দেশজুড়ে

কক্সবাজারে ছেলে কর্তৃক অপহৃত বাবা উদ্ধার

সম্পদ বাগিয়ে নিতে নিজের বাবাকে তুলে নিয়ে লুকিয়ে রাখার অভিযোগে সন্তানের বিরুদ্ধে মামলা হওয়ার ১১দিন পর অবশেষে বাবা ছৈয়দ উল্লাহকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। সোমবার (১৫ মে) বিকেলে কক্সবাজার সদরের চৌফলদণ্ডী ইউনিয়নের নতুন মহাল এলাকাস্থ অপহৃতের বড় মেয়ের বাড়ি থেকে তাকে উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় অভিযুক্ত ছেলের স্ত্রী উম্মে সাদিয়া উর্মীকে আটক করেছে পুলিশ।

সোমবার রাতে ঈদগাঁও ইউপির ভোমরিয়াঘোনাস্থ সদস্য আবদুল হাকিমের জিম্মায় উদ্ধার ছৈয়দ ও আটক উর্মিকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে।

পুলিশ সূত্র জানায়, ঈদগাঁও ইউনিয়নের মধ্যম ভোমরিয়াঘোনার মৃত লাল মোহাম্মদের ছেলে মোহাম্মদ ছৈয়দ উল্লাহ (৭৭) ৪ মেয়ে, ২ সন্তানের জনক। তিনি ১২০ শতক (তিনকানি) জমির মালিক। তার ছোট ছেলে প্রবাসে ও বড় ছেলে শফিউল আলম বাড়িতেই থাকেন। সম্প্রতি জমির মূল্য বাড়ায় বড় ছেলে তার নামে সম্পত্তি লিখে দিতে বাবাকে প্ররোচিত করে আসছিল। কিন্তু অন্য সন্তান ও স্ত্রীকে ঠকানো হবে ভেবে ছেলের প্ররোচনায় পা দেয়নি বৃদ্ধ ছৈয়দ। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে বেশ কয়েকবার লাঞ্ছিতও করে ছেলে শফিউল আলম। সম্পদ বাগিয়ে নিতে গত ৪ মে বাড়ির রাস্তার মাথা থেকে বাবাকে কাঁধে তুলে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায় শফিউল। সঙ্গে যায় তার স্ত্রী উম্মে সাদিয়া উর্মীও। এরপর পরিবারের অন্য সদস্যরা সম্ভাব্য বিভিন্ন স্থানে তাকে খোঁজ করেন।

কোথাও না পেয়ে অপহৃতের স্ত্রী ছলেমা খাতুন (৫৮) বাদী হয়ে ছেলে ও ছেলে বউকে অভিযুক্ত করে কক্সবাজার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেন। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে পুলিশকে তদন্তের নির্দেশ দেন। সোমবার নতুন মহালস্থ মেয়ে বাড়ি থেকে এসআই দেবাশীষ সরকার ছৈয়দ উল্লাহকে উদ্ধার করে পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে নিয়ে আসেন।

এ বিষয়ে জানতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই দেবাশীষ সরকারকে বেশ কয়েকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ না করায় বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।

তবে, ঈদগাঁও পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. খায়রুজ্জামান জানান, আদালতের নির্দেশনা পেয়ে অপহৃত বৃদ্ধকে উদ্ধারে পুলিশ তৎপর হয। কিন্তু কোনোমতেই তার হদিস পাওয়া যাচ্ছিল না। এরপরও সতর্ক দৃষ্টি রাখা হচ্ছিল সর্বত্র। সোমবার দুপুরের দিকে অভিযুক্ত উম্মে সাদিয়া উর্মি বাজার হয়ে ভোমরিয়াঘোনাস্থ শ্বশুর বাড়ি ফিরছিল। গোপন সূত্রে এ খবর পেয়ে এসআই দেবাশীষ সরকার প্রথমে তাকে আটক করে। তার স্বীকারোক্তি মতে অপহৃত ছৈয়দ উল্লাহকে তার বড় মেয়ে নুর জাহান বেগমের নতুন মহাল এলাকার বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয়।

তিনি আরও বলেন, অপহরণ অভিযোগটি সত্য নয় বলে মনে হচ্ছে। এরপরও মূল কারণটি জানার চেষ্টা চলছে। তদন্ত শেষে অভিযোগ প্রমাণিত হলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

স্থানীয় ইউপি সদস্য আবদুল হাকিম জানান, বিষয়টি পারিবারিক কলহ হতে পারে। উদ্ধার ও আটককে পুলিশ তার জিম্মায় দিয়েছে। তাদের দু‘জনকে নিয়ে আগামীকাল (মঙ্গলবার) বেলা ১১টায় পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে যেতে বলেছে পুলিশ।

এদিকে, ছৈয়দ উল্লাহকে উদ্ধারের খবর প্রচার হলে তদন্ত কেন্দ্রে ভিড় জমান তার আত্মীয়-স্বজনরা। অনেকে ছৈয়দ উল্লাহকে দেখে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।

সায়ীদ আলমগীর/বিএ