রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষার হলে গণিত বিভাগের তিন শিক্ষার্থীকে সহায়ক কর্মচারীর ভূমিকায় দায়িত্ব পালনের ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
গতকাল মঙ্গলবার রাতে উপাচার্য অধ্যাপক আব্দুস সোবহানের সভাপতিত্বে ৪৭৩তম সিন্ডিকেট সভায় এক সদস্য বিশিষ্ট এ কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক ড. আখতার ফারুখ বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, গত ২৫ অক্টোবর বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ‘সি’ ইউনিটের পরীক্ষায় দ্বিতীয় ও তৃতীয় বিজ্ঞান ভবনে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. লুৎফর রহমানের সুপারিশে গণিত বিভাগের তিন শিক্ষার্থী সহায়ক কর্মচারীর ভূমিকায় দায়িত্ব পালন করে।
বিষয়টি তদন্তের জন্য কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. একেএম মোস্তাফিজুর রহমান আল আরিফকে আহ্বায়ক করে এক সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
তিনি বলেন, সিন্ডিকেট সভায় এছাড়া আরও বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সিদ্ধান্তগুলোর মধ্যে বুদ্ধিজীবী স্মৃতিফলক নির্মাণে নির্ধারিত বাজেটে কাজ শেষ না হওয়ায় বাজেট বৃদ্ধির ব্যাপারে একটি যাচাই কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. মো আবুল কাশেমকে।
এছাড়া ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের সান্ধ্যকোর্সের প্রশ্ন ফাঁস এবং ওই ঘটনায় বিভাগের সভাপতির সঙ্গে কয়েকজন শিক্ষকদের অসাদাচরণের অভিযোগের ঘটনায় দুটি পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
ক্যাম্পাস সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের ১৬তম ব্যাচের এমবিএ প্রোগ্রামের দ্বিতীয় সেমিস্টারের ফাইনাল পরীক্ষার ‘প্রিন্সিপল্স অব অ্যাকাউন্টিং’ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়ে যায়। গত বছরের ৩ ডিসেম্বর বিকেল ৫টায় ওই পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল।
ওই দিনই বিভাগের একাডেমিক কমিটির সভায় প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা তদন্তে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে তদন্ত কমিটি করে সত্য উদঘাটনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সুপারিশ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। কিন্তু ওই সময় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন না করে ওই পরীক্ষা সংশ্লিষ্ট সবাইকে সতর্ক করে বিভাগের তৎকালীন সভাপতি অধ্যাপক জিন্নাত আরা বেগম বরাবর চিঠি দেয়।
সম্প্রতি ওই বিভাগের নতুন সভাপতি হিসেবে যোগদান করেন জাফর সাদিক। গত ২৫ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত বিভাগের একাডেমিক কমিটির সভায় প্রশ্নফাঁসের ঘটনা তদন্তের বিষয়টি উঠালে বিভাগের কয়েকজন শিক্ষক এ ঘটনা তদন্তের বিরোধিতা করে তার সঙ্গে অসাদাচরণ করেন বলে অভিযোগ ওঠে।
সিন্ডিকেট সূত্র জানায়, ওই প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা তদন্তে ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক চিত্তরঞ্জন মিশ্রকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
অন্যদিকে, সভাপতির সঙ্গে অসদাচারণের ঘটনা তদন্তে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মো. আমিনুর রহমানকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
সিন্ডিকেট সভায় ভর্তি পরীক্ষায় চারুকলা অনুষদে ‘সাম্প্রদায়িক উসকানিমূলক’ প্রশ্নপত্রের ব্যাপারে কমিটির রিপোর্ট পেশ করা হয়েছে। এছাড়া গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক সহযোগী অধ্যাপক তানভীর আহমেদের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগে তদন্ত কমিটি রিপোর্ট পেশ করে। রিপোর্টে টেকনিক্যাল কিছু বিষয় থাকায় সেটি আইটি এক্সপার্টদের দিয়ে তদন্তের জন্য অধিকতর তদন্ত কমিটি গঠনের দাবি জানানো হয় বলে জানান অধ্যাপক ফারুখ।
রাশেদ রিন্টু/এএম/এমএস