দেশজুড়ে

কমলনগরে ভাঙছে নদী, কাঁদছে মানুষ

লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলাকে মেঘনার ভাঙন থেকে রক্ষায় দুই বছর আগের একনেকে অনুমোদিত প্রকল্পটি এখনো আলোর মুখ দেখেনি। উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নজুড়ে ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। এনিয়ে মেঘনা পাড়ের বাসিন্দারা চরম আতঙ্কগ্রস্ত। এদিকে প্রতিনিয়ত নদীতে বিলীন হচ্ছে বসতবাড়ি, রাস্তা-ঘাট, ফসলি জমি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাসহ বিস্তীর্ণ জনপদ। ঝুঁকিতে রয়েছে উপজেলা কমপ্লেক্স ভবনসহ উপজেলার প্রাণকেন্দ্রের কয়েক কোটি টাকার স্থাপনা।খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এক যুগেরও বেশি সময় ধরে উপজেলার ১৩ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ভাঙন খেলা চলছে। অব্যাহত ভাঙনে ইতোমধ্যে উপজেলার ১২ বর্গকিলোমিটার এলাকা নদীতে বিলীন হয়েছে। এতে কয়েক হাজার একর ফসলি জমি, হাট-বাজার, কালভার্ট, পাকা-আঁধাপাকা রাস্তা, সাইক্লোন শেল্টার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও মসজিদ-মন্দিরসহ বহু বসতবাড়ি নদীতে বিলীন হয়েছে। এরই মধ্যে ২০১৪ সালের আগস্টে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় লক্ষ্মীপুরের রামগতি ও কমলনগর উপজেলার তৎসংলগ্ন এলাকাকে ভাঙন থেকে রক্ষাকল্পে একটি প্রকল্পটি অনুমোদন হয়। অনুমোদিত ওই প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ে কমলনগর উপজেলার এক কিলোমিটার ও রামগতি উপজেলার সাড়ে চার কিলোমিটার এলাকা রক্ষায় ১৯৮ দশমিক ২ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। রামগতির মানুষ এখন প্রকল্পটির সুফল পাচ্ছে।অন্যদিকে গত তিন বছরের ভাঙনে উপজেলার পশ্চিমাংশের প্রায় চার কিলোমিটার এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হওয়ায় উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্স থেকে নদীর দূরত্ব প্রায় দুই কিলোমিটারে দাঁড়িয়েছে। এতে প্রায় পাঁচ কোটি টাকা ব্যয়ে সদ্য নির্মিত উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্স ভবন, কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয়, অর্ধকোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত কমলনগর থানা ভবন, অর্ধকোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন ফায়ার সার্ভিস স্টেশন ও অর্ধকোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন চরফলকন ইউনিয়ন ভূমি অফিসসহ কয়েক কোটি টাকার স্থাপনা ঝুঁকিতে রয়েছে।কমলনগরের কাদির পণ্ডিতেরহাট ও চরজগবন্ধু গ্রামের বাসিন্দারা জানান, এ প্রকল্প অনুমোদনের পর বাপ-দাদার ভিটে-মাটিতে নতুনভাবে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখেন তারা। কিন্তু ২০১৫ সাল থেকে ওই প্রকল্পে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে রামগতির চর আলেকজান্ডারে বাঁধ নির্মাণ কাজ চলতে থাকলেও এখন পর্যন্ত কমলনগর অংশে কাজ শুরু হয়নি। সাহেবেরহাট ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু বকর ছিদ্দিক মাতাব্বর জানান, দুবার মেঘনার ভাঙনের শিকার হয়ে মাতাব্বরহাট বাজারের একটি দোকান ঘরে পরিবার নিয়ে তিনি বসবাস করছেন। এভাবে মেঘনার ভাঙনে নিঃস্ব হয়ে ওই ইউনিয়নের শত শত পরিবার এখন বেড়িবাঁধসহ বিভিন্ন স্থানে মানবেতর দিন কাটাচ্ছে। পাটওয়ারীহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক একেএম নুরুল আমিন রাজু জানান, চলতি বর্ষা মৌসুমে মেঘনার ভাঙনে তার ইউনিয়নের শত বছরের পুরনো লুধুয়া বাজার, ফলকন উচ্চ বিদ্যালয়, ফলকন ছিদ্দিকিয়া দাখিল মাদরাসা ও লুধুয়া ফলকন ফয়জুন্নাহার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নদীগর্ভে সম্পূর্ণ বিলীন হয়ে গেছে। বসতবাড়ি ও ফসলি জমি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছে হাজারো পরিবার। কমলনগর উপজেলা নদী ভাঙন প্রতিরোধ কমিটির আহ্বায়ক অধ্যক্ষ আবদুল মোতালেব জানান, মেঘনার ভাঙন থেকে কমলনগর উপজেলাকে রক্ষায় তারা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছেন। এরই ধারাবাহিকতায় দুই বছর আগে ভাঙন রোধে বাঁধ নির্মাণের জন্য একটি প্রকল্পও অনুমোদিত হয়। কিন্তু অনুমোদিত ওই প্রকল্পের কাজ এখনো শুরু না হওয়ায় কমলনগর উপজেলা সদরের অস্তিত্বই এখন হুমকির মুখে রয়েছে। তিনি আরো জানান, রামগতির মতো সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে অতিদ্রুত কাজ শুরু হলে উপজেলার প্রাণকেন্দ্র হাজিরহাট এলাকাটি ভাঙনের হাত থেকে বাঁচবে।এ ব্যাপারে লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী গাজী ইয়ার আলী বলেন, মেঘনার ভাঙন রোধে কমলনগরে বাঁধ নির্মাণ কাজ শুরুর সব প্রস্তুতি সম্পন্নের পথে। আশা করছি, দ্রুতই আমরা বাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু করতে পারবো। কাজল কায়েস/এআরএ/পিআর