নির্মাণ ত্রুটির কারণে স্বল্প সময়ে পাবনা জেলার ৬১টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন এখন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। মাত্র ১৫ থেকে ২০ বছরে এসব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনের জীর্ণ দশা। নির্মাণকাজের চরম গাফিলতি বা ত্রুটি এখন ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য জীবন-মরণ সমস্যায় পরিণত হয়েছে। তাই এই স্কুল ভবনগুলো পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে।স্কুল শিক্ষক আব্দুর রহিম জাগো নিউজকে বলেন, প্রকৌশলী এবং বিত্তবান ঠিকাদাররা শুধু নিজেদের লাভটাই হিসেব করেছেন, নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করে ইমারত নির্মাণ করেছেন। শিশু-কিশোরদের জীবনের কথাটি একবারও ভাবেননি। এটাই আমাদের দুর্ভাগ্য। তিনি আরও বলেন, সবচেয়ে ভালো ছাত্ররা ইঞ্জিনিয়ার হয়, তাদের কাছে আমরা ভালো কিছু আশা করি। কিন্তু এসব কি হচ্ছে।পাবনায় সাম্প্রতিক ভূমিকম্পে ৬১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এত প্রায় ৩০ হাজার শিক্ষার্থীর শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। বেশ কয়েকটি ভবন ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় পরিত্যক্ত ঘোষণা করার কারণে শিক্ষার্থীদের খোলা আকাশের নিচে ক্লাস করতে হচ্ছে। এসব ভবন নির্মাণ করা হয়েছে নব্বইয়ের দশকে। এতো স্বল্প সময়ে ভবনগুলোর এমন অবস্থা হওয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।১৯৯৫-৯৬ অর্থ বছরে নির্মিত আটঘড়িয়ার উপজেলার হাপানিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। দেয়ালে ফাটল দেখা দিয়েছে। ছাদের প্লাস্টার খুলে পড়ায় ১১ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। ছাদ দিয়ে পানি পড়ে। শিক্ষার্থীরা এখন ক্লাস করে গাছ তলায়।বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আব্দুস সালাম জাগো নিউজকে বলেন, স্কুলের চারটি কক্ষের অবস্থা খুবই খারাপ। ছাত্র-ছাত্রীরা এখন গাছ তলায় ক্লাস করছে। বৃষ্টির কারণে ছুটি দিতে হয় মাঝে-মধ্যেই।একই অবস্থা সদর উপজেলার টেবুনিয়া ওয়াসিম পাঠশালা, তাজিয়ারপাড়া, তাজপাড়া, সিংগা, ভজেন্দ্রপুর, নারয়নপুর, দক্ষিণরাঘবপুর, শিবরামপুর মডেল স্কুল, শহীদ অশোক স্কুল, হেমায়েতপুর, উত্তর বড়দিকশাইল, শিবরামপুর মিলন সংঘ স্কুল, আদর্শ স্কুল ও পলিটেকনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়।হাপানিয়া সরকারি বিদ্যালয়ের পরিচালনা পরিষদের সভাপতি মোহাম্মদ আলী জাগো নিউজকে বলেন, এ বিদ্যালয়টির নির্মাণ কাজ এতটাই নিম্নমানের হয়েছে যে সামান্য ঝড় বৃষ্টিতেই ছাদ থেকে সিমেন্টের চাপ খসে পড়ে। আর এই সামান্য কম্পনেই স্কুলটির পুরো ছাদ ধসে পড়ার উপক্রম হয়েছিল। বড় ভূমিকম্প হলে সবাইকে মরতে হতো।টেবুনিয়া ওয়াসিম পাঠশালার সভাপতি জাহিদ হোসেন জাগো নিউজকে জানান, আমার বিদ্যালয় ভবনটি ভূকম্পনে ঝুঁকিপূর্ণ হয়েছে। দোতলায় ক্লাস বন্ধ করে দিয়েছি।পাটেশ্বর বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শহিদুল্লাহ জাগো নিউজকে জানান, এ বিদ্যালয় ভবনটি নির্মাণ কাজ হয়েছে মাত্র ১৫ বছর আগে। অথচ এটি এখন অকেজো। আমারাও খোলা আকাশের নিচে ক্লাস নিচ্ছি।সাঁথিয়া উপজেলার সিলন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, রায়েকমারি, সোনাতলা, কাজিপুর, কে পদ্মবিলা, সামান্যপাড়া, গোটেংরা, ভাটোপাড়া সোনাতলা ও পিয়াদহ প্রাথমিক বিদ্যালয়, সুজানগর উপজেলার বিন্যাডাঙ্গি, নরসিংহপুর, মালিফা, সুফিয়া খাতুন স্কুল, বনকোলা-২, চালনা ও বনকোলা প্রাথমিক বিদ্যালয়, চাটমোহর উপজেলার সেনগ্রাম, বালুদিয়ার, বরাদ্দনগর, বাহাদূরপুর, গুনাইগাছা, ঝাকড়া, ভেংড়ি ও স্থল স্কুল, বেড়া উপজেলার জাতসাকিনী, কোমরপুর, রাকশা, সিন্দুরী ও ভবানীপুর স্কুল, ফরিদপুর উপজেলার হরিপুর, খাগুড়িয়া, দক্ষিণ বৃলাহিড়িবাড়ি ও খাগরবাড়িয়া স্কুল, আটঘড়িয়া উপজেলার রঘুনাথপুর, পাটেশ্বর, রাঘপপুর, গোকুলনগর, পারখিদিরপুর, সুজাপুর ও দেবত্তর স্কুল, ভাঙ্গুরা উপজেলারসারুটিয়া, নূরনগর, পাটুল ও দোহারিগ্রাম স্কুল এবং ঈশ্বরদী উপজেলার মাজদিয়া ইসলামপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছে। এসব প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন ১৯৯৪ খ্রিস্টাব্দ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত নির্মিত।জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আব্দুস সালাম জাগো নিউজকে জানান, শিশুদের স্কুল ভবন ঝুঁকিপূর্ণ তাই আমরা দ্রুততার সঙ্গে মেরামতের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। দ্রুত মেরামত করা দরকার। অন্যথায় শিক্ষা কার্যক্রম মারত্মকভাবে ব্যাহত হবে।আলাউদ্দিন আহমেদ/এমজেড/আরআই