দেশজুড়ে

জয়পুরহাটে ইরি-বোরো আবাদে ব্যস্ত কৃষকরা

জয়পুরহাটে ইরি-বোরো ধান রোপণে জেলার কৃষকরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। আমন ধানে দাম ভালো পাওয়ায় কৃষকরা ইরি-বেরো ধান চাষে ঝুঁকে পড়েছেন। ফলে বোরোর মাঠে নেমে পড়েছেন জেলার কৃষকরা। দিন-রাত জমিতে সেচ দেয়া, জমিতে চাষ দেয়া, বীজতলা থেকে চারা তোলাসহ বোরো ধান চাষের নানা কাজে এখন দারুণ ব্যস্ত তারা। জয়পুরহাট সদর উপজেলার পাকারমাথা এলাকার কৃষক উজ্জল হোসেন জানান ,চারা থেকে শুরু করে ডিজেল ও সারের কোনো সংকট নেই, এবারে তীব্র কুয়াশা না থাকায় চারা ভালোভাবেই গজিয়েছে। ফলে চারার সংকট নেই। এতে করে অনেক কৃষক নিজে চারা ব্যবহার করে বিক্রি করতে পারছেন। পাঁচবিবি  উপজেলার  ফিসকাঘাট গ্রামের আহসান হাবীব জানান, প্রতি বিঘা জমিতে খরচ হয়েছে ধানের চারা বাবদ কিনে নিলে চারশ থেকে পাঁচশ টাকা অথবা চারা করলে পাঁচ কেজি থেকে সাত কেজি ধান , জমি চাষ করা ছয়শ টাকা (লাঙ্গলে) আটশ টাকা (ট্রলারে) এক হাজার টাকা (ট্রাক্টরে), দিনমজুর বাবদ এক হাজার টাকা, সার (ইউরিয়া,পটাশ,ডেপ) কেনা বাবদ এক হাজার তিনশ টাকা খরচ হয়ে গেছে। এ ছাড়া তিন মাস পানি সেচ বাবদ (শ্যালো-ইঞ্জিনে) দুই হাজার টাকা ও ডিপ মেশিনে দুই হাজার পাঁচশ টাকা,নিড়ানী ও কিট-নাশকসহ নানা ওষুধ বাবদ আরো প্রায় এক হাজার টাকাসহ ধান কাটা-মাড়াইসহ আরো প্রয়োজন দুই হাজার টাকা। এ নিয়ে প্রতি বিঘা জমিতে চাষাবাদ বাবদ সর্বমোট খরচ হবে আট হাজার থেকে নয় হাজার টাকা এবং জমি বর্গা নিলে আরো চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা বেশি খরচ হবে বলে তিনি জানান। পাঁচবিবি  উপজেলার  আয়মা রসুলপুর ইউনিয়নের পশ্চিম কড়িয়ার জামাল উদ্দিন বলেন, এ বছর আমন ধানের দাম ভালো পাওয়ায় আমরা এবার ইরি-বোরো আবাদে নেমে পড়েছি এবং এ বছর ইরিতে ভালো দাম পাব বলে আশা করছি। কালাই উপজেলার হাতিয়র গ্রামের কাজী আনোয়ারুল ইসলাম জানান, আলু তোলার পর আমরা ধান লাগানো শুরু করেছি। আলুর দাম যে অনুপাতে পাওয়ার কথা সেটা না পাওয়ায় চাষাবাদের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে যাচ্ছে। তবে জমি তো আর ফেলে রাখা যায় না এজন্য আবার ধান লাগানো শুরু করেছি।জয়পুরহাট সদর উপজেলা সার ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান মিন্টু বলেন, এবার পর্যাপ্ত সার আমাদের কাছে মজুদ আছে, সার বিক্রি করার লোক পাচ্ছি না।স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্র জানায়, জেলায় এবার ৭২ হাজার ৩১৩ হেক্টর জমিতে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে চাল উৎপাদনের টার্গেট ধরা হয়েছে প্রায় ৩ লাখ মেট্রিক টন। গত ২০১৫-২০১৬ মৌসুমে জেলায় ৭২ হাজার ৩১০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হয়েছিল এবং এতে উৎপাদন হয়েছিল ৩ লাখ ৪৫ হাজার ৩০৭ মেট্রিক টন চাল। যা জেলার খাদ্য চাহিদা মিটিয়ে দেশের অন্যান্য স্থানে সরবরাহ করা সম্ভব হয়েছে। হেক্টর প্রতি গড় উৎপাদন হয়েছিল চার দশমিক ৭৭ মেট্রিক টন চাল।কৃষি বিভাগ জানায়, ধার্য কৃত ৭২ হাজার ৩১৩ হেক্টরের মধ্যে রয়েছে উচ্চ ফলনশীল জাতের ৪৯ হাজার ২৬৯ হেক্টর ও হাইব্রিড জাতের ২৩ হাজার ৪৪ হেক্টর জমি। উপজেলা ভিত্তিক লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে- সদর উপজেলায় উচ্চ ফলনশীল (উফশী) জাতের ১৫ হাজার ১৫০ হেক্টর জমি ও হাইব্রিড জাতের দুই হাজার তিনশ হেক্টর, পাঁচবিবিতে উফশী ১৭ হাজার ৪৭০ হেক্টর, হাইব্রিড দুই হাজার আটশ হেক্টর, আক্কেলপুরে উফশী আট হাজার ৬০ হেক্টর, হাইব্রিড দুই হাজার তিনশ হেক্টর, ক্ষেতলালে উফশী চার হাজার ৯৮০ হেক্টর, হাইব্রিড ছয় হাজার হেক্টর এবং কালাই উপজেলায় উফশী জাতের তিন হাজার ৬০৯ হেক্টর এবং হাইব্রিড জাতের নয় হাজার ৬৪৪ হেক্টর জমি। বোরো চাষ সফল করতে উফসী জাতের তিন হাজার ২৮৪ হেক্টর ও হাইব্রিড জাতের এক হাজার ৫৩৬ হেক্টর জমিতে বীজতলা তৈরি করা হয়েছে। ইতোমধ্যে জেলায় বোরোর ৭০ ভাগ চারা রোপণ সম্পন্ন হয়েছে।জেলায় বোরো চাষ সফল করতে স্থানীয় কৃষি বিভাগ ইতোমধ্যে ফেব্রুয়ারি মাসের সারের বরাদ্দ পেয়েছে । যার মধ্যে রয়েছে ইউরিয়া পাঁচ হাজার ২১৩ মেট্রিক টন, টিএসপি এক হাজার ৩১৩ মেট্রিক টন, এমওপি এক হাজার ৫৮৩ মেট্রিক টন ও ডিএপি এক হাজার ২৪৬ মেট্রিক টন। বোরো চাষে সেচ সুবিধা প্রদানের জন্য এক হাজার ৮৯৫ টি গভীর ও নয় হাজার ৮৫৪টি অগভীর নলকূপ প্রস্তত করা হয়েছে।বিএডিসি (বীজ) কৃষকদের মাঝে উন্নত জাতের বীজ সরবরাহ করেছে। এর মধ্যে উচ্চ ফলনশীল জাতের মধ্যে রয়েছে বিআর-২৮, ২৯, ১৬ ও ৫৪ জাতের ধান। এ ছাড়াও রয়েছে জিরাশাইল, মিনিকেট। হাইব্রিড জাতের মধ্যে রয়েছে এসিআই- ১, ২, ৩, ৪, ৫, ধানীগোল্ড, হিরা-২, ৫, জাগরন, ময়না, টিয়া, ধানী, এসএল-৮, তেজ।স্থানীয় ব্যাংক বিশেষ করে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক বোরোসহ অন্যান্য শীতকালীন ফসল চাষের জন্য কৃষকদের মাঝে কৃষি ঋণ বিতরণের উদ্যোগ নিয়েছে।জয়পুরহাট জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক সুধেন্দ্রনাথ রায় বলেন, এবার আমাদের যে লক্ষ্যমাত্রা আছে তা অর্জিত হয়ে আরো বেশি উৎপাদন হবে বলে আশা করছি। রাশেদুজ্জামান/আরএআর/আরআইপি