দেশজুড়ে

পাহাড় ধসের আতঙ্কে আশ্রয়কেন্দ্রে শতাধিক পরিবার

গত বছরের মতো এবারও রাঙ্গামাটিতে পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটেছে। টানা বৃষ্টিতে নানিয়ারচর উপজেলায় সোমবার গভীর রাতে ও মঙ্গলবার সকালে পাহাড় ধসে ১১ জন নিহত হয়েছেন।

একই সঙ্গে বিভিন্ন সড়কে ধস ও ফাটল এবং গাছ উপড়ে পড়ায় রাঙ্গামাটিতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। আবারও পাহাড় ধসে পড়তে পারে এমন আশঙ্কা অনেকের। এ অবস্থায় খোলা হয়েছে ২১টি আশ্রয় ক্যাম্প। সেখানে আশ্রয় নিয়েছেন ১১০টি পরিবারের পাঁচ শতাধিক সদস্য।

এর আগে গত বছরের ১৩ জুন রাঙ্গামাটিতে ঘটে ভয়াবহ পাহাড় ধস। ওই সময় পাঁচ সেনা সদস্যসহ ১২০ জন নিহত হয়। সেই সঙ্গে ঘর-বাড়ি, রাস্তাঘাটের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। বছর ঘুরতে না ঘুরতে ফের মৃত্যুর মিছিল নামে পাহাড়ে।

গত শুক্রবার থেকে থেমে থেমে বৃষ্টি শুরু হলেও রোববার বাড়তে থাকে। সোমবার ও মঙ্গলবার টানা বৃষ্টিতে বিভিন্ন স্থানে পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটে। এতে ১১ জন নিহত হয়।

হাতিমারা পাড়ার বাসিন্দা জিয়ানা তালুকদার বলেন, সোমবার ভোরে পাড়ার রিপেনদের বাড়ির ওপর পাহাড় ধসে পড়ে। পরে রিপেন ও পাশের বাড়ির রীতা চাকমাকে মৃত উদ্ধার করা হয়। সেই সঙ্গে মনতলা এলাকা থেকে বৃষ কেতু চাকমাকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। এলাকার বিভিন্ন স্থানে এখনো ছোট-খাটো পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটছে। তাই আমরা ওই পাড়ার সবাইকে নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে এসেছি।

নানিয়ারচর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) কোয়ালিটি চাকমা বলেন, রাতে ভারি বর্ষণে পাহাড় ধসে বুড়িঘাট ইউনিয়নের চারজন, ধর্মচরণ ইউনিয়নে চারজন এবং ঘিলাছড়ি ইউনিয়নে তিনজন নিহত হয়েছেন। এছাড়া উপজেলার বিভিন্ন স্থানে পাহাড় ও সড়কের মাটি ধসে পড়েছে।

এদিকে, পাহাড় ধসের আতঙ্কে ঘর ছেড়ে বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছেন অনেকে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ১১০টি পরিবারের সদস্যরা আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছেন।

রুপনগর এলাকার বাসিন্দা সাকিব হোসেন বলেন, বিভিন্ন স্থানে পাহাড় ধস হচ্ছে। ভয়ে বাসা-বাড়িতে থাকতে পারছি না। তাই আমরা রুপনগর অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছি।

বাংলাদেশ টেলিভিশন ভবনে আশ্রয় নেয়া রাবেয়া আক্তার বলেন, টানা বৃষ্টিতে আমার বাড়ির পেছনের অংশ ভেঙে পড়েছে। ছেলে-মেয়ে নিয়ে এখানে আশ্রয় নিয়েছি। বাংলাদেশ টেলিভিশন ভবনে বর্তমানে ১১০টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক এ কে এম মামুনুর রশিদ বলেন, রাঙ্গামাটিতে গত কয়েক দিন ধরে অবিরাম বৃষ্টি হচ্ছে। গতকাল রাতে ভারি বর্ষণে পাহাড় ধসে ১১ জন নিহত হয়েছেন। তবে জেলার অন্য উপজেলায় পাহাড় ধস হলেও কারো নিহতের খবর পাওয়া যায়নি।

জেলা প্রশাসক এ কে এম মামুনুর রশিদ বলেন, রাঙ্গামাটি সদর উপজেলা ও পৌরসভা এলাকায় প্রায় ১৫-২০টি স্থানে পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটেছে। তবে কেউ হতাহত হয়নি। সবাইকে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিতে বলা হয়েছে। ২১টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। পাশাপাশি অস্থায়ীভাবে ৩০০টি তাঁবু টাঙানো হয়েছে। সেখানে যে কেউ আশ্রয় নিতে পারবেন বলেও জানান জেলা প্রশাসক।

এএম/এমএস