আইন-আদালত

রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বাতিলের রিট খরিজ : সুপ্রিমকোর্টে আপিল

সংবিধানের অষ্টম সংশোধনীতে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম ঘোষণা এবং পঞ্চদশ সংশোধনীতে ধর্মনিরপেক্ষতা ফিরিয়ে আনার পরও ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম রাখা সংক্রান্ত রিট খারিজের বিরুদ্ধে আপিল আবেদন করেছেন রিটকারী আইনজীবী।রোববার সুপ্রিমকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এই আপিল আবেদন করা হয় বলে জানান রিটকারী আইনজীবী সমরেন্দ্র নাথ গোস্বামী। আবেদনের ওপর চলতি সপ্তাহে চেম্বার জজ আদালতে শুনানি হতে পারে বলেও জানান তিনি। এর আগে, সংবিধানে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম ঘোষণার বৈধতা নিয়ে করা একটি রিট আবেদন খারিজের রায় প্রকাশ হয়েছে। রায় প্রকাশের আগে রায়ের অনুলিপিতে হাইকোর্টের বিচারপতি মো. এমদাদুল হক ও বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকার স্বাক্ষর করেন।পূর্ণাঙ্গ রায়ে বলা হয়, রাষ্ট্রধর্মের ধারণা আমাদের আদি সংবিধানে ছিল না। ১৯৮৮ সালে অস্টম সংশোধনীর মাধ্যমে ২(ক) অনুচ্ছেদ সংযুক্ত হয়েছে। যেখানে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম ঘোষণা করা হয়।এই সংশোধনীতে বলা হয়, ২(ক) প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম। তবে অন্যন্য ধর্মও প্রজাতন্ত্রে শান্তিতে পালন করা যাইবে।২০১১ সালের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে ২(ক) অনুচ্ছেদে আরো কিছু পরিমার্জন করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে,২(ক) প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম, তবে হিন্দু,বৌদ্ধ, ‘খ্রিস্টানসহ অন্যান্য ধর্ম পালনে রাষ্ট্র সমমর্যাদা ও সম-অধিকার নিশ্চিত করিবেন। এ দ্বারা স্বীকৃত যে, ২ (ক) অনুচ্ছেদে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম ঘোষণা করা হলেও অন্যান্য ধর্মকেও সমমর্যাদা ও সম-অধিকার দেওয়া হয়েছে। এ কারণে আমরা ২ (ক) অনুচ্ছেদ বাতিলের আবেদন গ্রহণ করতে পারছি না।রায়ে বলা হয়েছে, সংসদ দেশের বাস্তবতার নিরিখে সংবিধান সংশোধন করতে পারে। বাংলাদেশের বাস্তবতার প্রেক্ষিতে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বৈধ বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়। রায়ে আরও বলা হয়, দেশের বাস্তবতার প্রেক্ষাপটে ধর্ম নিরপেক্ষতার পরিধি বাড়ানোর আইনত ও সাংবিধানিক এখতিয়ার সংসদের। সংসদ সেটাই করেছে।এতে আরও বলা হয়, একটি নির্দিষ্ট ধর্মকে রাষ্ট্রধর্ম ঘোষণা করা সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। ২(ক) অনুচ্ছেদটি সংবিধানের সপ্তম অনুচ্ছেদের পরিপন্থী যেখানে, প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ তথা সংবিধানের প্রাধান্যের বিষয়ে বলা হয়েছে। এ কারণে আমরা ২(ক) অনুচ্ছেদ বাতিলের আবেদন গ্রহণ করতে পারছি না।বর্তমান বাস্তবতা বিবেচনায় ধর্ম নিরপেক্ষতার আদর্শ দেখার অধিকার জাতীয় সংসদের। জাতীয় সংসদ সেটাই করেছে বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়। এ সংক্রান্ত রায় প্রকাশের খবর রোববার জানান রিটকারী আইনজীবী সমরেন্দ্র নাথ গোস্বামী। তিনি বলেন, ‘গত ৬ নভেম্বর হাইকোর্টে খারিজ করে দেওয়া রিট আবেদনে রায় প্রকাশ করা হয়েছে। ওই রায়ের অনুলিপি হাতে পাওয়ার পর আমরা হাইকোর্টের এই খারিজ আদেশের বিরুদ্ধে আপিল দায়ের করেছি।২০১৫ সালের ৭ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টের বিচারপতি মো. এমদাদুল হক ও বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ রাষ্ট্রধর্মের বৈধতা নিয়ে রিট সরাসরি খারিজ করে দেন। রিট আবেদনকারী আইনজীবী সমরেন্দ্র নাথ গোস্বামী আদালতে নিজেই শুনানি করেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল খোরশেদুল আলম। তাদের সঙ্গে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ সাইফুজ্জামান।১৯৮৮ সালে সংবিধানের অষ্টম সংশোধনীর মাধ্যমে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম ঘোষণা এবং ২০১১ সালে পঞ্চদশ সংশোধনীতে ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি ফিরিয়ে আনার পরও রাষ্ট্রধর্ম বহাল রাখার বিষয়টি চ্যালেঞ্জ করে ২০১৫ সালের ১ অাগস্টে এই রিট আবেদনটি করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সমেন্দ্র নাথ গোস্বামী। রিটে পঞ্চদশ সংশোধনীতে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম রাখার বিধান কেন সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে রুল চেয়েছিলেন। তার আবেদনে আইন সচিবকে বিবাদী করা হয়েছিল। সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের শাসনামলে ১৯৮৮ সালের ৫ জুন চতুর্থ জাতীয় সংসদে অষ্টম সংশোধন করা হয়। এর মাধ্যমে সংবিধানে অনুচ্ছেদ ২- এর সঙ্গে ২(ক) দফা যুক্ত হয়। ২০১১ সালের ২৫ জুন আনা পঞ্চদশ সংশোধনীতে ওই অনুচ্ছেদ আবারও সংশোধন করা হয়। পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলোপের পাশাপাশি বাহাত্তরের সংবিধানের চার মূলনীতি জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা ফিরিয়ে আনা হয়। সেখানে বলা হয়, প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম, তবে হিন্দু,বৌদ্ধ, খ্রিস্টানসহ অন্যান্য ধর্ম পালনে রাষ্ট্র সমমর্যাদা ও সমঅধিকার নিশ্চিত করবে।উল্লেখ্য- সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ইসলামকে অন্তর্ভুক্তির বিধানের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে অপর একটি রিটও গত ২৮ মার্চ খারিজ করে দেন হাইকোর্টের আরেকটি বেঞ্চ। তবে ওই রিট খারিজের রায় এখনও প্রকাশ পায়নি। ২৮ বছর আগে ‘স্বৈরাচার ও সাম্প্রদায়িকতা প্রতিরোধ কমিটির পক্ষে সাবেক প্রধান বিচারপতি কামালউদ্দিন হোসেন, কবি সুফিয়া কামাল, অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীসহ ১৫ বিশিষ্ট নাগরিক হাইকোর্টে ওই রিট আবেদনটি দায়ের করেছিলেন। এফএইচ/এসআইএস