ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে ঢাকা সফরে মুখ্যমন্ত্রী মততা ব্যানার্জি সঙ্গী হচ্ছেন কি-না, তা নিয়ে টানাপড়নের পর অবশেষে মোদীর হস্তক্ষেপে বরফ গলছে মমতার। ফলে নতুন করে কোনো অঘটন না ঘটলে আমাগী ৬ জুন মোদির সঙ্গী হয়ে ঢাকা আসছেন মমতা ব্যানার্জি।তবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বাংলাদেশ সফরে মমতা আসলেও আলোচিত তিস্তা চুক্তি নিয়ে হচ্ছে না বলে জানিয়েছে আনন্দবাজার পত্রিকা।পত্রিকাটির এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন- ‘বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের আলোচনায় পশ্চিমবঙ্গ অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক রাজ্য এবং মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ঢাকা যাওয়ার ব্যাপারে আমি প্রথম দিন থেকেই অনুরোধ করেছি। মমতা যেতে সম্মত হয়েছেন, এই সংবাদে আমি খুশি।’উল্লেখ্য, এর আগে ইউপিএ সময় মনমোহন সিংহ যখন ঢাকা এসেছিলেন, তখন শেষ মুহূর্তে ঢাকায় আসতে রাজি হননি মমতা। তার একটা কারণ ছিল, মমতার সঙ্গে আলোচনা না-করেই তিস্তার জলবণ্টন চুক্তি নিয়ে শেখ হাসিনাকে কথা দিয়েছিল কেন্দ্র। দ্বিতীয় কারণ ছিল, অসমের মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ ও ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার যে মনমোহনের সফরসঙ্গী হচ্ছেন, সেটা মমতাকে আগে জানানো হয়নি।প্রতিবেদনটিতে আরো জানানো হয়, কিন্তু মোদি এবার প্রথম থেকেই খুব সাবধানী। পাকিস্তান বাদ দিয়ে প্রায় সমস্ত প্রতিবেশি রাষ্ট্র সফর করে ফেলেছেন তিনি। বাংলাদেশে আসছেন সবার শেষে। তার কারণ একটাই। মমতার সঙ্গে আলোচনা না-করে বাংলাদেশের ব্যাপারে একতরফা সিদ্ধান্ত নিতে চাননি মোদি। মমতার সঙ্গে মোদির একান্ত বৈঠক হয়েছে দু’বার। এক বার সংসদে আর এক বার রাজভবনে। দু’বারই বাংলাদেশ নিয়ে মমতার সঙ্গে কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি যে শিগগিরই বাংলাদেশ যাচ্ছেন, সেটা সম্প্রতি রাজভবনের বৈঠকেই মমতাকে জানিয়েছেন মোদি। সেখানেই বিশেষ ভাবে মমতাকে অনুরোধ করেন সফরসঙ্গী হওয়ার জন্য।মমতার বরাত দিয়ে পত্রিকাটি জানান, মুখ্যমন্ত্রী মততা ব্যানার্জিও জানিয়েছেন- নীতিগত ভাবে তিনি বাংলাদেশ যেতে সম্মত হয়েছেন। এমনকী, বাংলাদেশের সঙ্গে স্থলসীমান্ত চুক্তি বিল নিয়েও সবুজ সঙ্কেত দিয়েছেন তিনি। বস্তুত, এই চুক্তি স্বাক্ষরের কর্মসূচি নিয়েই এ বার প্রধানমন্ত্রীর ঢাকা সফর। এই চুক্তির ফলে বাংলাদেশের সঙ্গে যতটা জমি হস্তান্তর হবে, তার বেশির ভাগই যাবে পশ্চিমবঙ্গ থেকে। তাই মোদিও চাইছিলেন এই চুক্তি স্বাক্ষরের সময় মমতা তার সঙ্গে থাকুন। এছাড়া মোদির সফরের সময় দু’দেশের মধ্যে যোগাযোগ বাড়ানোর জন্য বেশ কয়েকটি নতুন ট্রেন ও বাস পরিষেবা শুরু করা হবে। এই সব প্রকল্পের ব্যাপারেও রাজ্য সরকার পূর্ণ সহযোগিতা করছে।প্রতিবেদনে আরো জানানো হয়, কিন্তু এরপর কি এমন হয়েছিল যে মোদি তার সফরসূচি ঘোষণা করার পরে মমতা জানিয়ে দিলেন, তিনি যেতে পারবেন না! মমতার সফরের ব্যাপারে খোঁজখবর নিতে গত কালই (বৃহস্পতিবার) রাজ্যের মুখ্যসচিব সঞ্জয় মিত্রকে ফোন করেছিলেন বিদেশসচিব জয়শঙ্কর। মুখ্যসচিব তাকে জানিয়েছে, এখনও পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রীর সফরের কোনও নিশ্চয়তা নেই। কারণ, ৬-৭ জুন জেলায় কর্মসূচি রয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর।নবান্ন সূত্রের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে জানানো হয়, পরিস্থিতি জটিল করে তোলে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহের সাম্প্রতিক কলকাতা সফর। সেখানে রাজনাথ বলেন, খুব শিগগিরিই তিস্তা চুক্তি হবে বলে তিনি আশাবাদী। তবে ক্ষুব্ধ মমতা প্রধানমন্ত্রীকে জানান, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যখন এই কথা বলছেন, তার মানে প্রধানমন্ত্রী ঢাকায় তিস্তা চুক্তি সই করে ফেলতে পারেন। সুতরাং তার ঢাকা না যাওয়াই শ্রেয়।প্রতিবেদনটিতে আরো জানানো হয়, শুক্রবার প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে মমতাকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে যে, তিনি ঢাকায় এসে তিস্তা নিয়ে কোনও কথা বলবেন না। ওই চুক্তি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী যখন একমত নন, তখন শুধু বাংলাদেশের কথায় তিনি চুক্তি করবেন, এটা হতেই পারে না।রাজনাথও এ দিন বলেছেন, এই সফরেই তিস্তা চুক্তি হয়ে যাবে এমন কথা তিনি বলতে চাননি। তিনি বলতে চেয়েছিলেন, দুই দেশের মধ্যে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে অদূর ভবিষ্যতে এই চুক্তি হবে বলে তিনি আশাবাদী।শুক্রবার মমতা বলেছেন, ‘আমি তিস্তা চুক্তির বিরুদ্ধে নই। কিন্তু উত্তরবঙ্গকে বঞ্চিত করে তো চুক্তি করা উচিত নয়। তিস্তার জলপ্রবাহ খতিয়ে দেখতে কল্যাণ রুদ্রের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। সেই কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে চুক্তির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে রাজ্য।মমতা আরো বলেছেন, অতীতে যে চুক্তিটি তৈরি করা হয়েছিল, তাতে বেশ কিছু ত্রুটি আছে। সেগুলো মুখ্যসচিব কেন্দ্রীয় সরকারকে জানিয়েছেন। আমি নিজে বাংলাদেশে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমার বক্তব্য জানিয়ে এসেছি। ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে কোনও রকম নেতিবাচক সম্পর্ক নেই। কিন্তু আলাপ-আলোচনা না-করে একতরফা কিছু করলে আমরা সেটা কিছুতেই মানতে পারব না। কারণ, আমার কাছে পশ্চিমবঙ্গের স্বার্থ সবার আগে।প্রতিবেদনে জানানো হয়, আরো একটি বিষয় নিয়ে মমতার সঙ্গে কেন্দ্রের মতপার্থক্য হয়েছিল। জয়শঙ্কর মুখ্যসচিবকে চিঠি দিয়ে বলেছেন, ৩০ জুলাইয়ের মধ্যে স্থলসীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়িত করতে হবে। তবে মমতা প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছেন, এই চুক্তি রূপায়ণে তিনি দায়বদ্ধ। কিন্তু ৩০ জুলাইয়ের মধ্যেই সমস্ত মানুষের পুনর্বাসন সম্ভব হবে কি না, তা খতিয়ে দেখা দরকার। তার জন্য আনুষঙ্গিক সাহায্য যা দরকার, তা-ও কেন্দ্রের কাছ থেকে এখনও আসেনি। বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে মমতাকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে, পুনর্বাসনের কাজ সুষ্ঠু ভাবে করার জন্য রাজ্যকে সব রকম সাহায্য করবে কেন্দ্র।আরএস/পিআর