দেশজুড়ে

নাব্যতা হারাচ্ছে কাপ্তাই হ্রদ

নাব্যতা হারাচ্ছে রাঙ্গামাটির কাপ্তাই হ্রদ। বছরের পর বছর পাহাড়ি ঢলে নামা পলি জমায় কমে যাচ্ছে হ্রদের গভীরতা। তার ওপর চলতি বছর ১৩ জুনের ভয়াবহ ভূমিধসের ঘটনায় পরিস্থিতি আরও আশঙ্কাজনক হয়ে যায়।

ওই ঘটনায় পাহাড় থেকে ধসে পড়া মাটি বিলীন হয়ে মিলিয়ে গেছে হ্রদে। এতে হ্রদের তলদেশ ভরে জেগে উঠছে উচ্চতায়। এ অবস্থায় হ্রদের নাব্যতা আনতে ড্রেজিং জরুরি হলেও কোনো পদক্ষেপ নেই সরকারের। ফলে কাপ্তাই হ্রদ ব্যবহারে উদ্বিগ্ন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

সংশ্লিষ্ট সূত্রের তথ্য মতে, কাপ্তাই হ্রদ ঘিরে নানা সঙ্কট তৈরি হচ্ছে। সদ্য বর্ষা শেষে হ্রদে পানি কমতে শুরু করেছে। প্রতি বছর শুষ্ক মৌসুমে নৌ-পরিবহনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সঙ্কট তৈরি হয়। এ নিয়ে বিপাকে হ্রদ ব্যবস্থাপনায় দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষ ও সংশ্লিষ্ট প্রশাসন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দিন দিন কাপ্তাই হ্রদের তলদেশ ভরাট হওয়ায় শুষ্ক মৌসুমে অস্বাভাবিক হারে পানি কমে যায়। এতে হ্রদজুড়ে জেগে ওঠে অসংখ্য ডুবোচর আর মাঠ। ফলে বিঘ্ন ঘটে নৌযান চলাচলে। সৃষ্টি হয় নৌপরিবহন সঙ্কট।

চলতি বছর ১৩ জুনের পাহাড়ধসের মাটি হ্রদে বিলীন হয়ে যাওয়ায় এবার মৌসুমে সঙ্কট আরও আশঙ্কাজনক হয়ে উঠবে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন প্রশাসনিক কর্মকর্তারা।

এছাড়া বর্ষা মৌসুমে অস্বাভাবিক হারে হ্রদে পানির উচ্চতা বাড়ে। তখন নিম্নাঞ্চল তলিয়ে পানিবন্দি হয়ে পড়েন হ্রদের তীরবর্তী এলাকার লোকজন। তলিয়ে যায় বিস্তীর্ণ ফসলি জমি। তৈরি হয় জনদুর্ভোগ।

গবেষকদের মতে, ড্রেজিং না হওয়ায় কাপ্তাই হ্রদ দিন দিন ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। দূষণের শিকার হচ্ছে হ্রদের পানি। অথচ বিষয়টি নিয়ে সরকার এখনও উদাসীন। ড্রেজিংয়ের কথা বলা হলেও আজও তার পদক্ষেপ নেই।

সাবেক পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী দীপংকর তালুকদার বলেন, কাপ্তাই লেকের তিন নদী কাচালং, কর্ণফুলি ও চেঙ্গি নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে এসব নদীতে ক্যাপিটাল ড্রেজিং হওয়া জরুরি।

জেলা প্রশাসক মো. মানজারুল মান্নান বলেন, কাপ্তাই হ্রদ ভরাট হয়ে যাওয়ায় গভীরতা অস্বাভাবিক পর্যায়ে কমে যাচ্ছে। ফলে নৌ-পরিবহন ও বিদ্যুৎ উৎপাদনসহ নানান সঙ্কট তৈরি হচ্ছে। হ্রদের সঠিক ব্যবহার ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ড্রেজিং জরুরি। এ ব্যাপারে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। অবশ্য বিষয়টি অনুমোদনের জন্য বিবেচনাধীন।

স্থানীয় সূত্র জানায়, বছরের পর বছর পাহাড়ি ঢলে নামা পলি জমার পাশাপাশি হ্রদের উভয় তীরে ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। এতে প্রতিদিন হাজার হাজার মেট্রিক টন মাটি ও বর্জ্য গিয়ে পড়ছে হ্রদে। ফলে তলদেশ ভরাট হয়ে যাওয়ায় ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে কাপ্তাই হ্রদ। সঙ্কট মোকাবেলায় হ্রদের পাঁচটি পয়েন্টে ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। পয়েন্টগুলো হল- রাঙ্গামাটি থেকে কাপ্তাই, মারিশ্যা (মাইনি ও কাচালং খাল), মহালছড়ি (চেঙ্গী খাল), ছোট হরিণা ও কাপ্তাই থেকে বিলাইছড়ি খাল।

সুশীল প্রসাদ চাকমা/এএম/আরআইপি