কালের বিবর্তণে হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প। মৃৎশিল্পকে ধরে রাখতে হিমশিম খেতে হচ্ছে কারিগরদের। পূর্ব পুরুষদের এ পেশাটিকে ধরে রাখতে প্রতিনিয়ত চলছে সংগ্রাম। দইয়ের ভাঁড়ই এখন যেন তাদের ভরসা। তাই মৃৎশিল্পকে টিকিয়ে রাখতে স্বল্প সুদে ঋণ দেয়ার দাবি জানিয়েছেন এ শিল্পের সঙ্গে জড়িতরা।নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার খট্টেশ্বর, আতাইকুলা, হরিশপুর, গহেলাপুর, আত্রাই উপজেলার রাইপুর, মিরাপুর, সাহেবগঞ্জ, বহলা, পাঁচুপুর ও বদলগাছী উপজেলার এনায়েতপুর পালপাড়াসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে মৃৎশিল্পীদের বাসস্থান। এসব গ্রামে প্রায় আট থেকে দশ হাজার মৃৎশিল্পী মাটির জিনিসপত্র তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করে।এসব এলাকা থেকে তৈরি মৃৎশিল্পের মনকাড়া পণ্যগুলো দেশের বিভিন্ন স্থানে জায়গা করে নিয়েছিল। কিন্তু প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠপোষকতা ও বাজারের অভাবে এ শিল্প আজ বিলুপ্তির পথে। এক সময় হয়তো স্থান হবে জাদুঘরে। বর্তমান সময়ে দস্তা, অ্যালুমিনিয়াম এবং প্লাস্টিক সামগ্রীর সঙ্গে তাল মিলিয়ে টিকে থাকা সম্ভব হচ্ছে না এ শিল্পের। এ পেশায় জড়িতদের জীবনযাপন কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। উপজেলার গ্রামগুলোতে এখন আর মাটির হাড়ি-পাতিল তেমন চোখে পড়ে না। এছাড়া মৃৎশিল্প তৈরির উপকরণ যেমন মাটি সঙ্কট ও খড়ির দাম বেশি হওয়ায় এর দামও বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে মাটির তৈরি জিনিসপত্রের চাহিদাও কমেছে।তবে এগুলোর তেমন কদর না থাকলেও দইয়ের ভাঁড়ের চাহিদা রয়েছে। নওগাঁসহ জয়পুরহাট ও বগুড়া জেলা থেকে এসে পাইকারা নিয়ে যান এসব ভাঁড়। মাটির এসব জিনিসপত্র দিয়ে একটি ভাটা সাজাতে প্রায় ১ মাস সময় লাগে। বদলগাছী উপজেলার এনায়েতপুর পালপাড়া গ্রামের বিনয় চন্দ্র বলেন, দুইশ টাকার মাটি কিনে আড়াই কেজির দইয়ের ভাঁড় একশটার মতো হয়। মাটি প্রস্তুত করে একশটা ভাঁড় তৈরি করতে প্রায় আড়াই ঘণ্টা সময় লাগে। আর সব মিলিয়ে একজন লোকের সম্পন্ন করতে সময় লাগে প্রায় দুই থেকে আড়াইদিন। মাটি ও জ্বালানির খরচ বেড়ে গেছে। এখন পরিশ্রমের তুলনায় মাটির তৈরি জিনিসের দাম কমে গেছে।স্ত্রী পুলপুলি রানী বলেন, আগে মাটি কিনতে হতো না। কিন্তু এখন মাটি কিনে কাজ করতে হচ্ছে। মাটি থেকে তৈরি অন্যান্য জিনিসপত্রের চাহিদা কমে গেছে অ্যালুমিনিয়াম ও প্লাস্টিকের কারণে। তবে কোম্পানি দইয়ের ভাঁড়ের কোনো বিকল্প করতে না পারায় এখন এটাই ভরসা। কারণ মাটির পাতিলে দই জমাট বাঁধতে পারে।১ কেজি ওজনের ১শ দইয়ের পাতিল ৫শ টাকা, দেড় কেজি ওজনের ১শ পাতিল ৬শ টাকা, আড়াই কেজি ওজনের ১শ পাতিল ৭শ টাকা, তিন কেজি ওজনের ১শ পাতিল হাজার টাকায় বিক্রি হয় বলেও জানান তিনি।জোতিশ চন্দ্র বলেন, বাপ-দাদার এ পেশাটিকে কষ্ট করে হলেও টিকিয়ে রাখতে হচ্ছে। এ কাজ করে সংসার চালানো এখন কষ্টকর হয়ে উঠেছে। প্রতিনিয়ত লোকসান গুনতে হচ্ছে। বর্ষার সময় তেমন কাজ হয় না বলে বসে থাকতে হয়। এসময় সরকার থেকে অনুদান ও স্বল্প সুদে ঋণের ব্যবস্থা করা হলে আমাদের মৃৎশিল্পীদের জন্য সুবিধা হতো।আব্বাস আলী/এফএ/এমএস
Advertisement