শ্রেণিকক্ষের ভেতরের দেয়ালে আঁকা আছে সুন্দর ও শিক্ষামূলক নানা ধরনের ছবি। বাইরে মনোমুগ্ধকর আলপনা। ‘শিশুস্বর্গ’ নামে একটি কক্ষও রয়েছে। এখানে শিশুরা খেলার ছলে লেখাপড়া করছে। কেউ আবার গানের তালে সুর মেলাচ্ছে। কেউবা সুরের ছন্দে কবিতা মুখস্থ করছে। তারা মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে পরিচিত হচ্ছে। শিক্ষকরাও পরম মমতায় পড়াচ্ছেন। আনন্দঘন এমন পরিবেশে ঝালকাঠি শহরের কুতুবনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান চলছে। জেলাজুড়ে বিদ্যালয়টি আনন্দের এক রঙিন ফুল হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
জানা যায়, ১৯৩১ সালে প্রতিষ্ঠা হয় ঝালকাঠি শহরের প্রবেশ পথে বাসস্ট্যান্ড থেকে একটু সামনে আগালেই কুতুবনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। শহরতলীর বিদ্যালয়টি জেলার সুনাম বয়ে এনেছে বেশ কয়েকবার। লেখাপড়ায় বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা প্রশংসা অর্জন করেছে। রয়েছে সুসজ্জিত প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণিকক্ষ, মহানুভবতার দেয়াল, মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ স্মৃতি জাদুঘর। বিদ্যালয়টি শিক্ষা ছাড়াও ক্রীড়া, সাহিত্য, সংস্কৃতিসহ বহুমুখী শিক্ষা কার্যক্রমেও সফলতা পেয়েছে।
শ্রেণিকক্ষগুলোর নামকরণ করা হয়েছে কবি-সাহিত্যিকদের নামে। সেখানে তাদের ছবির সঙ্গে সংক্ষিপ্ত জীবনবৃত্তান্ত লেখা আছে। বিদ্যালয়ের ৩০০ শিক্ষার্থী আনন্দে পড়ালেখা করছে। শিক্ষকরাও সন্তানের স্নেহে পড়াচ্ছেন শিক্ষার্থীদের। তাই প্রতিদিনের উপস্থিতিও শতভাগ। শিক্ষকদের অক্লান্ত পরিশ্রমে এগিয়ে যাওয়া এই বিদ্যালয়টি জেলার একটি মডেল হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
অভিভাবকরা জানান, এটি জেলার প্রাচীন একটি বিদ্যালয়। এখানের শিক্ষকরা ভীষণ দক্ষ। প্রতিটি শিশুকে স্নেহ-মমতা দিয়ে তারা পড়ান।
শিক্ষার্থীরা বলে, সকালে বিদ্যালয়ে আসার পরে আনন্দে পড়ালেখা করে সময় কেটে যায়। শিক্ষকরা আমাদের খুব ভালোবাসেন। আমাদের বিদ্যালয়ের সব শ্রেণিকক্ষ সাজানো-গোছানো। আমরা গানের মাধ্যমে কবিতা শিখছি, খেলার ছলে পড়া শিখছি। পড়ালেখার পাশাপাশি আমরা মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে গিয়ে সময় কাটাই। আমাদের খেলার জন্যও একটি কক্ষ সাজানো রয়েছে।
বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক বলেন, আমাদের বিদ্যালয়ে সহশিক্ষা কার্যক্রম জোরদার করাতে শিক্ষার মান বৃদ্ধি পেয়েছে। আমাদের বিদ্যালয়ের পড়ালেখার মান ভালো থাকায় অভিভাবকরা তাদের সন্তানকে আগ্রহ নিয়ে ভর্তি করছেন। পাশের গ্রামের শিক্ষার্থীরা এখানে পড়ছে। আমাদের প্রধান শিক্ষকের অক্লান্ত পরিশ্রমের কারণে বিদ্যালয়টি সুন্দর ও মনোরম পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাহানারা সুলতানা বলেন, আমরা স্বপ্ন দেখেছি এমন একটি বিদ্যালয়ের, যেখানে শিশুরা আনন্দের সঙ্গে শিখবে। বিদ্যালয়টি হবে সজ্জিত, ঠিক যেন স্বর্গের মতো। আমাদের সে স্বপ্ন বাস্তবায়ন হয়েছে। দক্ষ শিক্ষক, অভিভাবক ও কমিটির সহযোগিতায় আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। আমাদের বিদ্যালয়ের শিশুস্বর্গটি, সত্যিকারের স্বর্গের মতোই সাজানো হয়েছে। এখানে পড়তে এসে ওরা বিন্দুমাত্রও আতঙ্কের মধ্যে থাকে না। আনন্দে সঙ্গে ওদের পাঠদান করা হয়।
ঝালকাঠি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ ছাইয়াদুজ্জামান বলেন, কুতুবনগরের শিশুরা বিদ্যালয়ে আনন্দে পড়বে, আলোকিত মানুষ হয়ে আলো ছড়াবে সবখানে। কারণ ওদের লেখাপড়ার মান যেমন ভালো, তেমনি বিদ্যালয়ের পরিবেশও মানসম্মত। প্রধান শিক্ষক একজন গুণী মানুষ। তার প্রচেষ্টায় একটি সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। তাই শিক্ষার্থীরাও আনন্দে লেখাপড়া করছে। কীর্ত্তিপাশা স্কুলটি জেলার একটি দৃষ্টান্ত।
মো. আতিকুর রহমান/আরএ/আরআইপি