দেশজুড়ে

পর্যটকশূন্য ঐতিহাসিক পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার

পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার বা সোমপুর বিহার বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক সম্পদে অত্যন্ত সমৃদ্ধ। দ্বিতীয় পাল সম্রাট ধর্মপাল কতৃক অষ্টম শতকে প্রতিষ্ঠিত বৌদ্ধবিহার একটি বৌদ্ধ ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে তৎকালীন সময়ে বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেছিল। সে সময় তীর্থযাত্রীদের সমাগম ছিল এখানে। দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের নওগাঁ জেলার বদলগাছী উপজেলায় পাহাড়পুর গ্রামে ২৭ একর জমির উপর সোমপুর বিহার অবস্থিত।চলতি বছরের শুরু থেকে টানা হরতাল ও অবরোধে কোনো যানবাহন চলাচল করতে না পারায় ঐতিহাসিক পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারে পর্যটকশূন্য হয়ে পড়েছে। গত বছরে জাতীয় নির্বাচনে একই সময় দেশে অরাজকতা থাকলেও লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি রাজস্ব আয় হয়। কিন্তু এ বছর লক্ষ্য মাত্রার রাজস্ব আয় না হওয়ার আশঙ্কা ব্যক্ত করেছেন সংশ্লিষ্টরা। এদিকে পর্যটকনির্ভর পাহাড়পুর এলাকা সংলগ্ন স্থানীয় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের বেচাকেনা বন্ধ হয়ে গেছে। পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারে পর্যটকদের পদচারণা না থাকায় বাগানের মালিদের অন্য কোনো কাজ না থাকায় তারা শুধু বাগান চর্চা করেছেন। পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারে কর্মচঞ্চল্যতা না থাকায় আনসার সদস্যরা অলস সময় পার করছেন।বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য তালিকায় স্থান রয়েছে পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারের। এর ফলে গুরুত্বও বেড়েছে। এখানে গড়ে তোলা হয়েছে একটি বিশাল আকারের যাদুঘর। সেখানে রয়েছে অনেক ধরনের প্রত্নতাত্ত্বিক সামগ্রী। যা পর্যটকদের আকর্ষণ করে। এ বৌদ্ধ বিহারকে দেখতে প্রতিদিনই দেশ-বিদেশের হাজারও পর্যটক আসতেন। যে স্থানটি সর্বদা হাজারও পর্যটকদের ভিড়ে মুখরিত থাকত সেখানে টানা হরতাল-অবরোধে বছরের শুরু থেকে আসতে পারছে না কোনো পর্যটক। জয়পুরহাট জেলা থেকে আসা সাইফুল ইসলাম জানান, এমন একটা ঐতিহাসিক স্থানে পর্যটকদের কোনো সমাগম না থাকায় খুবই খারাপ লাগছে। যেখানে মানুষের সমাগম থাকত সব সময়।বগুড়া থেকে বন্ধুদের সাথে আসা জুয়েল বলেন, টানা হরতাল-অবরোধ জনগণকে অতিষ্ঠ তুলেছে। মানুষ রাস্তাঘাটে ঠিক মতো চলাচল করতে পারছে না। হরতাল-অবরোধে পর্যটক না আসায় শূন্য মনে হচ্ছে। পর্যটকনির্ভর স্থানীয় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কেনাবেচা না থাকায় অনেকে দোকানপাট বন্ধ রেখেছেন। আবার অনেকের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে নেয়া ঋণ পরিশোধ করতে পারছেন না বলে জানালেন দুই ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী।স্থানীয়রা জানান, হারতাল-অবরোধ থাকায় এলাকার উন্নয়ন ব্যাহত হচ্ছে। হারতাল-অবরোধ না থাকলে এই ঐহিতাসিক পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার প্রাণ ফিরে পাবে অন্যদিকে এলাকার উন্নয়ন হবে।  পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারের কম্পিউটার অপারেটর আবুল কালাম হোসেন জানান, বছরের চার মাস অর্থাৎ শীত মৌসুম নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি পর্যটক আসেন। গত অর্থ বছরের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে ৪০ হাজার পর্যটক এলেও এ বছর দেড় মাসে মাত্র ৮ হাজার পর্যটক এসেছিলেন। এতে সরকারের রাজস্ব কমে গেছে। পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারের সহকারী ব্যবস্থাপক (প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ) জাহিদ হাসান জানান, ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত মাত্র ১৭ লাখ টাকার রাজস্ব আয় হয়েছে। চলতি মৌসুমে ৩০ লাখ টাকা রাজস্ব আয়ের লক্ষ্য মাত্রা রাখা হলেও হরতাল-অবরোধের কারণে তা পূরণ হবে না বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন এই কর্মকর্তা।এমজেড/বিএ/এমএস