নড়াইল সদর উপজেলার সোলুয়ার বিলে খাল পাড়ে গড়ে উঠেছে দেশি পুঁটি মাছের শুঁটকি পল্লী। প্রতিদিন বিভিন্ন বিল-খাল থেকে দেশি পুঁটি এনে রোদে মাচা বা চাতালে শুকানো হচ্ছে। ভালো মূল্যে এসব মাছ জেলার বাইরে এবং ভারতে রফতানি হচ্ছে। শুঁটকির খরচ কম হওয়ায় প্রতি বছর এ ব্যবসার পরিধি বাড়ছে। বর্তমানে এখানে প্রতি বছর প্রায় দেড়শ কোটি টাকার শুঁটকি কেনা-বেচা হচ্ছে।স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সদর উপজেলার মাইজপাড়া ইউনিয়নের কল্যানখালি গ্রামে গড়ে উঠেছে এ শুঁটকি পল্লি। ১২ বছর আগে কল্যানখালি গ্রামের অলোক মালো স্থানীয় সোলুয়া, আড়ংগাছাসহ কয়েকটি বিলে প্রাকৃতিকভাবে দেশি পুঁটি মাছের ব্যাপক উৎপাদনের শুবাদে সখের বশে পুঁটি শুঁটকি তৈরি করে ব্যবসা শুরু করেন। সেই থেকে এখানে শুঁটকি মাছের ব্যবসা শুরু। এখন নড়াইল ছাড়াও মাদারিপুর, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ ও মাগুরা জেলা থেকে বিভিন্ন ব্যবসায়ী এসে এ মাছের ব্যবসা করছেন। জানা যায়, প্রথমে হাট-বাজার থেকে মাছ কিনে এনে খালের পানিতে ধুয়ে বাঁশের মাচা করা চাতালে এক সপ্তাহ থেকে পনের দিন (রোদ বুঝে) শুকাতে হয়। তারপর বস্তাবন্দি করে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করা হয়। বাংলা কার্তিক মাস থেকে শুরু করে সাড়ে চার মাস এই ব্যবসা চলে।স্থানীয় কল্যানখালি গ্রামের মাছ ব্যবসায়ী অলোক মালো জানান, এবার তিনি ২শ ৫০ মণ দেশি পুঁটি মাছ শুকিয়েছেন। খুলনা, গোপালগঞ্জ, মাদারিপুরসহ বিভিন্ন জেলার ব্যাপারিরা এসে এ মাছ কিনে নিয়ে যান। কাঁচা মাছ প্রতি মণ ৫শ থেকে শুরু করে ৫ হাজার টাকা ক্রয় করেন এবং শুকিয়ে সাড়ে ৬ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা মণ বিক্রি করে থাকেন।মাগুরার ব্যবসায়ী মিরাজুল বিশ্বাস জানান, এ ব্যবসায় প্রতি বছর কমপক্ষে ১০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করতে হয়। খরচ বাদে লাভ একেবারে খারাপ থাকে না।মাদারিপুরের মাছ ব্যবসায়ী ফারুক ব্যাপারি বলেন, প্রায় আড়াই মাস আগে কর্মীসহ ৫ জন এসেছি। ব্যবসা মাঘ মাস পর্যন্ত চলবে। ইতোমধ্যে দু’বার মাছ বিক্রি করেছি। আমরা এসব মাছ ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে ভারতে পাঠাই।গোপালগঞ্জ জেলার মোকছেদপুর এলাকার ব্যবসায়ী শহিদুল বিশ্বাস বলেন, মাছ শুকানোর পর মাছের সাধারণত ছোট-বড় দুটি গ্রেড করা হয়। বড় গ্রেডের মাছের দাম বেশি।ফরিদপুরের মুসা ব্যাপারি বলেন, সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক নিয়মে এ শুটকি করা হয়। কোনো প্রকার মেডিসিন ব্যবহার করা হয় না। প্রতি বছর এখানে আনুমানিক দেড় কোটি টাকার লেনদেন হয়।মাছ কিনতে আসা মহাজন মাদারিপুরের সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ৩০ বছর ধরে এ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। শুটকি কিনে দেশের কয়েকটি জায়গাসহ ভারতে বিক্রি করি। প্রধানত এ মাছের বাজার ভারতে।হাফিজুল নিলু/এফএ/এমএস