কৃষি ও প্রকৃতি

বন্যার ক্ষতি পোষাবে আমন

ভাদ্র মাস শেষে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত জমিতে আমন চারা রোপনের পর আশ্বিন মাসের বৃষ্টি কৃষকের জন্য আশির্বাদ হয়ে দেখা দিয়েছে। একদিকে কাঠফাটা রোদ অপরদিকে মাঝে মাঝে বৃষ্টি আমন খেতের চেহারাই পাল্টে দিয়েছে। এতে কৃষক নতুন করে স্বপ্ন দেখছে ঘরে আমন ধান তোলার। নতুন করে যদি কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হয় তাহলে কৃষক তার ক্ষতি কিছুটা হলেও পুষিয়ে নিতে পারবেন এমনটাই আশা করছে কৃষি বিভাগ।

তবে কৃষক বলছে অন্যকথা। জমি ফেলে না রেখে পুনরায় একরে ১৫/১৬ হাজার টাকা খরচ করে আমনের চারা রোপন করেছেন। তবে ফসল নিয়ে বেশ আশাবাদী কৃষক। বেশি দামে চারা কিনে রোপন করলেও এখন সবুজ ধানের খেতেই নতুন করে স্বপ্ন দেখছেন তারা।

দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা যায়, এবার দিনাজপুরে ২ লাখ ৫৩ হাজার ৬৮৭ হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। সে লক্ষ্যমাত্রা পূরণও হয়। কিন্তু চারা রোপনের কিছুদিনের মধ্যে আগস্ট মাসের শুরুতে দিনাজপুরে শুরু হয় ভয়াবহ বন্যা। ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখিন হয় কৃষকরা। বন্যার পানিতে তলিয়ে ১ লাখ ২১ হাজার হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়ে যায়। আশংকা দেখা দেয় আমন চাষেও বিপর্যয় ঘটার।

কিন্তু তড়িত পদক্ষেপ ও কৃষককে পরামর্শ দিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর সাহস যোগায় কৃষি বিভাগ। সফলতাও পায়। বন্যা পরবর্তী সময় নতুন করে নাবী জাতের ধানের বীজতলা তৈরি করে ও দগচি দিয়ে শুরু হয় ক্ষতিগ্রস্ত জমিতে আমনের চারা রোপন। শেষ পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গিয়ে দাঁড়ায় ২ লাখ ৫৬ হাজার ৭১০ হেক্টরে। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩ হাজার ৮৩৩ হেক্টর বেশি।

বীরগঞ্জ উপজেলার নিচ পাড়া ইউনিয়নের দামাইক্ষেত্র গ্রামের শাহাজাহান সিরাজ বুলবুল জানান, বন্যায় তার ৪ একর জমির ফসল নষ্ট হয়েছিল। বাজার থেকে চড়া দামে আমনের চারা কিনে পুরো জমিতেই চারা লাগিয়েছেন। আমনের চারাও লেগেছে সুন্দর। তার মাঠ এখন সবুজ আর সবুজ। তবে বন্যার কারণে তার উৎপাতন একমাস পিছিয়ে যাবে। কী পরিমাণ উৎপাদন হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা বলা সম্ভব নয় কারণ এটা একেবারেই নতুন অভিজ্ঞতা।

সদর উপজেলার ১০নং কমলপুর ইউনিয়নের দাইনুর গ্রামের কৃষক আব্দুর রহমান জানান, বন্যায় তার চার বিঘা (দুই একর) জমির ধান নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। অতিরিক্ত ১৫/১৬ হাজার টাকা খরচ করে নাবী ধানেরে চারা রোপন করেছেন।

ফসল কেমন হবে জানতে চাইলে তিনি জানান, যেভাবে জমিতে ধানের থপ লেগেছে তাদে করে আশা করা যায় ফসল ভালোই হবে। তবে দুই বার চারা রোপন সার, কীটনাশক ও শ্রমিকের মজুরিতে যে খরচ হয়েছে তা কোনোভাবেই পুষিয়ে ওঠা সম্ভব নয়।

সরকারিভাবে কোনো সহযোগিতা পেয়েছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি জানান, তিনি কোনো সহযোগিতা পাননি। তবে তার গ্রামে অনেককে ধানের চারা পেতে দেখেছেন।

দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ গোলাম মোস্তফা জানান, এবারের বন্যায় জেলায় ১ লাখ ২১ হাজার হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়ে যায়। তবে তা পূরণ করা হয়েছে।

ক্ষতিগ্রস্ত জমিতে দেরি করে লাগানো চারা থেকে কেমন উৎপাদন হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আশ্বিন মাসে রোদ ও মাঝে মাঝে বৃষ্টি হওয়ায় এবং বন্যার কারণে আবাদি জমিতে পলি পড়ায় উৎপাদন বেশ ভালোই হবে। কৃষকরা তাদের ক্ষতি কিছুটা হলেও পুষিয়ে নিতে পারবেন।

তিনি বলেন,আগাম জাতের ধান কাটা শুরু হয়েছে। বন্যার কোনো প্রভাব পড়েনি। উৎপাদন আশানুরূপ হয়েছে। আমরা কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। আমনের রোপা লাগানোর লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়েছে, আশা করছি উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রাও পূরণ হয়ে ছাড়িয়ে যাবে।

এমদাদুল হক মিলন/এফএ/আরআইপি