দেশজুড়ে

আনু মোস্তফার মামলা প্রত্যাহার না হলে বৃহত্তর কর্মসূচি

দৈনিক যুগান্তরের রাজশাহীর ব্যুরো প্রধান আনু মোস্তফার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে আয়োজিত মানববন্ধনে বিশিষ্ট সমাজসেবী শাহীন আক্তার রেনী বলেছেন, সন্ত্রাস ও নাশকতা প্রতিরোধে আইশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মূখ্য ভূমিকা পালন করলেও কিছু অসাধু কর্মকর্তার জন্য পুলিশ বাহিনীর এ সুনাম ক্ষুণ্ন হচ্ছে।তিনি বলেন, সাংবাদিক আনু মোস্তফা দীর্ঘদিন থেকে পেশাগত সুনাম বজায় রেখে রাজশাহীতে কাজ করছেন। চারদলীয় জোট সরকারের সময়ে রাজশাহী অঞ্চলে বাংলা বাহিনীর হত্যা ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে তিনি সোচ্চার ছিলেন।সাম্প্রতিক সময়েও বিএনপি জামায়াতের নাশকতা ও সহিংসতার বিরুদ্ধে উচ্চকণ্ঠ রয়েছেন। কিন্তু, পুলিশের কতিপয় কর্মকর্তার আটক বাণিজ্যের সংবাদ প্রকাশ করায় তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে নাশকতার মামলা দেওয়া হয়েছে।তিনি অবিলম্বে সাংবাদিক আনু মোস্তফার বিরুদ্ধে দেওয়া নাশকতার মিথ্যা মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহারের দাবি জানান।সাংবাদিক আনু মোস্তফার মামলা প্রত্যাহার ও দায়ী পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়া হলে রাজশাহীতে আরো কঠোর গড়ে তোলারও হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় আনা যেমন জরুরি তেমনি কোনো নিরাপরাধ মানুষকে হয়রানি করাও কারো কাম্য নয়।রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সহ-সভাপতি ও রাজশাহী মহানগর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ডাক্তার আবদুল মান্নানের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক জামাত খানের পরিচালনায় রোববার সকালে এ কর্মসূচি পালিত হয়।সমাবেশে রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি, আকবারুল হাসান মিল্লাত বলেন, আনু মোস্তফার মতো একজন সিনিয়র সাংবাদিক সকাল ৬টায় টার্মিনাল এলাকায় গিয়ে গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করবেন, তা অত্যন্ত হাস্যকর। কিছু পুলিশ কর্মকর্তার আটক বাণিজ্য ও হয়রানির বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করায় তাদের গাত্রদোহ হয়েছে। আর এ কারণেই তার বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে পুলিশ। আমরা পুলিশের এই ন্যাক্কারজনক অপকর্মের নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে মামলা থেকে আনু মোস্তফার নাম প্রত্যাহারের দাবি করছি।তিনি আরো বলেন, কতিপয় পুলিশ কর্মকর্তা সরকারের সঙ্গে সাংবাদিকদের দূরত্ব সৃষ্টি করতে চাইছেন। এরা সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে চাইছেন। এসব পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে রাজশাহীবাসীকে সঙ্গে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। আর তা না হলে সরকারের যে অর্জন ও সুনাম তা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের উপদেষ্টা অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার তাপু বলেন, গণমাধ্যমকর্মীরা গণতন্ত্রের ধারক ও বাহক। কিন্তু কিছু পুলিশ কর্মকর্তা গণমাধ্যমকর্মীদের কণ্ঠরোধ করতে চাইছেন। এটি গণতন্ত্রের জন্য হুমকি। আনু মোস্তফার বিরুদ্ধে যে মামলা দেওয়া হয়েছে তা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এটা সবার কাছে পরিষ্কার। অবিলম্বে এ মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি।রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জামাত খান বলেন, বাংলা ভাই ও শায়খ রহমানকে জনসম্মুখে নিয়ে আসতে ও গ্রেফতারে আনু মোস্তফার ভূমিকার কথা রাজশাহীর সচেতন মানুষেরাই জানেন। সাম্প্রতিক সময়ে চলমান নাশকতা ও সহিংসতার বিরুদ্ধেও তিনি কলম হাতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছেন। কিন্তু, আজ তাকেই নাশকতার মামলায় জড়িয়ে হয়রানি করা হচ্ছে।আমরা রাজশাহীর মানুষ পুলিশের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তার ন্যাক্কারজনক ভূমিকার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।তিনি আরো বলেন, বোয়ালিয়া থানা পুলিশের দুই কর্মকর্তা বেপরোয়া চাঁদাবাজি, আটক বাণিজ্য এবং হয়রানির সঙ্গে জড়িত। আর এদের বিরুদ্ধে কলম ধরার কারণেই তাকে নাশকতা মামলায় ষড়যন্ত্রমূলকভাবে আসামি করা হয়েছে। অবিলম্বে এ মামলা প্রত্যাহার করা না হলে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ঘেরাওসহ বৃহত্তর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।সমাবেশে রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মামুন-অর-রশিদ বলেন, আনু মোস্তফার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা স্বাধীন সাংবাদিকতা পথকে রুদ্ধ করবে। পুলিশ প্রশাসন আরো সাংবাদিকদের মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে ফাঁসানোর ষড়যন্ত্র করছে। রাজশাহীর সাংবাদিক সমাজ পুলিশের এসব কর্মকর্তার অসৎ কর্মকাণ্ড কোনোভাবেই এড়িয়ে যেতে পারে না।রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের উপদেষ্টা আইনজীবী অ্যাডভোকেট এন্তাজুল হক বাবু বলেন, কতিপয় পুলিশ কর্মকর্তা সাধারণ মানুষকে হয়রানি করছেন। রাজশাহীর সাধারণ মানুষও এসব পুলিশ কর্মকর্তার লালসার শিকার হচ্ছেন। ধরে নিয়ে থানায় গিয়ে মামলার ভয় দেখিয়ে মোটা অংকের টাকা আদায় করছে। অন্যদিকে সন্ত্রাসীরা ঘুরে বেড়াচ্ছে। আইনশৃঙ্খলার রক্ষক পুলিশের এমন বিতর্কিত ভূমিকা কারোরই কাম্য নয়।বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ রাজশাহী জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক কল্পনা রায় বলেন, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা হলে বুঝতে হবে, পুলিশ ক্ষিপ্ত হয়েই কাজটি করেছে। পুলিশের এ ধরনের কাজ অত্যন্ত লজ্জাজনক।রাজশাহী টেলিভিশন রিপোটার্স ইউনিটির সভাপতি শম সাজু বলেন, আনু মোস্তফার কলম বন্ধ করার জন্যই পুলিশ তার বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে।মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান আলী বরজাহান বলেন, পুলিশ প্রকৃত অপরাধীদের খুঁজে বের করতে ব্যর্থ হয়েছে। সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মামলা দিয়ে বাঁচতে পারবেন না।সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব হাসিব পান্না বলেন, সমাজের ভালো ব্যক্তিদের যদি হয়রানি করা হয়, তাহলে প্রকৃত অপরাধীরা ছাড় পেয়ে যাবে। জঙ্গি বাংলা ভাইকে আনু মোস্তফা দেশের মানুষের সামনে হাজির করেছিলেন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ করে। আর তার বিরুদ্ধে নাশকতার মামলা দেওয়া হয়েছে। অবিলম্বে এ মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক দেবাশিষ প্রামাণিক দেবু বলেন, গাড়ি পোড়ানোর মামলা দিয়ে হাস্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করা হয়েছে।  অবিলম্বে এ মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।সমাবেশে আরো বক্তব্য দেন, রাজশাহী ব্যবসায়ী ঐক্য পরিষদের নেতা আলহাজ্জ হারুন অর রশিদ, রাজশাহী চেম্বারের সাবেক পরিচালক মনজুর হাসান মিঠু, নিউমার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির নেতা আলহাজ্জ তাজুল ইসলাম, রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের নেতা ও সাবেক ছাত্রনেতা মনিরুজ্জামান মনির, রিয়াজ আহমেদ খান, বেনেতি ব্যবসায়ী সমিতির সহসভাপতি মহেশ চন্দ্র সরকার, জাতীয় আদিবাসী পরিষদের নেতা সুভাষ চন্দ্র হেমব্রম প্রমুখ।এমএএস/আরআই