দেশজুড়ে

ঠাকুরগাঁওয়ের কৃষকের গলার কাঁটা বুড়িবাঁধ

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার চিলারং এলাকায় জলাবদ্ধতা ও খরা থেকে ফসলি জমি রক্ষা করতে নির্মাণ করা হয় বুড়িবাঁধ নামক সেচপ্রকল্প। এর উদ্দেশ্য ছিল প্রয়োজনীয় সেচ সুবিধার মাধ্যমে নিবিড়তা বাড়িয়ে ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি করা।

কিন্তু এমন পরিকল্পনা এখন হিতে বিপরীত। নানা কারণে পুরো প্রকল্পের কার্যক্রমই এখন আর উপকারে আসছে না কৃষকদের। এমন অভিযোগ প্রকল্পের আওতাধীন সদর উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের কৃষকদের।

বিশাল ব্যয়ের এই প্রকল্পটি এখন কৃষকদের দুঃখের উৎকৃষ্ট উদাহরণ। কৃষকদের কল্যাণের জন্য গড়ে ওঠা নদী শাসনের এই প্রকল্পটি এখন যেন কৃষকদের ফসলহানির মরণ ফাঁদ।

ঠাকুরগাঁও পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে আগে ওই এলাকায় বন্যা, জলাবদ্ধতা ও খরায় কৃষকদের চাষকৃত ফসল ঘরে তোলা সম্ভব হতো না। প্রকল্প এলাকার অধিকাংশ কৃষি জমিই নিচু। এর মধ্যে ২ হাজার ৮৫৮ হেক্টর কৃষি জমি অতি নিচু হাওর এলাকা হওয়ায় বর্ষায় ৪ থেকে ৬ মিটার গভীর পানিতে ডুবে থাকে। অথচ ওই এলাকার প্রধান ফসলই ধান।

ওই এলাকায় ৫ হাজার ৯০০ হেক্টরে তিনটি ফসল উৎপাদিত হতো। ফসলের নিবিড়তা ছিল ১১০ শতাংশ। ওই এলাকায় চাষিরা প্রকৃতির খেয়ালের উপরই কৃষি ব্যবস্থা ও চাষ পদ্ধতি নির্ধারণ করেছিল। অবহেলিত চাষিদের এমন দুর্দশা লাঘবে কৃষক, কৃষিজমি, ফসল রক্ষা ও উন্নয়নের স্বার্থে তৎকালীন সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ উদ্যোগী হন।

সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে ১৯৫১-৫২ সালের রিপোর্টের ভিত্তিতে এই প্রকল্পের বিস্তারিত রিপোর্ট ১৯৭২ সালে প্রণয়ন করা হয়। এর ভিত্তিতে প্রকল্পের নির্মাণ কাজ ১৯৭৫-৭৬ সালে শুরু হয়ে শেষ হয় ১৯৮০-৮২ সালে। বুড়িবাঁধ প্রকল্পের বাম খালের দৈঘ্য ৫.৩২ কি.মি. আর ডানে খালের দৈর্ঘ্য ৫.১২ কি.মি.।

চিলারং এলাকার কৃষক নুরুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, বুড়ির বাঁধ প্রকল্প কৃষককে বাঁচানোর জন্য করা হয়েছে। কিন্তু এটা এখন আমাদের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্ষাকালে বুড়ির বাঁধের উজান এলাকায় পানি দুইমাস ধরে রাখার ফলে সেখানকার কৃষকেরা চাষাবাদ করতে পারে না। আবার সরকার থেকে কোনো ক্ষতিপুরণও পায় না।

অপরদিকে ভাটা এলাকায় ক্ষরা মৌসুমে পানি সরবরাহ করার কোনো ব্যবস্থা না থাকায় এসময় কৃষককে সেলোমেশিন দিয়ে পানি দিতে হয়। তাই এই প্রকল্প এখন আমাদের কোনো কাজে আসছে না।

দুর্ভোগগ্রস্ত কৃষক আলমগীর হোসেন জানালেন, প্রতিবছরই বন্যায় সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় রোপিত ফসল ঘরে তুলতে পারেন না তারা। বারবার এ ক্ষতি পোষাতে না পারায় এখন তারা কৃষিক্ষেতের আশা ছেড়ে বিকল্প পেশা খুঁজছেন। বুড়ির বাধ প্রকল্প যদি সঠিক ভাবে পরিচালনা করা হয় তাহলে তারা অনেক লাভবান হবেন।

ঠাকুরগাঁও পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম জানান, কৃষকের ভাগ্য উন্নয়নের জন্য এই বুড়ির বাঁধ প্রকল্পটি করা হয়েছিল। কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণ ও তদারকির অভাবে এটি বর্তমানে কোনো কাজে আসছে না কৃষকের। নতুন করে এই বাঁধ সংস্কার ও পরিচালনার জন্য বাজেটের আবেদন করা হয়েছে। বাজেট পাওয়া গেলেই বুড়ির বাঁধ আবার সংস্কার করে কৃষকের উপকারের জন্য প্রস্তুত করা হবে। এই প্রকল্পের কারণে এ এলাকার কৃষকের ভাগ্যে উন্নয়ন হবে।

এফএ/পিআর