আন্তর্জাতিক

ভারতের প্রথম মুসলমান নারী পাইলট সারাহ

জয়ের গল্প সবসময় আনন্দের। কিন্তু কঠিন প্রতিকূলতা পেরিয়ে যে বিজয়, তা গৌরব আর পথ দেখানোর মতো গুরুত্বপূর্ণও বটে। সারাহ হামিদ আহমেদের গল্পটি তেমনই এক বিজয়ের গল্প। ভারতের প্রথম এবং এ মুহূর্তে একমাত্র মুসলমান নারী পাইলট হলেন সারাহ। আকাশে ওড়ার শখ ভারতীয় নারীরা মিটিয়েছেন বেশ আগেই। বিমান চালনা পুরুষদের পেশা বলে পরিচিত হওয়াটাই ছিল  প্রথম বাধা। কিন্তু দ্বিতীয় বাধাটি ছিল হয়তো তার চেয়েও দুর্গম। সংখ্যালঘুই শুধু নয়, ভারতীয় মুসলমানদের রক্ষণশীলতাকে অতিক্রম করার সামাজিক সাহস। সারাহ এখানেই বিশিষ্ট। ব্যাঙ্গালুরুর ২৫ বছর বয়সী এই নারী ভারতের উড্ডয়ন খাতের ৬০০ নারীর মধ্যে এ মুহূর্তে একমাত্র মুসলমান নারী, যিনি পেশাদার পাইলট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। সমাজের ভ্রু কুঁচকানোকে পরোয়া না করে সারাহ হেঁটেছেন তার স্বপ্নের পথে। কিন্তু শুরুর বাধাটি এসেছিল তার পরিবারের ভেতর থেকেই। বাবা হামিদ হুসাইন আহমেদ এর কথায়, “আমরা শুরুতে তাকে নিরুৎসাহিতই করেছি। আমাদের মুসলিম পরিবারের মেয়েরা আসলে এমন কোনো পেশায় যায়না যেখানে তাকে পরিবারের থেকে দূরে থাকতে হয়, অথবা কোনো সঙ্গী ছাড়া হোটেলে থাকার প্রয়োজন পড়ে”। জনাব হামিদ মেয়ের অনড় অবস্থান দেখে এরপর কথা বলেন যুক্তরাষ্ট্রে তার এক পাইলট বন্ধুর সঙ্গে। “আমার বন্ধু ফরিদ আমাকে বলে, আমার বরং গর্ব করা উচিৎ যে, কোনো মুসলমান মেয়েই যে পেশাটির কথা স্বপ্নেও ভাবে না, সারা সেটির ব্যাপারে উৎসাহী। ফরিদের কথাতেই আমি শেষপর্যন্ত সম্মতি দিই বলা যায়”। ২০০৭ সালে, সারাহ-র বয়স তখন ১৮, যুক্তরাষ্ট্রের একটি ফ্লাইং স্কুল থেকে ভর্তির জন্য নির্বাচিত হন তিনি। এটিকেই সারাহ-র জন্য সবশেষ সবুজ সংকেত বলে মানেন সারাহ-র বাবা হামিদ। এরপরের গল্পটি আকাশ জয়ের। তবে সারাহ-ও আর সব মেয়েদের মতোই স্বপ্ন দেখেন বিয়ে করে সংসার করবার। এক্ষেত্রে প্রায়ই পাত্রপক্ষের দাবি থাকে তাকে চাকরিটা ছাড়তে হবে। এধরণের দাবি তোলা পাত্রদের মুখের ওপর ‘না ‘ করে তাড়িয়ে দেন সারাহ-র বাবা হামিদ। শুধু পরিবার বা সমাজ নয়, এমনকি সারাহ দেখেছেন নাইন ইলেভেন পরবর্তী পশ্চিমের ইসলামাতঙ্কও। শুধু মুসলমান হওয়ার জন্য যে বিড়ম্বনা পশ্চিমে অন্যান্য মুসলিমদের নিতে হয়েছে, তার বাইরে থাকেননি সারাহ-ও। “এক্ষেত্রে আমি সবসময় রসিকতা আর মজার সঙ্গে পরিস্থিতির মোকাবেলা করেছি”। সারাহ জানান। সারাহ-র পথ ধরে ভারতে আরো দু’জন মুসলমান নারী এখন পাইলট হওয়ার অপেক্ষায়। এ সংখ্যা ভবিষ্যতে আরো বাড়বে, আশাবাদী সারাহ। তাই সব মেয়ের প্রতিই তার আহ্বান- “স্বপ্নটাকে মরতে দিও না। সমাজ বা সম্প্রদায় তোমাকেই যাই ভাবুক না কেন”। এসআরজে