সময়টা ২০১০ সাল। পৃথার কোলে তখন ২৬ দিনের বাচ্চা। মাতৃত্বের এই সময়টা যেকোনো নারীর জন্যই শারীরিক ও মানসিকভাবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, অনেকটা বিপদসংকুলও বটে। সেই সময় তিনি রেডিও টুডেতে রেডিও জকি (আরজে) হিসেবে আবেদনপত্র পাঠালেন, অথচ সম্পূর্ণ নতুন একটি প্রাণকে পৃথিবীতে আনার ২৬ দিনও পার হয়নি তখন! এতখানি যার মনের জোর, কে আর তাকে দমিয়ে রাখতে পারে! কোনোরকম পূর্ব অভিজ্ঞতা ছাড়াই হয়ে গেলেন কথাবন্ধু, তাও আবার দেশের প্রধানতম রেডিও স্টেশনে। পৃথার পুরো নাম তানজিনা পৃথা। শুরুটা আরজে হিসেবে হলেও বর্তমানে তিনি সংবাদ উপস্থাপক হিসেবে কর্মরত আছেন জনপ্রিয় রেডিও স্টেশন রেডিও টুডেতে। এর পাশাপাশি স্টেশন ইনচার্জ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন বাংলা রেডিও নিউইয়র্ক লাইভ ডট কম-এ। এর বাইরে রেডিও টুডে মিডিয়া একাডেমিতে উচ্চারণের ক্লাস নিয়ে থাকেন। তার জীবনের গল্পটি একটু ব্যতিক্রম। কেমন সেই গল্প? জানাচ্ছেন হাবীবাহ্ নাসরীন-ছেলেবেলায় পৃথার ইচ্ছা ছিল তিনি ব্যারিস্টার হবেন। বাবা চাইতেন তার এই মেয়েটি বিজনেসম্যান হোক। ভীষণরকম ভালোবাসতেন বলেই হয়তো খুব তাড়াতাড়ি না ফেরার দেশে চলে গেলেন বাবা, সবটুকু ভালোবাসা সম্ভবত আগেই দিয়ে দিয়েছিলেন! পৃথা যখন বাবাকে হারান তখন তিনি পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী। বাবার ভালোবাসা এতটাই পেয়েছেন যে এখনও প্রতিটি কাজে, প্রতিটি ক্ষেত্রে বাবাকেই সবার আগে মনে পড়ে তার। অতটুকুন বয়সে বাবাকে হারিয়ে একটু আগেভাগেই পৃথিবীর স্বরূপটা চিনতে পেরেছিলেন হয়তো। আর তাই সংগ্রামী মায়ের কাছ থেকেই নিয়েছেন সংগ্রামী জীবনের দীক্ষা।পৃথার জীবনের গল্পটা আরেকটু বিস্তৃত। তুলনামূলক কম বয়সেই বিয়ের পিঁড়িতে বসেছিলেন তিনি। সংসার নামক অচেনা পৃথিবীতে যখন প্রবেশ করলেন তখন মোটে উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষার্থী। মায়ের স্ট্রোকের পর তাকে দুশ্চিন্তামুক্ত রাখতেই বিয়ের পর্বটা সেরে নিয়েছিলেন দ্রুত। অথচ শুধুমাত্র মায়ের আপত্তি থাকার কারণেই উচ্চশিক্ষার জন্য পাওয়া জাপান সরকারের স্কলারশীপও ফিরিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। কে বলেছে জীবন সিনেমার মতো নয়! পৃথা শুধু একজন সফল সংবাদ উপস্থাপকই নন, একজন সফল মেয়ে, সফল গৃহিণী, সর্বোপরি তিনি একজন সফল মা। পৃথার ২৬ দিন বয়সী মেয়েটির বয়স এখন পাঁচ বছর। ওয়াজিবাহ্ আজহার আয়রা নামের মেয়েটি এখন রোজ সকালে নিয়ম করে স্কুলে যায়। বাকিসব একদিকে, পৃথার কাছে `আয়রা`ই হচ্ছে তার পৃথিবী!মিডিয়ায় কাজ করতে আসার প্রথম পর্বটা বেশ একটা সুখকর ছিল না পৃথার কাছে। না। কর্মক্ষেত্র থেকে কোনোরকম অসহযোগিতা তিনি পাননি। তবে আশপাশের মানুষদের কাছ থেকে শুনতে হয়েছে নানা রকম কথা। তবু তিনি এগিয়ে গিয়েছেন। কারণ তিনি জানতেন, তিনি কী করছেন। সময়ই সবকিছু বদলে দেয়। পৃথার আশপাশের মানুষগুলো, যারা একসময় নানা বাক্যবাণে পৃথাকে আহত করেছেন, তারাই এখন সম্মান আর সমীহর চোখে তাকায় পৃথার দিকে। পৃথার ভাষায়, `নিজের অবস্থান নিজেকেই তৈরি করে নিতে হয়।` মিডিয়ায় কাজ করার ক্ষেত্রে যারা আগ্রহী, বিশেষ করে মেয়েরা, তাদের জন্যও বললেন কিছু কথা, `মিডিয়া হচ্ছে নিজেকে প্রমাণ করার একটি বিশাল ক্ষেত্র। এখানে তুমি যা করবে তার ফলাফলটাও হাতেনাতে মিলবে। তাই তোমাকে জানতে হবে যে তুমি ঠিক করছ না কি ভুল করছ। যদি ভুল কিছু করে থাকো, তবে দ্রুত শুধরে নিতে হবে। পরিবার এবং সমাজ- সবার কাছেই একটি বিশ্বস্ততার জায়গা তৈরি করতে হবে তোমাকেই। কেউ হয়তো তোমাকে সাহায্য করবে না, তাই কারো সাহায্যপ্রত্যাশী না হয়ে নিজের মানসিক শক্তি নিজেকেই তৈরি করতে হবে। `যার গল্পের সবটুকুই সফলতার তার কি গোপন কোন ইচ্ছা আছে, যা এখনও পূরণ হয়নি? জবাবে মিষ্টি আর খানিকটা লাজুক হেসে জানালেন, হ্যাঁ। রবীন্দ্রনাথের গল্প কিংবা উপন্যাসের নায়িকা হতে চান তিনি। হোক তা মডেলিং কিংবা অভিনয়, জীবনে একবারের জন্য হলেও রবী ঠাকুরের উপমায় সাজতে চান তিনি। তার হৃদয়জুড়েই যে রবীন্দ্রনাথ! গানের সিডি থেকে শুরু করে বইয়ের তাক- সবকিছুই যে রবীন্দ্রনাথের দখলে! রবীন্দ্রপ্রেমী সফল এই নারীর পৃথিবীতে আসার দিনটি ছিল ২২ মার্চ। এবং কী আশ্চর্য, আজকের তারিখটিও ২২ মার্চ! শুভ জন্মদিন তানজিনা পৃথা! তাকে জাগো নিউজ পরিবারের পক্ষ থেকে অভিনন্দন ও ভালোবাসা। একনজরে তানজিনা পৃথাপুরো নাম: তানজিনা পৃথা।ডাকনাম: পৃথা।বাবা: প্রয়াত আব্দুল হাই।মা: আফরোজা আক্তার।জন্ম তারিখ: ২২ মার্চ।প্রিয় মানুষ: বাবা এবং মা।প্রিয় রং: কালো।প্রিয় খাবার: বাঙালি যেকোনো খাবার। বিশেষ করে মায়ের হাতে বানানো চটপটি ও ভর্তা।প্রিয় পোশাক: শাড়ি।প্রিয় স্থান: টাঙ্গাইল, দাদাবাড়ি। এর বাইরে সুযোগ পেলে পুরো পৃথিবী ঘুরে দেখার ইচ্ছা।প্রিয় কাজ: মেয়ের সঙ্গে সময় কাটান।আরআইপি