জাতীয়

প্রতিকূল আবহাওয়ায় দর্শনার্থী সংকটে ঢাকা চিড়িয়াখানা

ঈদের আগে ব্যাপক প্রস্তুতি ও সাজ সাজ রব থাকলেও প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে এবার ঈদে রাজধানীর মিরপুরে জাতীয় চিড়িয়াখানার দর্শনার্থী অর্ধেকের নিচে নেমে এসেছে। গত বছর ঈদের দিন থেকে পরবর্তী তিন/চারদিন গড়ে ৭০ থেকে ৮০ হাজার দর্শনার্থীর উপচেপড়া ভিড় থাকলেও এবার চিত্র একেবারেই ভিন্ন। ঈদের দিন ও পরের দিন দর্শনার্থীর সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ২৫ হাজার ও ৪০ হাজার।  দর্শনার্থীদের সংখ্যা কম হওয়ায় প্রবেশ দ্বার, প্রাণী জাদুঘর ও বহিঃপার্কিং ইজারাদাররা চরমভাবে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। তারা ব্যবসায়িকভাবে চরম ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা করছেন। ব্যবসায়ীরা জানান, পাঁচ কোটি ১৬ লাখ টাকায় প্রবেশ দ্বার, ৪৫ লাখ ৫৬ হাজার টাকায় প্রাণী জাদুঘর এবং ৭২ লাখ ১২ হাজার টাকায় পার্কিং ইজারা নিয়েছেন তারা। জানা গেছে, প্রবেশ দ্বারের টিকিট জনপ্রতি ২০ টাকা, প্রাণী জাদুঘরে পাঁচ টাকা ও পার্কিংয়ে যানবাহন ভেদে  পাঁচ টাকা থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত ফি নির্ধারণ করা হয়েছে।প্রবেশ দ্বার ও পার্কিং এলাকার ইজারাদার অ্যাডোনাইজ ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের একজন কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেন, চিড়িয়াখানায় সাধারণত প্রতিদিন ১০ হাজার থেকে ১৫ হাজার দর্শনার্থী আসেন। সাপ্তাহিক ছুটি কিংবা অন্য সরকারি ছুটির দিনে সর্বোচ্চ ২০ হাজার দর্শনার্থী হয়। তিনি বলেন, দুই ঈদেই দর্শনার্থী গড়ে ৭০ থেকে ৮০ হাজার হয়। মূলত এ সময়েই তাদের আয়-রোজগার খুবই ভালো হয়। কিন্তু প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে এবার তাদের মাথায় হাত। আগামী কয়েকদিন আবহাওয়া ভালো থাকলে ক্ষতি কিছুটা কাটানো সম্ভব হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।১৯৭৪ সালে ১৮৬ একর জমির ওপর দেশের সর্বপ্রথম মিরপুর জাতীয় চিড়িয়াখানা প্রতিষ্ঠা করা হয়। মৎস্য ও পশু সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনে এটি পরিচালিত হয়। চিড়িয়াখানার কিউরেটর ডা. এনায়েত হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, এবারের ঈদ উপলক্ষে দর্শনার্থীদের স্বাগত জানাতে তারা ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছেন। দর্শনার্থীদের নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ডেপুটি কিউরেটর এস এম নজরুল ইসলামের নেতৃত্বে ৫০ সদস্যের কর্মকর্তা-কর্মচারীর সমন্বয়ে মনিটরিং টিম গঠন করা হয়েছে। চিড়িয়াখানার অভ্যন্তরে ৩০ জন নিরাপত্তাকর্মী ও ২০ জন আনসার সার্বক্ষণিক টহল দিচ্ছেন। কমিটির সদস্যরা ছয়টি স্পটে (তথ্য কেন্দ্র, বহিঃপার্কিং এলাকা, লায়ন মঠ, জলহস্তি, পাখি শাখা, হাতির ঘর এলাকা) সর্বদা খোঁজ-খবর নিচ্ছেন। চিড়িয়াখানায় এসে কোনো দর্শনার্থী অসুস্থ হলে তাদের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা দেয়ার জন্য মেডিকেল টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়া প্রাণীদের চিকিৎসার জন্যও চিকিৎসক স্ট্যান্ডবাই রাখা হয়েছে। বিভিন্ন স্পটে পাঁচ হাজার লিটারের পানির টাংকি বসানো হয়েছে। ডিপ টিউবওয়েল থেকে পানি তুলে টাংকিতে রাখা হচ্ছে। তিনি জানান, ঈদের সময় বিপুল সংখ্যক দর্শনার্থীর সমাগম হওয়ায় বিভিন্ন প্রাণী বিশেষ করে বাঘ, সিংহ, হাতির ওপর প্রচুর ধকল যায়। তাদের প্রাণবন্ত ও সতেজ রাখতে ভিটামিন, মিনারেল ও বিভিন্ন ওষুধ খাওয়ানো হচ্ছে। সর্বাত্মক প্রস্তুতি থাকলেও বিরূপ আবহাওয়ার কারণে দর্শনার্থীর সংখ্যা কম হওয়ায় তারা কিছুটা হতাশাগ্রস্ত। তবে আবহাওয়া ভালো হলে দর্শনার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন এনায়েত হোসেন। উল্লেখ্য, মিরপুর জাতীয় চিড়িয়াখানায় বর্তমানে ১২১ প্রজাতির দেড় সহস্রাধিক প্রাণী ও পশুপাখি রয়েছে। এবারের ঈদের মূল আকর্ষণ কী জানতে চাইলে চিড়িয়াখানার শীর্ষ একাধিক কর্মকর্তা জাগো নিউজকে জানান, এবারের ঈদে দর্শনার্থীরা এসে বিভিন্ন প্রাণী ও পশুপাখি (জিরাফ, জেব্রা, ময়ূর, কুমির, অজগর সাপ, ইমু, হাড়গিলা, ওয়াটার বাগ, ওয়াইল্ড বিস্ট) এর ছোট ছোট বাচ্চা দেখার সুযোগ পাবেন। এছাড়া সিংহ, বাঘ, হাতি, কুমির, অস্ট্রিচ পাখি, ক্যাঙ্গারু, জিরাফ ও জেব্রা দেখেও আনন্দ পাবেন বলে জানান তারা । ১২১ প্রজাতির দেড় সহস্রাধিক প্রাণী ও পশুপাখির মধ্যে বাঘ, সিংহ, হাতি, জলহস্তি, টাপির, চিতাবাঘ, হায়েনা, হরিন, জিরাফ, জেব্রা, ময়ূর, বেবুন, শিম্পাজি, বানর, ইমপালা, ওয়াটারবাগ, ভোঁদর, উটপাখি, কেশওয়ারী, প্যাঁচা, টিয়াপাখি, অস্ট্রিচ, ইমু, ইগল, শকুন, সাপ, কুমির, বুনোহাঁস ইত্যাদি অন্যতম। এছাড়া প্রাণী জাদুঘরে বিভিন্ন ধরণের প্রায় আট’শ প্রাণী হয়েছে। এমইউ/এসকেডি/বিএ/পিআর