আসন্ন ঈদের ছুটিতে সড়ক-মহাসড়কে গণপরিবহনের গতি নিয়ন্ত্রণ, যানজট নিরসন এবং ফিটনেসবিহীন বাস ও লঞ্চ চলাচল বন্ধের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি।
সোমবার রাজধানীর পুরানা পল্টনে মুক্তি ভবনের প্রগতি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত ‘ঈদ যাত্রায় দুর্ভোগ : নাগরিক ভাবনা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে এ দাবি জানানো হয়। সভায় লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী।
তিনি বলেন, এবারের ঈদেও যাত্রীদের দুর্ভোগ পোহাতে হবে। সরকারি হিসেবে এখনও ৩৭ শতাংশ সড়ক-মহাসড়ক ভাঙাচোরা। সড়ক, রেল ও নৌ পরিবহন স্বাভাবিক সময়ের প্রয়োজনের তুলনায় ৩৩ শতাংশ কম রয়েছে।তিনি আরও বলেন, গত বছর ঈদুল ফিতরে দেশের সড়ক, রেল ও নৌপথে ১৬৮টি দুর্ঘটনায় ২১২ জন নিহত ও ৮৯৬ জন আহত হয়েছিল। এছাড়া ঈদুল আজহায় ২১০টি দুর্ঘটনায় ২৬৫ জন নিহত ও ১ হাজার ১৫৩ জন আহত হন।
সভায় বলা হয়, মহাসড়কে যানজটপ্রবণ এলাকায় অবৈধ স্থাপনা ও বাজার উচ্ছেদ না হওয়ায় যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে কাঙ্খিত সংখ্যক ট্রিপ দিতে চালকরা বেপরোয়া গতিতে বাস চালানোয় প্রতিবছর ঈদ যাত্রা মৃত্যুর মিছিলে পরিণত হয়।
যাত্রী কল্যাণ সমিতির তথ্য মতে, এবারের ঈদে ঢাকা থেকে ৮০ লাখ, চট্টগ্রাম থেকে ২২ লাখ, সিলেট থেকে ৬ লাখ, খুলনা থেকে ১২ লাখ, রাজশাহী থেকে ৮ লাখ, রংপুর থেকে ৪ লাখ, বরিশাল থেকে ৪ লাখ লোক দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে যাবে। এছাড়া এক জেলা থেকে অপর জেলায় যাতায়াত করবে আরও প্রায় সোয়া ২ কোটি যাত্রী।
আলোচনা সভায় বলা হয়, এসব যাত্রী পরিবহনে সড়কপথে মাত্র ৩৯ হাজার ৯৪৫টি বাস, ২৭ হাজার ১১৮টি মিনিবাস, ৩ লাখ ১০ হাজার ৮২১টি প্রাইভেট কার, ৩ লাখ অটোরিকশা, ৪৩ লাখ প্যাডেল চালিত রিকশা, ১৫ লাখ ব্যাটারিচালিত রিকশা, ৫৫ হাজার মাইক্রোবাস, ২ হাজার ট্যাক্সি ক্যাব এবং ৭৫ হাজার হিউম্যান হলার রয়েছে।
এছাড়া নৌপথে রয়েছে আড়াই হাজার ছোট-বড় লঞ্চ, ৪০ হাজার ট্রলার, ৮২ হাজার নৌকা এবং ২ হাজার স্পিডবোট। রেলপথে পূর্বাঞ্চলে ৪৮টি, পশ্চিমাঞ্চলে ৪৪টি আন্তঃনগর ট্রেনের পাশাপাশি ১২ জোড়া ঈদ স্পেশাল ট্রেন, ৭৩টি লোকাল ও কমিউটার ট্রেন চলাচল করবে, যা স্বাভাবিক সময়ের প্রয়োজনের তুলনায় প্রায় ৩৩ শতাংশ কম।
পিএসসির সাবেক চেয়ারম্যান ড. ইকরাম আহম্মেদ বলেন, গণপরিবহনের ক্ষেত্রে সড়কপথ মুখ্য বিষয় নয়। এটা আমাদের দেশেই মুখ্য হয়ে দেখা গেছে। উন্নত দেশে ট্রেনকে ব্যাপক গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। যুগের পর যুগ আমরা সড়ককে গুরুত্ব দিয়েছি। এ মানসিকতা থেকে আমাদের সরে আসতে হবে। ইদানীং রেলে কিছুটা উন্নতি হয়েছে।
তিনি বলেন, প্রতি বছর লাখ লাখ টাকার বাজেট দেয়া হচ্ছে, কিন্তু গণপরিবহনের উন্নয়নে কী করা হচ্ছে তা দৃশ্যমান নয়। অন্যান্য খাতের মতো গণপরিবহন খাতকেও গুরুত্ব দিতে হবে। সড়কপথের মতো রেল ও নৌপথকে আরও যুগোপযোগী করতে হবে।
বক্তারা বলেন, ঈদ হল আনন্দের, কিন্তু বাংলাদেশে প্রতি বছর তা হয়ে উঠে চিরস্থায়ী দুঃখের কারণ। বিভিন্ন মহল থেকে প্রতিবছর ঘরমুখী মানুষের সমস্যার কথা বলা হচ্ছে, কিন্তু কোনো উন্নতি নাই।
সভায় আরও বক্তব্য রাখেন বাসদ এর কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রাজেকুজ্জামান রতন, বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ডভ্যান-ট্যাংকলরি মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক হোসেন আহম্মেদ মজুমদার, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সহ-সম্পাদক ব্যারিষ্টার শফিকুল ইসলাম, বিপ্লবী সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আলী রেজা প্রমুখ।
এইউএ/এমএমজেড/ওআর/জেআইএম