জাতীয়

মায়ের ‘পরকীয়া’ নিয়ে মেয়ের স্ট্যাটাসকে ঘিরে রহস্য

মাদক নিরাময়ের জন্য রাজধানীর বনানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে গত ১৭ অক্টোবর থেকে ভর্তি ছিলেন মহাখালীর সানজিদা আক্তার। সেদিনই তার মায়ের কাছে গচ্ছিত সানজিদার গ্রামীণফোনের সক্রিয় সিম রহস্যজনকভাবে বন্ধ হয়ে যায়। গত রাতে (শুক্রবার) আবার সানজিদার ব্যক্তিগত ফেসবুক থেকে হঠাৎ স্ট্যাটাস। সেই স্ট্যাটাসে মায়ের পরকীয়া ও নিজে গৃহবন্দি জানিয়ে সহযোগিতা চাওয়া হয়। গত রাত থেকে যা ছিল টক অব দ্য সিটি। পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশের করা তদন্তে বের হয়- ফেসবুক স্ট্যাটাসের নেপথ্যে ছিল অন্য কারণ এবং অন্য একজনের হাত। সানজিদা ও তার মা সাহিদা বেগমের অজ্ঞাতে অন্য মোবাইল থেকে সানজিদার ফেসবুক পেজ থেকে ওই স্ট্যাটাস দেয় রাজন নামের এক তরুণ। রাজনকে ইতোমধ্যে আটক করেছে তেজগাঁও থানা পুলিশ। সানজিদার পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে তাকে আটক করা হয়। পরে সানজিদার ফেসবুক থেকে স্ট্যাটাস দেয়ার বিষয়টি পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করে রাজন। তেজগাঁও থানা পুলিশের জবানবন্দিতে রাজন জানিয়েছে, সানজিদার সঙ্গে তার ভালোবাসার সম্পর্ক। সানজিদাই তাকে ওই স্ট্যাটাস দিতে প্ররোচিত করেছিল।শনিবার দুপুরে তেজগাঁও থানায় গিয়ে দেখা যায়, সানজিদার মা সাহিদা বেগম ও খালা খুরশিদা বেগম ওসির কার্যালয়ে বসে কান্নাকাটি করছেন। পরে খালা খুরশিদা বেগম জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমার বোনজামাই ১৩ বছর ধরে দেশে নেই। বিদেশে গিয়ে আর ফিরে আসেনি। অনেক কষ্ট করে অন্য বাসায় ঝিয়ের কাজ করে মেয়ে সানজিদা ও ছেলে শিমুকে বড় করেছে। সানজিদা ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এবারই এইচএসসি পাস করেছে।’তিনি বলেন, গাজীপুরে এক বিয়ের অনুষ্ঠানে রাজন নামে ওই যুবকের সঙ্গে পরিচয়। এরপর থেকে ওই যুবক প্রায়ই বাড়িতে আসতো। রাজনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতায় ইয়াবাসহ অন্যান্য মাদকে আসক্ত হয়ে পড়ে সানজিদা। দ্রুতই সানজিদার মধ্যে পরিবর্তন আসে। তিনি আরো বলেন, সানজিদা রাজনের সঙ্গে হঠাৎ করেই ৪/৫ দিনের জন্য উধাও হয়ে যেত। এমনকি গত ৯ অক্টোবর থেকে ১৬ অক্টোবর পর্যন্ত রাজনের সঙ্গেই ছিল। ১৭ অক্টোবর সানজিদা বাসায় ফিরে আসে। সানজিদার অবস্থা বুঝে রাতেই তাকে রাজধানীর বনানীর মানসিক ও মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্র জামান ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়।কান্নারত অবস্থায় সানজিদার মা সাহিদা বলেন, মেয়েকে অসুস্থ অবস্থায় ক্লিনিকে ভর্তি করে বাসায় আসার পর দেখি ওর মোবাইল ফোন বন্ধ হয়ে গেছে। এর মধ্যে রাজন বাসায় এসে ক্ষমা চেয়ে গেছে। আর কখনো মিশবে না বলেও জানিয়ে গেছে। কিন্তু গত রাতে হঠাৎ করে সানজিদার ফেসবুক থেকে আমাকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করে গৃহবন্দি অবস্থা থেকে মুক্তির স্ট্যাটাস দেয়া হয়। আত্মীয়-স্বজনের মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পেরে তেজগাঁও থানা পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছি। তিনি বলেন, মেয়ে ক্লিনিকে তার মোবাইল আমার কাছে। সে কি করে তার ফেসবুক ব্যবহার করে স্ট্যাটাস দেবে! আর মেয়ের মোবাইল আমার কাছে থাকলেও সিম বন্ধ। মা সাহিদা আরো বলেন, সব কিছুর মূলে ওই রাজন। রাজনই আমার মেয়েকে মাদকাসক্ত করেছে। ওই ছেলেই আপত্তিকর ফেসবুক স্ট্যাটাস দিয়েছে। আইসিটি অ্যাক্টে মামলা করার কথা জানান তিনি। এ বিষয়ে তেজগাঁও থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) এ বি এম মশিউর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, রাজন নিজেকে গাজী টিভির ফটোসাংবাদিক বলে পরিচয় দিলেও আসলে সে কোনো ক্যামেরাম্যান বা সাংবাদিক নয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রাজন ফেসবুক থেকে স্ট্যাটাস দেয়ার কথা স্বীকার করেছে। শুধু তাই নয়, সানজিদার সিমও রাজনের নামে রেজিস্ট্রেশন করা। সেই সিম বন্ধ করে দিয়েছে। শুধু তাই নয়, স্ট্যাটাসে যার নামে পরকীয়ার কথা বলা হয়েছে সে বিষয়েও এখনো কোনো তথ্য-প্রমাণ মেলেনি। তিনি বলেন, একজনের অজ্ঞাতসারে গুজব কিংবা মিথ্যা সংবাদ বা মানহানিকর তথ্য প্রচার করায় তার বিরুদ্ধে আইসিটি অ্যাক্টে মামলা হচ্ছে।জেইউ/জেএইচ/এসএইচএস/আরআইপি