মতামত

টেস্টেও মুস্তাফিজ অস্ত্রের প্রয়োগ শুরু

ইতিহাস আর পরিসংখ্যানের পাতা ঘেঁটে দেখা যাচ্ছে, অভিষেকে চার বলে তিন উইকেট নেয়া প্রথম এবং একমাত্র টেস্ট বোলারের নাম মুস্তাফিজুর রহমান। তবে এটাও নিশ্চিত তিনি নিজেও জানেন না, এরকম একটা কৃতিত্বের সাথে জড়িয়ে গেছে তাঁর নাম! আর তিনি জানেন না বলেই তিনি মুস্তাফিজ। পারফরম্যান্স দিয়েই অনেক কিছু জানান দিচ্ছেন। টি-টোয়েন্টি, ওয়ানডের পর টেস্টেও অভিষেকেই আলোচনায় এই তরুণ বাঁহাতি।মুস্তাফিজ হচ্ছেন ইতিহাস না জানা ক্রিকেটার। কিন্তু ইতিহাস গড়তে ভালোবাসেন। আবার সেই ইতিহাসের কথা বলতে গেলে রীতিমতো আড়ষ্ট হয়ে পড়েন! শুধু ইতিহাস কেন, কথাবার্তায় মোটেও সাবলীল নন তিনি। কিন্তু তাতে দোষের কিছু নেই। কারণ, বল হাতে নিজের কাজটা ঠিকই করে যাচ্ছেন সাতক্ষীরার এই তরুণ। তাই ইতিহাসের নেটওয়ার্কে ঘোরাঘুরি না করলেও ইতিহাসে ঠিকই ঢুকে পড়ছেন তিনি।সাউথ আফ্রিকার বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্টে অভিষেক হলো মুস্তাফিজের। প্রথম ইনিংসে যে পারফরম্যান্স তাঁর, তাতে আভাসটা পরিষ্কার টেস্টেও ‘মুস্তাফিজ ফ্যাক্টর’ শুরু হলো। মুস্তাফিজ মানেই উইকেট। টেস্ট, ওয়ানডে, টি-টোয়েন্টি তিন ফরম্যাটেই উইকেটের মধ্যে আছেন তিনি। যে কারণে প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানদের কাছে এখন মুস্তাফিজ এক দুশ্চিন্তার নাম। মুস্তাফিজ ইতিহাস জানেন না। কিন্তু প্রতিপক্ষ  ব্যাটসম্যানদের এখন জানতে হচ্ছে মুস্তাফিজকে। বোঝার চেষ্টা করতে হচ্ছে তাঁর স্লোয়ার, কাটার-কে। কারণ,ঐ স্লোয়ার আর কাটার-ই হচ্ছে মুস্তাফিজাস্ত্র।মুস্তাফিজ যখন বাংলাদেশ ক্রিকেটের গর্ব তখন অন্যদেশের ক্রিকেটারদের কাছে মুস্তাফিজ গবেষণার বিষয়। তাকে কিভাবে সামাল দিতে হবে তা নিয়ে টিভি ফুটেজের কাটাছেঁড়া চলছে। তথ্যটা নিশ্চয়ই জানেন এই বাঁহাতি। হয়তো তাই তাঁর অনেক অজানার মাঝে ঐ একটা অজানাই, তাকে নিয়ে গবেষণা হচ্ছে। অতএব তাঁকে আরো উন্নতি করতে হবে। এবং সেটা প্রতিনিয়ত।ইতিহাস না জানা মুস্তাফিজকে ক্রিকেট ইতিহাস কোথায় রাখবে সেটা বলার সময় আসেনি এখনই। একজন বোলার সবেমাত্র আর্ন্তজাতিক ক্রিকেট সার্কিটে পা রেখেছেন। তবে তাঁর পদধ্বনি ক্রিকেট বিশ্ব শুনতে পাচ্ছে। এটাই তাঁর আপাত সাফল্য। বাংলাদেশ দলের বড় পারফরমারও এখন তিনি। এই পারফরমারকে নিয়ে নাচানাচি হবে। মাতামাতি হবে। এটাই স্বাভাবিক। তবে সেটা যেন বাড়াবাড়ির পর্যায়ে না যায়। সেদিকটাও খেয়াল রাখা দরকার। মিডিয়ারও এখানে বড় একটা ভূমিকা আছে। বাংলাদেশের ক্রিকেট প্রেস কিন্তু সেই জায়গাটায় এখনো পরিমিতিবোধের পরিচয় দিয়েছে। তবে তাকে আগলে রাখার দায়িত্ব বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক এবং টিমম্যানেজমেন্টের। সেই কাজটায় মাশরাফি-মুশফিক-রা যথেষ্ট দক্ষতা এবং দায়িত্ব সচেতনতার পরিচয় দিচ্ছেন। কিছুটা প্রশংসা তাঁদেরও প্রাপ্য।চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম ইনিংসে মুস্তাফিজের চার বলে তিন উইকেট নেয়া নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে। অভিষেকে এরকম একটা পারফরম্যান্সের ঝলক যে কোনো বোলারের জন্য অনেকটা স্বপ্নের মতো। কিন্তু টেস্ট ক্রিকেট মানে বাস্তবের রুক্ষ জমিন। যেখানে প্রতি মুহূর্তে আপনার জন্য নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ এসে হাজির হয়। সেই চ্যালেঞ্জকে আপনি কিভাবে মোকাবেলা করছেন সেটাই বড় কথা। পারফরমরা জানেন রেকর্ড মানে অতীত। তাই বড় বড় পারফরমাররা অতীতমুখি হয়ে পড়ে থাকতে চান না। কারণ, তারা জানেন রেকর্ডের দুনিয়া যেমন সহজ ঠিক ততোটা নিষ্ঠুর। নির্মম। এবং নির্দয়। রেকর্ড শুধু বর্তমানকে মনে রাখে। আপনি যতোদিন রেকর্ডটাকে ধরে রেখে র্শীর্ষে থাকতে পারবেন ততোদিন আপনাকে মনে রাখা হবে। শৃঙ্গ থেকে গড়িয়ে গেলে আপনাকে কেউ আর মনে রাখবে না।আধুনিক যুগের মিডিয়া হয়তো ইন্টারনেট ঘেঁটে দেখতে চাইবে আগের রেকর্ডটা কার ছিল। এর বেশি কিছু নয়। তাই মুস্তাফিজের রেকর্ড-টেকর্ড নিয়ে এখনই মাতামাতি করার কিছু নেই। টেস্ট ক্রিকেটে মুস্তাফিজের আগেও ৩৭ বার চার বলে তিন উইকেট নেয়ার ঘটনা আছে। তবে হ্যা, বাংলাদেশের প্রথম বোলার হিসেবে লিলি-শাস্ত্রীদের সারিতে নিজেকে নিয়ে গেলেন মুস্তাফিজ। এটা তাঁর জন্য খানিকটা স্বস্তিদায়ক। কারণ, মুস্তাফিজ সেই বাংলাদেশ দলে খেলছেন যেখানে একটু ব্যর্থ হলেই ছুঁড়ে ফেলতে সময় লাগে না। ‘চলে না!’-ট্যাগ লাগিয়ে দিতে আরো কম সময় লাগে। সেরকম একটা দলে টেস্ট অভিষেকের ইনিংসে চার উইকেট নেয়া যে কোনো বোলারের জন্য স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলার মতো একটা জায়গা খুঁজে পাওয়া।লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক। তার উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ ‘ইনজুরি টাইম’ ‘এক্সট্রা টাইম’ ব্যাপক পাঠক প্রিয়তা পেয়েছে। তিনি কাজ করেছেন দেশের নেতৃস্থানীয় বিভিন্ন দৈনিকে, টেলিভিশন এবং দেশি-বিদেশি রেডিওতে।এইচআর/পিআর