দেশজুড়ে

মৌলভীবাজারে পানের বাজারে আগুন

ঐতিহ্যগতভাবে সিলেটে পানের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। পানের ব্যাপক চাহিদার পাশাপাশি এখানে প্রচুর পান উৎপাদন হয়। কিন্তু এই বছর পাতা পচা রোগ ও গোড়া পচা রোগে উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। মারাত্মকভাবে যার প্রভাব পড়েছে সিলেট অঞ্চলের পানের বাজারে। দাম বেড়েছে তিন থেকে চারগুন।

সিলেট বিভাগে পানের বাজারের বেশির ভাগ চাহিদা পূরণ করে খাসিয়া পান। বৃহত্তর সিলেটের ৭০টি খাসিয়া পানপুঞ্জির (গ্রাম) মধ্যে মৌলভীবাজারে ৬৫টি পুঞ্জি রয়েছে। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে পুঞ্জিগুলোতে পানের চাষ করা হয়। সিলেট বিভাগসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে খাসিয়া পানের চাহিদা ব্যাপক। লন্ডন, আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্যসহ অন্যান্য দেশেও চাহিদা আছে সিলেটের পানের। এ বছর পানের উৎপাদন কম হওয়ায় দাম বেড়েছে।

পান চাষ ব্যাহত হওয়ার কারণ জানতে খাসিয়া পুঞ্জিগুলো ঘুরে জানা যায়, সারা বছর পানের ফলন হলেও শুকনো মৌসুমে পান গাছে কম হয় প্রাকৃতিক নিয়মেই। এপ্রিল থেকে মে হচ্ছে পান উৎপাদনের প্রাথমিক সময়। তবে এই সময়ের পান ছোট ছোট আকারের হয়। জুন থেকে সেপ্টেম্বর হচ্ছে পান উৎপাদনের প্রধান সময়। এই সময়কে ঘিরেই উৎপাদনের হিসেব করা হয়।

বৃষ্টি পান চাষের জন্য উপকারী। গত বর্ষা মৌসুমে পানের বাম্পার চাষ হয়। তবে বর্ষা শেষে শীতের তীব্রতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পান উৎপাদন কমে আসে। এই বছরের শীতের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় পান চাষ ব্যাহত হয়। তার সঙ্গে দেখা দেয় পানের বিভিন্ন রোগ। এর মধ্যে পান পচা রোগ ও পান গাছের গোড়া পচা রোগ মারাত্মক আকার ধারণ করে। স্থানীয় ভাষায় এই দুটি রোগকে উতমার এবং উখ্লাম বলা হয়। এই দুটি রোগে সিলেট অঞ্চলে প্রায় ৩৫ থেকে ৪০ ভাগ পান নষ্ট হয়ে গেছে । শুকনো মৌসুম তার ওপর পান গাছের রোগ। এই দুই মিলে মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে পান উৎপাদন। যার ফলে লাগামহীন অবস্থা পানের বাজারে।

পানের পচন রোগ থেকে মুক্তি পেতে জেলা কৃষি অফিসের সহযোগিতায় বিভিন্ন ধরনের কীটনাশকসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেও এই রোগ থেকে মুক্তি মিলছে না। শ্রীমঙ্গল লাউয়াছড়া পানপুঞ্জির পান চাষিরা জানান, নতুন মৌসুম ছাড়া তারা পান চাষে পরিবর্তনের সম্ভাবনা দেখছেন না।

মৌলভীবাজারের পুটি ছড়া পানপুঞ্জির জনি আইগান জানান, পান কম উত্তোলন হওয়ায় পানের দাম বেড়ে গেছে। আগে দুই টাকায় এক গুছি (১২টি) পান পাওয়া যেত, এখন এক গুছি পানের দাম ৫০ থেকে ৭০ টাকা।

তিনি আরও জানান, প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠা একটি গাছ থেকে মাসে এক/দুই হাজার টাকার পান বিক্রি করার কথা থাকলেও তা সম্ভব হচ্ছে না। এতে করে পানের দাম হয়ে উঠেছে আকাশ ছোঁয়া। পান পাইকাররা বাজারে চাহিদা মত পান সরবরাহ দিতে পারছেন না। যা দিচ্ছেন তাও আবার চড়া দামে। বাজারে যেগুলো উঠছে সেগুলোর কদরও আগের চেয়ে অনেক বেশি।

সরেজমিনে মৌলভীবাজার শহরের পানের পাইকারী দোকান ও খুচরা বাজারে গিয়ে দেখা যায়, হঠাৎ করে পানের দাম কয়েকগুন বেড়েছে। স্থানীয় পানের বাজারগুলোতে বড় ধরনের যোগান বরিশালী পান। কিন্তু এক সপ্তাহ আগে যেখানে বরিশালী পান খুচরা বাজারে বিরা (৩৬ টি) প্রতি বিক্রি হত ৩০-৩৫ টাকায় সেখানে সাপ্তাহ ঘুরতেই এক লাফে কয়েকগুন দাম বেড়ে গেছে। বর্তমানে বরিশালী পান খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে বিরা প্রতি ১২৫-১৬০ টাকায়। দাম বাড়ার অজুহাতে সেখানে ৫ টাকার খিলি পান বিক্রি হচ্ছে ১০-১২ টাকায়।

শহরের পশ্চিমবাজারের খুচরা পান ব্যবসায়ী কৃষ্ণ দাশ জানান, পানের খেত নষ্ট হয়ে গেছে। যার কারণে পানের উৎপাদন কম থাকায় বাড়তি দামে পান বিক্রি করতে হচ্ছে।

লাউয়াছড়া খাসিয়া পুঞ্জির মন্ত্রী (হেডম্যান) ফিলা পন্মী জাগো নিউজকে জানান, পানের রোগ কেন আসে তা আজ পর্যন্ত আমরা আবিষ্কার করতে পারিনি তাই আগাম প্রস্তুতি নিতে পারিনি। আসছে মৌসুমের অপেক্ষা ছাড়া পান উৎপাদনে আর কিছু করার নেই।

আরএআর/পিআর