দেশজুড়ে

আজও নিজ ঘরে উঠতে পারেনি সেই পরিবারগুলো

অগ্নিকাণ্ডের এক বছরে পেরিয়ে গেলেও রাঙ্গামাটির লংগদু উপজেলার পাহাড়ে অবস্থিত তিনটি গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত মানুষগুলো আজও নিজ ঘরে উঠতে পারেনি। তবে তাদের জন্য ঘর নির্মাণের কাজ চলছে।

গত বছরের ১ জুন রাঙ্গামাটির লংগদু উপজেলার সদর ইউনিয়ন যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও মোটরসাইকেল চালক নুরুল ইসলাম নয়নকে খুন করেন দুর্বৃত্তরা। খাগড়াছড়ি-দীঘিনালা সড়কের চার মাইল এলাকা থেকে তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরদিন ২ জুন সকালে নয়নের জানাজা শেষে স্থানীয়দের অংশগ্রহণে বিক্ষোভ মিছিল বের হলে মিছিলের মধ্য থেকে স্থানীয় বাঙালিরা উপজেলার তিনটি পাহাড়ি গ্রামে অগ্নিসংযোগ করে। এতে প্রায় দু’শতাশিক পাহাড়ি পরিবারের বসত-ঘর পুড়ে যায়। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর এখনও নিজ ঘরে উঠতে পারেনি ক্ষতিগ্রস্ত সেই পরিবারগুলো।

অগ্নি দুর্গত পাহাড়ি পরিবারগুলো তাদের পরিজন নিয়ে বছরের কিছু সময় আশ্রয়কেন্দ্রে কাটালেও এখন অনেকে আছেন আত্মীয়-স্বজনের বাসা কিংবা টং ঘর তৈরি করে। ঘর-বাড়ি ছাড়া উদ্বাস্তু অবস্থায় দুর্ভোগে পাহাড়ি পল্লীর পরিবারগুলো গত বছরের বর্ষা ও শীতের মৌসুম কাটিয়েছে। এমনকি পাহাড়িদের বড় ধর্মীয় উৎসব বিজুতেও ছিল না কোনো আনন্দ আয়োজন এই পল্লীগুলোতে। সকলে ঘর-বাড়ি ছাড়া হওয়ায় পালন করেননি এই বড় উৎসবও।

এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর ক্ষতিগ্রস্ত ১৭৬টি পরিবারকে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর মাধ্যমে ঘর-বাড়ি করে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয় সরকার। এ প্রকল্পে পরপর দুই বার দরপত্র আহ্বান করার পরও দরপত্র জমা না পড়ায় ঘর-বাড়ি নির্মাণ কাজের বিলম্ব হয়। তবে তৃতীয়বার দরপত্র আহ্বানে দরপত্র জমা পড়ায় ঘর-বাড়ি নির্মাণের কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে।

ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো মধ্যে তিনটিলা গ্রামের বাসিন্দা বিত্র চাকমা নামে বলেন, সরকার যদি আরও আগেই আমাদের ঘর-বাড়ি নির্মাণ বাবদ টাকা দিয়ে দিতো তাহলে পুরো বছর জুড়ে ছেলে-মেয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে অসহায় অবস্থার মধ্যে দিয়ে আমাদের বাঁচতে হতো না।

তিনি বলেন, আমি টঙ ঘর তৈরি করে পরিবার নিয়ে বাস করছি। গরমের সময় প্রচুর গরম এবং বর্ষার সময় এই টঙ ঘরে বৃষ্টি পরে তাই পরিবারের সবাইকে নিয়ে বসে থাকতে হয় এমনকি গভীর রাতেও।

একই এলাকার আরেক বাসিন্দা প্রেমরঞ্জন চাকমা বলেন, গত বছরের এই দিনে আমার ঘর-বাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হয়েছিল। আমি ঘর-বাড়ি হারিয়ে কিছুদিন আশ্রয়কেন্দ্রে বাস করার পরে বর্তমানে ভাড়া বাসায় আছি।

তিনি আরও বলেন, সরকার বলে আমাদের ঘর তৈরি করে দিবেন। কখন এ ঘর পাবো জানি না। পুরো বছর জুড়ে অনেক কষ্টে দিন পার করতে হয়েছে আমাদেরকে।

লংগদু উপজেলা জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) সাধারণ সম্পাদক এবং ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে একজন মনি শংকর চাকমা বলেন, প্রশাসন থেকে বলা হচ্ছে চার মাসের মধ্যে ঘর-বাড়ি নির্মাণ করা হবে। তবে চার মাসে মনে হয় না সবগুলো ঘর নির্মাণ করা যাবে। কারণ সামনে বর্ষার মৌসুম আসছে। এর মধ্যে এখন হ্রদে পানি কম। বাত্যাপাড়া ও তিন টিলাতে গাড়িতে করে মালামাল নেয়া গেলেও মানিকজোড়ায় মালামাল নেয়া যাবে কি-না তা আমার সন্দেহ। তারপরও আমরা সরকারের কাছে কৃতজ্ঞ। সরকার আমাদের ঘর-বাড়ি করে দিচ্ছে।

লংগদু উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোসাদ্দেক মেহ্দী ইমাম বলেন, গত বুধবার (৩০ মে) ঘর-বাড়ি নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছে। এর মধ্যে ৬টি প্যাকেজে কাজ করছেন ঠিকাদাররা। যার সময় হিসাবে বেঁধে দেয়া হয়েছে চার মাস। আশা করছি এ সময়ের মধ্যেই ঘর-বাড়ি নির্মাণ হয়ে যাবে।

এমএএস/আরআইপি