দেশজুড়ে

‘ট্রেনে সতর্ক থাকুন নিরাপদে বাড়ি ফিরুন’

চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের কারণে যাত্রীদের জন্য বেশ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে ট্রেনযাত্রা। রেললাইনের পাশে গড়ে ওঠা বস্তি থেকে খেলার ছলে কিংবা দুর্বৃত্তরা এই পাথর নিক্ষেপ করে। এতে প্রায়ই যাত্রীদের পাশাপাশি আহত হচ্ছেন চালকও। রেল কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসনের নানা পদক্ষেপেও যখন কোনো সমাধান মিলছে না; তখন আসন্ন ঈদে ট্রেনযাত্রা নিরাপদ করতে জনসচেতনতা সৃষ্টিতে মাঠে নেমেছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের একটি সংগঠন।

বৃহস্পতিবার (০৭ জুন) দুপুরে চট্টগ্রামের বটতলি রেলস্টেশন এলাকায় এমন ব্যতিক্রমী প্রচারণায় অংশ নেন অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী। তিন দিনব্যাপী কর্মসূচিটি আয়োজন করে ‘ডি ইঞ্জিনিয়ার্স ক্লাব ওয়ার্ক' নামে চট্টগ্রামের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের সংগঠন।

সকাল থেকেই চট্টগ্রাম রেলস্টেশনে চট্টগ্রামের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আসতে শুরু করেন। অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী আসার পর কারও হাতে দেয়া হয় পোস্টার, কারও হাতে স্টিকার এবং অন্যদের হাতে সচেতনতামূলক বার্তা সম্বলিত কাগজ। কয়েকটি দলে ভাগ হয়ে দুপুরের দিকে শিক্ষার্থীরা কথা বলতে শুরু করেন চট্টগ্রাম রেলস্টেশনের ট্রেন যাত্রীদের সঙ্গে। আবার কেউ কেউ সাঁটাতে থাকেন স্টিকার ও পোস্টার। মাত্র এক ঘণ্টাতেই রেলস্টেশনের প্ল্যাটফর্ম, স্টেশন এলাকা ও বিভিন্ন ট্রেনের দেয়ালগুলো ভরে গেল সচেতনতামূলক বার্তায় ভরা পোস্টার-স্টিকারে।

বেশ কিছু সতর্কতামূলক বার্তা লেখা ছিল পোস্টার ও লিফলেটে। এর অন্যতম হলো ‘চলন্ত ট্রেনে বিশেষ কিছু স্থানে জানালা বন্ধ রাখা’, ‘চলন্ত ট্রেনে জানালা খুলে সেলফি না তোলা’, ‘নির্দেশনা না মেনে যখন-তখন ট্রেনের রাস্তা পারাপার থেকে বিরত থাকা’সহ নানান নির্দেশনা। এছাড়া ট্রেনে যাত্রাকালে করণীয় বিষয়ে মৌখিক প্রচারণা চালানো হয়।

তিন দিনের এ কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীরা আজ শুক্রবার নগরের ষোলশহর, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও হাটহাজারী এলাকার বিভিন্ন স্টেশন ও আশপাশের এলাকা এবং শনিবার (৯ জুন) চট্টগ্রাম থেকে ফেনী পর্যন্ত সকল স্টেশনে যাত্রী ও পথচারীদের মধ্যে লিফলেট বিতরণ এবং দেয়ালে পোস্টার ও স্টিকার লাগানোসহ তাদের মৌখিকভাবে ট্রেনে যাত্রাকালে করণীয়সমূহ প্রচার করবেন।

ক্লাবের প্রেসিডেন্ট সোমেন কাননগো জাগো নিউজকে বলেন, ‘খেলার ছলে শিশু-কিশোররা যেমন পাথর নিক্ষেপ করে, তেমনি নাশকতা সৃষ্টির মাধ্যমে সুবিধা নিতে দুর্বৃত্তরাও পাথর নিক্ষেপ করছে। এ অবস্থায় রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সহায়তায় পাথর নিক্ষেপের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলো চিহ্নিত করে আমরা প্রচারণা চালাচ্ছি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলেও আমরা নিজেরা সতর্ক হলে এমন দুর্ঘটনা ঠেকাতে পারি। এ উদ্দেশ্যেই আমাদের প্রচারণা। যাতে এবারের ঈদে কাউকে দুর্ঘটনার শিকার হতে না হয়।’

রেলওয়ের পূর্বাঞ্চল সূত্র জানায়, এ অঞ্চলে প্রতিদিন প্রায় আড়াই শ যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল করে। দীর্ঘ এই যাত্রাপথে অন্তত ২৬টি পয়েন্ট চিহ্নিত করা হয়েছে; যেখানে প্রতিনিয়ত পাথর নিক্ষেপের ঘটনা ঘটছে। এর মধ্যে রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের ১১টি পয়েন্ট চিহ্নিত করা হয়েছে; যেখানে চলন্ত ট্রেন লক্ষ্য করে প্রায়ই পাথর নিক্ষেপ করা হয়।

চট্টগ্রাম বিভাগের বিভাগীয় রেলওয়ে ম্যানেজার জাহাঙ্গীর হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের এ প্রচারণা প্রশংসা পাওয়ার দাবিদার। যাত্রীরা সচেতন হলে এমন দুর্ঘটনা অনেকাংশে কমে যাবে। যদিও দুর্ঘটনা ঠেকাতে জিআরপি ও আরপি তৎপর আছে, যেখানে পাথর নিক্ষেপের ঘটনা ঘটছে-সেখানেই তারা গিয়ে লোকজনদের বুঝিয়ে বলছেন যেন পরবর্তীতে আর কেউ পাথর নিক্ষেপ না করে। এজন্য মোটিভেশনাল স্পিচ দেয়া হয়েছে।’

উল্লেখ্য, ঈদুল ফিতরে ঈদের বিশেষ ট্রেনের যাত্রা শুরু হবে ১০ জুন।

এসআর/এমএস