তাইফুল ইসলাম টিপু। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উঠে আসা এই নেতা ছাত্রজীবন থেকেই সম্পৃক্ত রয়েছেন বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে। ইউনিয়ন পরিষদের ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক পদ থেকে পথ চলা শুরু করে সম্প্রতি বিএনপির সহ-দফতর সম্পাদক হিসেবে মনোনীত হয়েছেন তিনি। এর আগে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতি, কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক সহ-সাধারণ সম্পাদক এবং কেন্দ্রীয় যুবদলের সদস্য ছিলেন। বিএনপির এ তরুণ নেতা তার রাজনীতিতে প্রত্যাবর্তন, অভিজ্ঞতা ও নতুন পদে চ্যালেঞ্জসহ নানা বিষয়ে কথা বলেছেন জাগো নিউজের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জাগো নিউজের নিজস্ব প্রতিবেদক মানিক মোহাম্মদ।জাগো নিউজ : নতুন দায়িত্ব পেয়েছেন। অনুভূতি কী?তাইফুল ইসলাম টিপু : এর আগেও অনেক পদ পেয়ছি। তবে দায়িত্ব পাওয়ার চেয়ে তা যথাযথভাবে পালন করাটা জরুরি। যারা দায়িত্ব দেন তাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করতে গেলে অনেক চাপ পড়ে। সেই জায়গা থেকে অনেক বিষয়ই এখন চিন্তা করছি। আগে যখন স্বাধীন ছিলাম তখন যা ইচ্ছা তাই করতে পারতাম। এখন কিন্তু তা পারবো না, কারণ যারা দায়িত্ব দিয়েছেন তাদের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য আমাকে সজাগ হতে হবে। সেই বিষয়গুলো নিয়েই আমি চিন্তা করছি। কারণ এ দায়িত্বই আমার জীবনে প্রথম নয়। এর আগে আমি অনেক দায়িত্ব পালন করেছি। তবে পদ পাওয়াটাকে আমি আমাকে মূল্যায়ণের ধারাবাহিকতা হিসেবে মনে করি।জাগো নিউজ : রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হওয়ার প্রেক্ষাপটটা কী ছিল?তাইফুল ইসলাম টিপু : যখন আমি জিয়াউর রহমান সাহেবের ধানের শীষের মিছিল দেখেছিলাম তখন আমি ততো বড় ছিলাম না; হাইস্কুলে পড়ি। জিয়াউর রহমান একজন সৎ মানুষ ছিলেন। তার খাল খনন কর্মসূচিও দেখেছি। এরকম প্রেক্ষাপট থেকেই বিএনপির রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েছি। যখন মিছিলটা দেখেছিলাম তখন আমাদের এলাকায় বিদ্যুৎ ছিল না। মশাল মিছিল নিয়ে ধানের শীষের মিছিল যাচ্ছিল। সেই মিছিলে আমি প্রথম অংশগ্রহণ করি। সেদিন থেকে জিয়ার চেতনা মনে লালন করে রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ি। আমি মনে করি, সবচাইতে গরীব মানুষ বলতে যদি কাউকে বলা যায় তাহলে বলবো খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান, জিয়াউর রহমানের উত্তরসূরীরা। খালেদা জিয়া বিরোধী-দলের প্রধান ছিলেন দুই বার। তারেক রহমানের বাবা রাষ্ট্রপতি ছিলেন। তার মা তিন বারের প্রধানমন্ত্রী । আজ তাদের ঢাকায় থাকার কোনো বাসা নেই। তাদেরকে সততার আর কোনো পরীক্ষা দেয়া লাগতে পারে বলে মনে করি না। সার্বিক বিষয় পর্যবেক্ষণ করে আমার মনে হয় জিয়াউর রহমানের পরিবার সৎ পরিবার। খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের মতো সৎ মানুষ আর বাংলাদেশে নেই। এসব কারণে এ পরিবারের প্রতি আমি কমিটেড। তাই এ পরিবারের সঙ্গে রাজনীতি করছি। ভবিষ্যতেও করবো।জাগো নিউজ : রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হওয়ার পর কী কী দায়িত্ব পালন করেছেন?তাইফুল ইসলাম টিপু : ছাত্রজীবনেই রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়েছি। প্রথম পদ ছিল ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক। তারপর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় হল সংসদের সাধারণ সম্পাদক-সভাপতি, বিশ্ববিদ্যালয়ের যুগ্ম আহ্বায়ক ও পরবর্তীতে আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করেছি।জাগো নিউজ : অনেকগুলো দায়িত্ব পালন করে বিএনপির সহ-দফতর হয়েছেন। সর্বশেষ পদের ব্যর্থতা কী ছিল?তাইফুল ইসলাম টিপু : চলার পথে সফলতা-ব্যর্থতা দুটােই থাকে। হয়তো ব্যর্থতার কথাটা কেউ স্বীকার করে না, সফলতার কথাটাই বেশি করে বলার চেষ্টা করে। যদি বলি কোনো ব্যর্থতা ছিল না সেটাও আপনাকে বিশ্বাস করতে হচ্ছে। আবার যদি বলি অনেক সফলতা ছিল সেটাও বিশ্বাস করতে হচ্ছে। এক্ষেত্রে আমার সমসাময়িক যেসব সাংবাদিকরা তখন ছিলেন তাদের কাছে খোঁজ করলে প্রকৃত তথ্য বেরিয়ে আসবে যে আমি কী কী কাজ করতে সমর্থ হয়েছিলাম। দেখুন, সংগঠন চালােনার ক্ষেত্রে অনেক বিষয়ে সফলতা-ব্যর্থতা থাকে। সংগঠনের অনেক বিষয়কে প্রাধান্য দিতে গিয়ে হয়তো আমি আমার মতো করে অনেক কাজ করতে পারিনি। তবে সমন্বয় করে কাজ করেছি।জাগাে নিউজ : নতুন দায়িত্বের চ্যালেঞ্জগুলো কী কী হতে পারে বলে মনে করেন?তাইফুল ইসলাম টিপু : শোনেন, এর আগে যতো পদ পেয়েছি; সবই নির্বাচনের মাধ্যমে ছিল। তবে এই প্রথম দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া আমাকে এ পদে মনোনীত করেছেন। তারেক রহমানের সম্মতিক্রমে হাইকমান্ড এই পদ আমাকে দিয়েছেন। প্রথমত দলের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নই আমার প্রথম কাজ হবে। এ মুহুর্তে বিএনপি বাংলাদেশে বিশাল জনপ্রিয় দল। আমি কোনো চ্যালেঞ্জ মনে করি না। কারণ এর আগে আমাকে অনেক চ্যালেঞ্জ নিতে হয়েছে। খোঁজ নিলে জানতে পারবেন, ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ পর্যন্ত যখন সারাদেশ আওয়ামী লীগের কথায় ওঠবস করতো তখনো রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় চলছে ছাত্রদলের কথায়। সেই অবস্থাতো এখন নেই। এখন বিএনপির অনেক ভালো অবস্থা। অনেক প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করে রাতে কয়লা দিয়ে সেসময় দেয়াল লিখন করেছি। সেই অবস্থা বিএনপির এ মুহূর্তে নেই। আমি মনে করি না কোনো চ্যালেঞ্জ আছে। কারণ রাজনৈতিক অভিজ্ঞতায় কিন্তু আমার কোনো ছন্দপতন নেই। মাঝপথে দায়িত্ব থেকে ২/৩ বছর গ্যাপ থাকতে পারে, কিন্তু রাজনীতিতে আমার রেগুলারিটি ছিল। রেগুলারিটি থাকলে আসলে কোনো সমস্যা হয় না। বাংলাদেশের কোথায় কে রাজীতিতে আছেন, কী অবস্থায় আছে এসবের প্রায় ৮০ ভাগই আমার জানা।জাগো নিউজ : এর আগে ছাত্ররাজনীতিতে নির্বাচনের মাধ্যমে নেতা হয়েছে। কিন্তু বিএনপিতে এসে নির্বাচন ছাড়া মনোনীত হলেন। আপনার কি মনে হয় যথার্থ মূল্যায়ণ হয়েছে?তাইফুল ইসলাম টিপু : আমাদের দলে সব কাউন্সিলর সর্বসম্মতিক্রমে পার্টির চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে দলের দায়িত্ব দিয়েছেন। তিনি যাকে যেখানে দেন সেটাকে নির্বাচিত হিসেবে গণ্য হবে। সেক্ষেত্রে আমিতো নির্বাচিত।জাগো নিউজ : মনোনয়নের মাধ্যমে নির্বাচন আর সরাসরি নির্বাচনের মধ্যে কি পার্থক্য দেখছেন না?তাইফুল ইসলাম টিপু : কাউন্সিল করার ক্ষেত্রে যে রকম পরিবেশ দরকার সেই পরিবেশ এখন নেই। কারণ দলের মহাসচিব থেকে গুরুত্বপূর্ণ নেতারা জেলে রয়েছেন। আপনি বলেন এর মধ্যে কীভাবে কাউন্সিল দেবেন। সব জেলার সভাপতিসহ নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে।জাগো নিউজ : চেয়ারপারসন দল পুনর্গঠনের কথা বলেছেন। তারই অংশ হিসেবে কি আপনাকে পদায়ন করা হয়েছে? দল পুনর্গঠনের ক্ষেত্রে কি নেতাকর্মীদের মতামত নেয়া উচিত?তাইফুল ইসলাম টিপু : ব্যক্তিগতভাবে মনে করি দল পুনর্গঠন একটা ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। এটা দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া। ধরুন আজ এক জেলায় কাউন্সিল হচ্ছে। ছয় মাস পর অাবার আরেক জেলায় কাউন্সিল হবে। নিয়ামানুযায়ী এভাবেই হবে। কিন্তু কিছু কিছু প্রেক্ষাপটে দলের চেয়ারপারসনকে একক সিদ্ধান্ত নিতে হয়। তবে ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, বেশিরভাগ জায়গায় কর্মীদের মতামতকে প্রাধান্য দেয়া উচিত।জাগো নিউজ : আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।তাইফুল ইসলাম টিপু : অাপনাকেও ধন্যবাদ।এমএম/বিএ/পিআর