টানা অবরোধ-হরতালে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতায় লোকসানের মুখে পড়েছে জয়পুরহাটের হ্যাচারি শিল্প। ঠিকমতো পরিবহন চলাচল করতে না পারার কারণে দেশের বিভিন্ন স্থানে মুরগি সরবরাহ বন্ধ থাকায় একদিকে খালি হচ্ছে না পোল্ট্রি খামারগুলো, অন্যদিকে কৃষক শ্রেণীর ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পাওয়ায় আশঙ্কাজনকভাবে কমে গেছে একদিনের বাচ্চার দাম।এছাড়া উদ্ভূত পরিস্থিতিতে পোল্ট্রি শিল্পেও লোকসানের কারণে এর বিরূপ প্রভাব পড়েছে একদিনের বাচ্চা উৎপাদনকারী হ্যাচারি শিল্পে। ফলে অব্যাহত লোকসানের কারণে পুঁজি হারাতে বসেছেন জেলার হ্যাচারি মালিকরা।জয়পুরহাট জেলায় গড়ে উঠেছে ছোট-বড় প্রায় ২৩ টি হ্যাচারি খামার। এর মধ্যে ১টি সরকারি ও অবশিষ্ট ২২টিই বেসরকারি হ্যাচারি। প্রতিমাসে এসব খামার থেকে প্রায় ১৭ লক্ষ ১৫ হাজার ২ শত ১০টি বাচ্চা উৎপাদন হয় বলে জানিয়েছে জেলা প্রাণী সম্পদ বিভাগ।হরতাল-অবরোধের কারণে পাইকারী বাজারে চাহিদা না থাকায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন হ্যাচারি মালিকরা। আর এ কারণে আর্থিকভাবে চরম লোকসানের মুখে পড়ে অনেক হ্যাচারিই এখন বন্ধ হওয়ার উপক্রম।জয়পুরহাট বিসিক শিল্প নগরীর কিষাণ হ্যাচারির ব্যাবস্থাপক তৌহিদুল ইসলাম বলেন, আমরা একদিনের মুরগির বাচ্চা উৎপাদন করি। এ বাচ্চাগুলোতো গুদামজাত করতে পারি না। যে দিন উৎপাদন হয় সেদিনই পোল্ট্রি খামার মালিকদের কাছে বিক্রি করতে হয়। কিন্তু কেবলমাত্র হরতাল আর হিংসাত্মক কার্যকলাপের কারণে যানবাহন চলাচল করতে পারছে না। ফলে এক দিনেই উৎপাদিত বিপুল সংখ্যক বাচ্চা নিয়ে আমাদের মত মহাবিপাকে পড়েছেন হ্যাচারি মালিকরা।জয়পুরহাট পল্লী ফিডস এ্যান্ড চিকস্ লিঃ এর স্বত্ত্বাধিকারী জাহাঙ্গীর আলম জানান, একটি বাচ্চা উৎপাদন,ব্যবস্থাপনাসহ খরচ পরে ২৮ টাকা, সেখানে প্রতি বাচ্চা ২০-২২ টাকায়ও বিক্রি হচ্ছে না। এতে গত দুই মাসে কেবল মাত্র পল্লী ফিডস এ্যান্ড চিকস থেকে উৎপাদিত মুরগী বাচ্চার জন্য লোকশান গুণতে হয়েছে ৩০ থেকে ৪০ লাখ টাকা। আর সব হ্যাচারি মিলে কয়েক কোটি টাকা লোকশান ছাড়িয়ে যাবে বলে তিনি দাবি করেন।হরতাল-অবরোধের জন্য মুরগি জয়পুরহাটের বাইরে না যাওয়ায় স্থানীয় বাজারগুলোতে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি মুরগি সরবরাহের কারণে চাহিদার পাশাপাশি স্বাভাবিক নিয়মেই মুরগীর দামও পড়তে থাকে। মূল্য পতনের কারণেও খামারিরা তাদের খামারগুলো খালি করতে দেরি করছেন। মুরগির খামারগুলো খালি না হওয়াই তারা ওই সব খামারে নতুন করে এক দিনের মুরগির বাচ্চাও তুলতে পারছেন না। তাই মুরগরি বাচ্চা উৎপাদনকারীরাও ক্রমাগত লোকশান দিতে গিয়ে অনেকেই হয়েছেন সর্বস্বান্ত। শুধু উৎপাদনকারীরাই নয়, ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে জড়িত মুরগরি বাচ্চা ব্যাবসায়ীরাও।জয়পুরহাট জেলা শহরের মাছুয়াবাজার এলাকার মুরগরি বাচ্চা ও মুরগি খাদ্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বাবুল ট্রেডার্সের বাবুল হোসেনসহ অনেক ব্যাবসায়ী বলেন, গত ১০ বছরে হ্যাচারি শিল্পে এত ভয়াবহ মন্দাভাব আর কখনো দেখা যায়নি। মুরগি খামারীদের কাছে লাখ লাখ টাকার মুরগির বাচ্চা ও খাদ্য বাকিতে বিক্রি করেছি। এখন খামারিদের লোকশানের কারণে সেই বাকি টাকাগুলোও আর তুলতে পারছি না।এ ব্যবসার ভবিষ্যত নিয়ে শঙ্কিত জয়পুরহাটের প্রথম পোল্ট্রি ও হ্যাচারি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান পদ্মা পোল্ট্রি ফিড এন্ড চিকস এর স্বত্তাধিকারী রাশেদুজ্জামান জানান, বাচ্চা উৎপাদন হঠাৎ করে বন্ধ করে দেওয়া যায় না, চাহিদা কমে যাওয়ায় আমরা এখন ৪-৫ দিন পর পর বাচ্চা উৎপাদন করছি, এ থেকে উত্তরণে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য সরকারি ও বিরোধী দলের সমঝোতা খুবই জরুরী।উল্লেখিত কারণে সাময়িকভাবে এক দিনের বাচ্চার দাম কমে গেছে বলে স্বীকার করে জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ গোলাম মওলা জগলুল জানান, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরে আসলে এই শিল্প ঘুরে দাঁড়াবে।দেশের গুরুত্বপূর্ণ এই হ্যাচারি শিল্পকে বাঁচাতে হলে রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে এর সাথে জড়িত ব্যবসায়ীদের লোকসান ঠেকাতে আন্তরিক হবেন দেশের সকল রাজনীতিবিদরা এমন প্রত্যাশা সংশ্লিষ্টদের।এমজেড/আরআই