পাঠ্যবইয়ের পর এবার খোদ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের স্মরণিকায় বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা কবিতা বিকৃতির অভিযোগ উঠেছে। শুধু তাই নয়, এ প্রকাশনায় জাতীয় সঙ্গীত এবং প্রধানমন্ত্রীর বাণীতেও বানান ভুল করা হয়েছে। এমনকি সম্পাদকের নিজের বাণীতেও একাধিক বানান ভুল আছে। এমনিতেই এ বছর জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) প্রাথমিকের পাঠ্যবইয়ে নানা ভুল-ভ্রান্তি ও অসঙ্গতি নিয়ে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে দেশজুড়ে। এবার খোদ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের স্মরণিকায় বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা কবিতার বিকৃতি ও বানান ভুলের ঘটনায় নতুন করে তোলপাড় শুরু হয়েছে। রোববারই এ ঘটনা তদন্ত এবং দায়ীদের চিহ্নিত করার নির্দেশ দিয়েছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. সোহরাব হোসাইন। স্মরণিকাটি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রকাশনা। বিষয়টির সত্যতা স্বীকার করে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, ‘কবিতা বিকৃতিসহ অন্যান্য বিষয় আমার নজরে এসেছে। কার বা কাদের কারণে এমন হলো তা বের করতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।’ রোববার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে ৪৬তম শীতকালীন জাতীয় স্কুল ও মাদরাসা ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ২০১৭ এর পুরস্কার বিতরণী ছিল। এ উপলক্ষে ‘খেলাধুলা করবো, সুস্থ স্বদেশ গড়বো’ শীর্ষক স্মরণিকা প্রকাশ করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এতে প্রধানমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্টদের বাণী স্থান পায়। প্রকাশনাটিতে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা অন্নদা শঙ্কররায়ের একটি কবিতা সংকলন করা হয়, যাতে লেখা হয়- ‘যত কাল রবেপদ্মা-মেঘনা-গৌরী-যমুনা বহমান/তত দিন রবে কীর্তি তোমার শেখ মুজিবুররহমান’। কিন্তু অন্নদাশঙ্কর রায় রচিত কবিতাটিতে লেখা হয়েছিল ‘যতকালরবে পদ্মা যমুনা/ গৌরী মেঘনা বহমান/ ততকাল রবে কীর্তি তোমার/ শেখ মুজিবুর রহমান’। স্মরণিকায় উদ্ধৃত কবিতাংশে ‘যমুনা’র জায়গায় ‘মেঘনা’ আর ‘মেঘনার জায়গায়’ ‘যমুনা’ লেখা হয়েছে। প্রথম লাইনে নদীগুলোর নামের সংযোগে কোনো হাইফেন না থাকলেও তা ব্যবহার করা হয়েছে। ‘যতকাল’ এবং ‘ততকাল’ অভিন্ন শব্দ হলেও লেখা হয়েছে ‘যত কাল’ এবং ‘তত কাল’। অর্থাৎ এক শব্দকে ভেঙে দুটি করা হয়েছে। আর এই কবিতাটি যে কবি অন্নদাশঙ্কর রায় রচিত, সেটিরও উল্লেখ নেই এতে। এই স্মরণিকার প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে শিক্ষামন্ত্রীর নাম লেখা আছে। প্রধান কর্তাব্যক্তি হিসেবে মন্ত্রণালয়ের দুই বিভাগের দুই সচিব মো. সোহরাব হোসাইন ও মো. আলমগীর হোসেনের নাম রয়েছে। উপদেষ্টা হিসেবে আছেন মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) মহাপরিচালক ড. এসএম ওয়াহিদুজ্জামান ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান। সম্পাদক হলেন ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের সচিব শাহেদুল খবীর চৌধুরী। সদস্য হিসেবে আছেন মাউশির উপপরিচালক ফারহানা হক, ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের উপপরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মাসুদা বেগম এবং মাউশির সহকারী পরিচালক আবদুস সালাম।শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাদরাসা ও কারিগরি বিভাগের সচিব মো. আলমগীর হোসেন বলেন, এটি একটি মারাত্মক ভুল। বিষয়টি খতিয়ে দেখা উচিত। এ প্রসঙ্গে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোনো ভুলের কথা আমার জানা নেই। পরে ভুল ও কবিতা বিকৃতির কথা উল্লেখ করলে তিনি বলেন, ‘এই স্মরণিকার কাজের সঙ্গে আমরা জড়িত ছিলাম না। কমিটির কোনো সভা করা হয়েছে কি না আমার জানা নেই। আমার কাছ থেকে শুধু বাণী নেয়া হয়েছে।’ শুধু কবিতা বিকৃতিই করা হয়নি, বিভিন্ন বানানও ভুল আছে। খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাণীতে অন্তত তিনটি বানান ভুল আছে। জাতীয় সঙ্গীতে ‘আমার প্রাণে বাজায় বাঁশি’র বাঁশি বানানে চন্দ্রবিন্দু দেয়া হয়নি। সম্পাদকের বাণীতে অন্তত চারটি বানান ভুল আছে।এমএইচএম/ওআর/এমএস