৃতদেহ সনাক্ত করা হয়। এসময় আগুনে কয়লা হয়ে যাওয়া স্ত্রীর মৃত দেহ দেখে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন মানিক মিয়া।নিহত আছমার স্বামী মানিক মিয়া বলেন, হরতাল-অবরোধে দিনের বেলা জ্বালাও পোড়াও হলেও রাতের বেলায় নিরাপদ ভেবেছিলাম। তাই প্রিয় সন্ত্রান ও সহধর্মীনিকে রাতের বেলায় আসতে বলি। কিন্তু গভীর রাতেও বোমা মেরে মানুষ পুড়িয়ে মারবে তা বুঝতে পারেনি।সরেজমিনে পলাশের ভাড়ারিয়া গ্রাম নিহতদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, স্বজন হারানো পরিবারটিতে চলছে শোকের মাতম। স্বজনদের অশ্রু আর কান্নায় ভারী হয়ে উঠেছে এলাকার পরিবেশ। অবরোধের আগুন কেড়ে নিয়েছে স্বজনদের, প্রিয় মানুষ হারানোর বেধনা ও সহিষ্ণু রাজনীতির প্রতি ঘৃণা দুই প্রকাশ তাদের চোখের জলে। রাজনীতি না করেও রাজনীতির এমন নির্মম শিকার মেনে নিতে পারছেনা স্বজনরা। তাই তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে সহিংস রাজনীতির প্রতি। একই সঙ্গে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। মা-ছেলের মৃত্যুতে স্বজনদের পাশাপাশি ব্যাথিত এলাকাবাসীও। তাদের দাবি, আর কাউকে যাতে রাজনৈতিক অস্থিরতার শিকার হয়ে পৃথিবী ছাড়তে না হয়। মানুষের কল্যাণের জন্য যে রাজনীতি সেই রাজনীতির শিকার হয়ে আর মৃত্যু নয়, শান্তি চায় সাধারণ মানুষ। এজন্য রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি সহনশীল হওয়ার আহ্বান সকলের।নিহত আছমা বেগমের বোন হোসনে আরা আক্তার বলেন,প্রতিদিনই টেলিভিশনের পর্দায় আগুনে পোড়া মুখ দেখি। কিন্তু কখনো ভাবিনি এই আগুনে পুড়বে আমার বোন-ভাগ্নে। ক্ষোভ-যন্ত্রণা আর কষ্টে তিনি আরো বলেন,আমরা মানুষ পোড়ার দেশ চাই না। স্বভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি চাই।এমএএস/আরআই