দেশজুড়ে

নরসিংদী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি বাণিজ্যের অভিযোগ

স্যারকে টাকা দিয়েই, আমার বান্ধবী স্কুলে ভর্তি হয়েছে। তার বাবা স্যারকে ম্যানেজ করেই তাকে ভর্তি করিয়েছে। তুমি পারো নি কেন ? আব্বু তোমার কাছে কি, টাকা ছিল না ? নরসিংদী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেয়া ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী রিয়াজুল জান্নাত তৃষার এমন প্রশ্নের কোনো উত্তর দিতে পারেননি তার বাবা খসরু মাহমুদ। তৃষা এবারের পিএসসি পরীক্ষায়   জিপিএ-৫ পেয়েছে।ক্ষোভ প্রকাশ করে খসরু মাহমুদ এই প্রতিবেদককে বলেন, টাকা দিয়ে কী হবে। মেয়ের মুখের দিকে তাকাতে পাড়ি না। তাই ভাবছি সব ব্যবসা গুটিয়ে স্কুলের ব্যবসা করবো। সম্প্রতি নরসিংদী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে লাখ লাখ টাকা ভর্তি বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। অভিভাবকদের  অভিযোগ, দ্বিতীয় ও ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তির জন্য শিক্ষার্থী প্রতি বিশ থেকে পঞ্চাশ হাজার টাকা করে হাতিয়ে নিয়েছে শিক্ষকেরা। ফলে ভর্তির সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছে প্রকৃত মেধাবী শিক্ষার্থীরা। এতে চরম ক্ষুব্ধ অভিভাবকরা। অন্যদিকে ভর্তি মৌসুম এলেই স্কুলের শিক্ষকেরা মেতে ওঠেন কোচিং বাণিজ্যে । ফলে বাধাগ্রস্থ হয় স্কুলের স্বাভাবিক কার্যক্রম। এতে করে হাতে গোনা কয়েকজন শিক্ষকের পকেট ভারি হলেও সুনাম নষ্ট হচ্ছে এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের। নরসিংদী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ভর্তি বাণিজ্যেকে ঘিরে আলোচনা ও সমালোচনার ঝড় বইছে শহর জুড়ে। তবে ভর্তিতে অনিয়ম ও বাণিজ্যের কথা অস্বীকার করেছেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক গৌতম মিত্র।স্কুল সূত্রে জানা যায়, এ বছর নরসিংদী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে দ্বিতীয় শ্রেণিতে ২৪০টি আসনের বিপরীতে ৬৬২ জন শিক্ষার্থী ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেয়। ষষ্ঠ শ্রেণিতে ১১০টি আসনের বিপরীতে ৫৪৬ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেয়। ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীরা রীতিমত যুদ্ধে লিপ্ত হয়। অভিভাবকরা লিপ্ত হয় লবিং তদবিরে। আর স্কুলের শিক্ষকেরা লিপ্ত হন কোচিং বাণিজ্যে। পড়াশোনার মান ভাল হওয়ায় বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর প্রথম পছন্দ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়। আর এই সুযোগকে কাজে লাগাচ্ছে স্কুলের কয়েক জন শিক্ষক।  ভর্তি মৌসুম এলেই কোচিং বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়েন শিক্ষকেরা। হাতিয়ে নিচ্ছেন মোটা অংকের টাকা। ভর্তির সুযোগ পাওয়া যাবে এমন নিশ্চয়তায় শিক্ষার্থীরা ছুটছেন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে কর্মরত শিক্ষকদের কোচিং সেন্টারে। স্বজনপ্রীতি ও কোচিংয়ের সুবাদের ফলে  প্রায় ৯৫ শতাংশ শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগও পাচ্ছেন। অন্যদিকে মেধা থাকলেও ভর্তির সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। স্কুলে ভর্তি হয়েছে এমন কয়েজন শিক্ষার্থীর অভিভাবক নাম প্রকাশ না করার শর্তে এই প্রতিবেদককে বলেন, আমার মেয়েকে ভর্তি করার জন্য স্কুলের এক শিক্ষককে ৩০ হাজার টাকা দিয়েছি। তিনি আমার মেয়েকে ভর্তির সুযোগ করে দিয়েছেন। ভর্তিতে বাণিজ্যের কোনো সুযোগ নেই উল্লেখ করে সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গৌতম মিত্র বলেন, ভর্তি পরীক্ষার খাতা দেখেছে বয়েজ স্কুলের শিক্ষকেরা। ফলাফল এনডিসি ও একজন ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে সফটওয়ারের মাধ্যমে অনলাইনে ফলাফল ঘোষণা করা হয়। এখানে অর্থ লেনদেনের প্রশ্নই ওঠে না।  তিনি আরও বলেন, স্কুলের অভ্যন্তরে কোনো প্রকার কোচিং করানো হয় না। বাহিরে হয় কিনা তা জানা নেই। সঞ্জিত সাহা/আরএআর/জেআইএম