জাতীয়

অডিটর নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসে সক্রিয় তিন চক্র

বাংলাদেশ কম্পট্রলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল এর ‘অডিটর’ পদে অনুষ্ঠিত নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্ন ও পরীক্ষার খাতা ফাঁসে ৩টি গ্রুপ সক্রিয় ছিল। পরিকল্পণা করে পরীক্ষায় পাসের নিশ্চয়তা দিয়ে ৫/৭ লাখ টাকায় পরীক্ষার্থী সংগ্রহ করে তারা। এরপর সর্তকতার সাথে আগ্রহী পরীক্ষার্থীদের তালিকা তৈরী করে প্রশ্নোত্তরপত্র সরবরাহ করে। এভাবে চক্রটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার পরিকল্পণা করে।শুক্রবার সকালে অনুষ্ঠিত ‘অডিটর’ পদে অনুষ্ঠিত নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্ন ও পরীক্ষার খাতা ফাঁসে জড়িত এবং বিভিন্ন পরীক্ষার প্রশ্নোত্তরপত্র ফাঁসকারী চক্রের ৩ জন মূলহোতাসহ ১৫ জনকে আটক করে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)।শুক্রবার সকাল সোয়া ১০টার দিকে র‌্যাব-২ এর আভিযানিক দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রাজধানীর জিগাতলায় অভিযান পরিচালনা করে তাদের আটক করে।আটককৃতরা হলেন, মোঃ জাকির হোসাইন (২৪), মোঃ হারুন মিয়া(৩২), রাদেশ কুমার সিংহ(২৯), মোঃ প্রিন্স(১৯), মোঃ মীর মোশারফ হোসেন(৩৫), মোঃ আবু সাইদ (২৮), মোঃ আশাউদ্দৌলা(৩১), মোঃ আব্দুলা আল মামুন(২২), মোঃ মোহানুর রহমান(২০), মোঃ হাসান(২২), ত্রিদেব চাকমা(৪২), মোঃ জনি(২৫), মোঃ নাহিদ(৩০), মোঃ কামরুল (২০) ও মোঃ বোরহান উদ্দিন(৩৮)।শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন র‌্যাব-২ এর অধিনায়ক (সিও) লে: কর্ণেল মাসুদ রানা। তিনি বলেন, ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউট (আইবিএ)-এর অধীনে বাংলাদেশ কম্পট্রলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল এর ‘অডিটর’ পদে নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। পরীক্ষায় প্রশ্ন ও পরীক্ষার খাতা ফাঁস করেছে এমন অভিযোগে জিগাতলায় অভিযান পরিচালনা করে তাদের আটক করা হয়।জিজ্ঞাসাবাদে আটককৃতরা জানায়, প্রশ্নপত্র ফাঁসের এ ঘটনায় চক্রটির তিনটি গ্রুপ সক্রিয় থাকে। যার মধ্যে প্রথম গ্রুপের দায়িত্ব ছিল দেশের বিভিন্ন স্থান হতে অর্থের বিনিময়ে পরীক্ষায় পাসের নিশ্চয়তা দিয়ে পরীক্ষার্থী সংগ্রহ করা।তারা তাদের পরিচিতিদের মাধ্যমে অত্যন্ত সর্তকতার সাথে আগ্রহী পরীক্ষার্থীদের তালিকা তৈরি করে।এরপর দ্বিতীয় গ্রুপটির দায়িত্ব ছিল প্রশ্ন ফাঁস করা। এ কাজটি দুইভাবে করা হয়। প্রশ্নপত্র প্রিন্টিং প্রেস থেকে বের করা অথবা পরীক্ষার হল থেকে বের করা। এক্ষেত্রে তাদের বিশ্বস্ত লোক সংশ্লিষ্ট স্থানে থাকে। তারা প্রশ্নপত্র ছাপানোর সময় প্রশ্নপত্রের খসড়া কপি অত্যন্ত গোপনীয়তার সাথে প্রিন্টিং প্রেস থেকে বাহিরে সরবরাহ করে।এ প্রদ্ধতিতে প্রশ্ন ফাঁস করা সম্ভবপর না হলে পরীক্ষা কেন্দ্রের দায়িত্বরত ব্যক্তিদের ম্যানেজ করে প্রশ্নপত্র ফাঁস করার ব্যবস্থা করা হয়।তৃতীয় গ্রুপটি বিভিন্ন বিষয়ে অভিজ্ঞ শিক্ষক ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে গঠিত। যারা দ্রুত প্রশ্ন গুলোর সমাধান করে উত্তরগুলো মোবাইলে এসএমএস এর মাধ্যমে তাদের নির্বাচিত পরীক্ষার্থীদের নিকট প্রেরণ করে।এছাড়া বিভিন্ন কেন্দ্রে তাদের নির্বাচিত পরীক্ষার্থীদের সুবিধার্থে গ্রুপটি বিভিন্ন কেন্দ্রের সাথে যোগাযোগ করে ভালো সিট পাইয়ে দেয়। তিনি আরও জানান, শুক্রবার অডিটর নিয়োগ পরীক্ষার সকল কাজই সম্পন্ন করে রাদেশ, জাকির এবং হারুন। অর্থ লেনদেনের বিষয়টি সমন্নয় করে জাকির। প্রশ্নোত্তর সংগ্রহের কাজ করে রাদেশ ও হারুন। বাকী ১২জন ব্যক্তি তাদের সহযোগী হিসেবে কাজটি সম্পন্ন করার জন্য এসএমএস এর মাধ্যমে উত্তর পাঠানো, হল ম্যানেজমেন্টে সহায়তায় কাজ করে।অর্থের বিষয়ে জানা যায়, চক্রটি একজন প্রার্থীকে চাকুরী পেয়ে দেওয়ার জন্য ৫/৭লক্ষ টাকা দাবি করে। এভাবে তারা কয়েক’শ শিক্ষার্থীর কাছে প্রশ্নোত্তর সরবরাহ ও এসএমএস পাঠিয়ে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে। ইতোমধ্যে তারা কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।জিজ্ঞাসাদে আরো জানায়, ইতিপূর্বে তারা বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষায় একইভাবে প্রশ্নপত্র ফাঁসের মাধ্যমে বিভিন্ন পরীক্ষার্থীদের নিকট হতে ৫ লক্ষ টাকা করে হাতিয়ে নিয়েছিল। আটককৃতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।জেইউ/এআরএস/এমএস