ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও সিলেট শহরে ভূমিকম্পের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলে তার প্রভাব ও ক্ষয়ক্ষতি কমাতে ১ হাজার ৩৮১ কোটি টাকা ব্যয়ে আরবান রিজিলেন্স নামের একটি প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। প্রকল্পটির অর্থায়ন করবে বিশ্ব ব্যাংক। বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত একনেকসভার নিয়মিত বৈঠক এর অনুমোদন দেওয়া হয়।প্রকল্পটিকে গুরুত্বপূর্ণ আখ্যা দিয়ে পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল একনেক পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আমরা ভূমিকম্প ঠেকাতে পারি না, তবে এর ক্ষতিকর প্রভাব যাতে জনজীবনে কম হয় সে ব্যবস্থাপনা করতে পারি। এ জন্যই আমরা এ প্রকল্পটির অনুমোদন দিয়েছি।রাজউক, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর ও পরিকল্পনা কমিশন যৌথভাবে ২০২০ সালের জুন নাগাদ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে।তিনি বলেন, প্রকল্পের আওতায় রাজউক ঝুঁকি-সংবেদনশীল ভূমি ব্যবহার পরিকল্পনা প্রণয়ণ করবে। এর আওতায় প্রতিষ্ঠানটি এসব শহরের ভূমি জোনিং করে ঠিক করে দেবে কোন এলাকায় সর্বোচ্চ কতো তালার ভবন তৈরি করা যাবে। সেই সঙ্গে এটাও নিশ্চিত করবে যাতে করে এসব শহরে নতুন করে পুকুর ভরাট করে আর বিল্ডিং তৈরি করা না হয়। বিল্ডিং তৈরিতে যেসব উপাদান ব্যবহৃত হবে তা ভূমিকম্প সহনশীল কিনা রাজউক তাও পরীক্ষা করে দেখবে।অপরদিকে, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন স্যাটেলাইট ও কন্ট্রোল অফিস নির্মাণসহ হুইল ড্রেজার, এক্সাভেটর, ক্রেন, মোবাইল জেনারেটরের মতো ভারী যন্ত্রপাতি কিনবে। আর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগ এ সংক্রান্ত ইনস্টিটিউট স্থাপনসহ প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি কিনবে। প্রকল্পের আওতায় এ তিনটি প্রতিষ্ঠান ঠিকমতো প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে কিনা তা তদারকি করবে পরিকল্পনা কমিশন।এছাড়া বৃহস্পতিবার ২ হাজার ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে মোট ৭টি প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়। মোট ব্যয়ের মধ্যে সরকারি অর্থায়ন ৬৫৩ কোটি টাকা, প্রকল্প সাহায্য ১ হাজার ৩৩২ কোটি টাকা এবং বাকি ১৮ কোটি টাকা সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন। অনুমোদিত ৭টি প্রকল্পই নতুন।জানা গেছে, দেশে বাংলাদেশ রেলওয়ের মোট ২ হাজার ৪৯৪টি লেভেল ক্রসিং গেট রয়েছে। এর মধ্যে ৬৭২টি লেভেল ক্রসিং গেটে সরকারিভাবে ১ হাজার ৮৮৯ জন গেট-কিপার নিয়োগসহ সিগন্যালিং ব্যবস্থা স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ জন্য একনেক সভায় আলাদা দুটো প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়। মোট ৯৭ কোটি টাকা ব্যয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ে ২০১৭ নাগাদ প্রকল্প দুটো বাস্তবায়ন করবে।প্রকল্পটি সম্পর্কে পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেন, উল্লিখিত লেভেল ক্রসিংগুলোতে যানবাহন চলাচল বৃদ্ধি পেয়েছে এবং এক্ষেত্রে কোনো গেট কিপার না থাকায় দুর্ঘটনা ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে। ফলে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে একদিকে নিরাপদ ট্রেন চলাচল ও জানমালের নিরাপত্তা যেমন নিশ্চিত হবে তেমনি কিছু কর্মসংস্থানেরও ব্যবস্থা হবে।কক্সবাজার জেলায় উপকূলীয় বাঁধ এর আওতায় ২০টি পোল্ডার পঞ্চাশ বছরের পুরোনো। এর মধ্যে ৬টি পোল্ডার ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের আঘাতে ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্থ। ফলে এ এলাকায় লোনা পানি সহজেই ঢুকে পড়ে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি করছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণ পেতে ক্ষতিগ্রস্থ ৬টি পোল্ডার নতুন করে মেরামত করবে সরকার। এজন্য আজকের একনেক সভায় এ সংক্রান্ত একটি প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়। মোট ২৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড ২০১৭ সাল নাগাদ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে।এদিকে, সিলেট বিভাগের সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলার ৩০টি উপজেলায় শস্য নিবিড়তা বাড়াতে আজকের একনেক সভায় আরো একটি প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়। মোট ৭৪ কোটি টাকা ব্যয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, কৃষি বিপণন অধিদপ্তর ও বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন ২০১৯ সাল নাগাদ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে।বৃহস্পতিবার সভায় জানানো হয় জাতীয় গড় শস্য নিবিড়তা থেকে সিলেট বিভাগের গড় কম। দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এ এলাকায় উন্নত জাত, মানসম্পন্ন বীজ, বালাই ব্যবস্থাপনা, পরিচর্যা ও সেচ ব্যবস্থার মাধ্যমে শস্য উৎপাদন বৃদ্ধি করতে এ প্রকল্পটির অনুমোদন দেয়া হয়।১৩৮ কোটি টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রাম জেলার চন্দনাইশ ও সাতকানিয়া উপজেলার সাঙ্গু ও চাঁদখালী নদীর উভয় তীর সংরক্ষণে অপর একটি প্রকল্পেরও অনুমোদন দেয়া হয় একনেক সভায়।এসএ/এসকেডি/আরএস/আরআই