আজ ১৮ অক্টোবর। তেভাগা আন্দোলনের নেত্রী, নাচোলের রানী ইলা মিত্রের জন্মদিন। ১৯২৫ সালের এ দিনে কলকাতায় তিনি জন্মগ্রহণ করেন। সে সময় তার বাবা নগেন্দ্র সেন চাকরি সূত্রে সেখানে অবস্থান করছিলেন। ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজলোর বাগুটিয়ার রায়পাড়াতে ইলা মিত্রের পৈতৃক বাড়ি। অযত্নে অবহেলায় পড়ে আছে ভিটা বাড়িটি। তার স্মৃতি সংরক্ষণে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেয়া হয়নি তেমন কোনো উদ্যোগ। এমনকি তার জন্ম অথবা মৃত্যু দিবসে তাকে নিয়ে তেমন কোনো অনুষ্ঠান করা হয়নি। যা থেকে নতুন প্রজন্ম ইলা মিত্র ও তেভাগা আন্দোলন সম্পর্কে জানতে পারে। এদিকে, ইলা মিত্রের পৈতৃক ভিটা উদ্ধার ও স্মৃতি সংরক্ষণে ঝিনাইদহে `ইলামিত্র স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদ` নামে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা আজ ঝিনাইদহ পায়রা চত্বরে মানববন্ধন, আলোচনা ও জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করবে বলে জানা গেছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দিদারুল আলম জানান, এটি সংরক্ষণ করা হলে দর্শনার্থীদের জন্য পর্যটন স্থান হতে পারে। রক্ষা পাবে বাড়িটির ঐতিহাসিক গুরুত্ব। স্বল্প সময়ের মধ্যে বাড়িটির সংরক্ষণের কাজ শুরু হবে বলে সহযোগিতা চেয়েছেন এলাকাবাসীর।ইলা মিত্রের সংক্ষিপ্ত জীবনী ও তার পৈতৃক বাড়িঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলা সদর থেকে দক্ষিণে ১৩ কি.মি দূরে বাগুটিয়ার রায়পাড়াতে কাঁচা রাস্তার পাশে নানা শিল্প কর্মের সাক্ষী হয়ে এখনো দাঁড়িয়ে আছে ঐতিহ্যবাহী এ দ্বিতল বাড়িটি। চুন-সুড়কি দিয়ে গাঁথা ৯ কক্ষ বিশিষ্ট এ দালানটি ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলেও তা রয়েছে অন্যের দখলে। ভেঙে ফেলা হচ্ছে ইটের গাঁথুনি ও ভীতগুলো। বাবা নগেন্দ্র সেনের চাকরি সূত্রে ইলা সেনের জম্ম কলকাতায়। ১৯২৫ সালের ১৮ অক্টোবর তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা ছিলেন বেঙ্গল ডিপুটি অ্যাকাউন্ট্যান্ট জেনারেল। মা মনোরমা সেন গৃহিণী। ঝিনাইদহের শৈলকুপার ১২ নং নিত্যানন্দনপুর ইউনিয়নের বাগুটিয়া গ্রামে তার পৈতৃক নিবাস। ইলা মিত্রের জন্ম কলকাতায় হলেও ছোট বেলায় বহুবার তিনি বাগুটিয়া বাবার বাড়িতে এসেছেন। ১৯৪৫ সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জের রামচন্দ্রপুর জমিদার বাড়ির রমেন্দ্রনাথ মিত্রের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। বিয়ের পরে তার নাম হয় ইলা মিত্র। বিয়ের পর ১৯৪৬ সাল থেকে ১৯৫০ সাল পর্যন্ত চাঁপাইনবাবগঞ্জে তেভাগা আনোদলনের নেতৃত্ব দেন তিনি।অভিযোগ আছে, শুধু বাড়িই না দখল করা হয়েছে ইলা মিত্রের বাবা নগেন্দ্র সেনের রেখে যাওয়া শত শত বিঘা জমি। সরকারি খাতায় এগুলো ভিপি তালিকাভূক্ত হলেও দখলকারীদের দাবি বিনিময় সূত্রে খরিদ করে তারা ইলা মিত্রের বাবার এ সম্পদ ভোগ করছেন। এ বাড়িতে বসবাসকারী হাজী কিয়াম উদ্দিনের ছেলে জাহাঙ্গীর বলেন, তারা বাড়িসহ ৮৪ বিঘা জমি ক্রয় করেছেন বলে তাদের দাবি।বাগুটিয়া গ্রামের ১১৬ নং মৌজার ২৩৪৫ দাগের উপর বাড়িটি যে তেভাগা আনোদালনের নেত্রী, সংগ্রামী নারী, নাচলের রানী ইলা মিত্রের পৈতৃক ভিটা বাড়ি তা এখনো সকলের কাছে অজানা। তবে প্রত্নতত্ত বিভাগ, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় বাড়িটি সংরক্ষণের উদ্যোগ নিচ্ছে বলে জানান উপজেলা প্রশাসন। ইলা মিত্রের পৈতৃক বাড়িটি প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ সংরক্ষণের নিমিত্তে বিজ্ঞপ্তি জারির চিঠি দিয়েছে বলে জানা যায়। তবে কাজ এখনো শুরু হয়নি। আহমেদ নাসিম আনসারী/এসএস/পিআর