দেশজুড়ে

মাশরাফির প্রতিদ্বন্দ্বী কী মনিরুল?

নড়াইল-২ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে নিশ্চিত মনোনয়ন পাচ্ছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। দল থেকে এ নিয়ে ইঙ্গিতও পেয়েছেন মাশরাফি।

নড়াইল থেকে মাশরাফির মনোনয়ন নিশ্চিতের খবর শুনে তার সঙ্গে এই আসন থেকে কে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী হচ্ছেন তার দিকে তাকিয়ে আছেন এলাকাবাসী।

তবে আনুষ্ঠানিকভাবে চূড়ান্ত প্রার্থী ঘোষণা করেনি আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। দলের মনোনয়ন কেনার পর প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার ও যাচাই-বাছাই চলছে দলীয়ভাবে।

এ মুহূর্তে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন ক্রিকেট তারকা মাশরাফি। নড়াইল-২ আসন থেকেই তাকে মনোনয়ন দেয়া হচ্ছে। বিশেষ করে কয়েকদিন ধরে বিভিন্ন গণমাধ্যম ও ফেসবুকে মাশরাফির প্রার্থিতা নিয়ে বিভিন্ন ধরনের লেখালেখি এবং মন্তব্য করায় সবার মাঝে এ বিষয়ে কৌতূহল সৃষ্টি হয়।

কিন্তু এ ব্যাপারে মাশরাফি বা তার পরিবারের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। এমনকি আওয়ামী লীগের জেলা পর্যায়ের কোনো নেতাও এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি। তবে সবকিছু ছাপিয়ে ক্রিকেট মাঠের ‘নড়াইল এক্সপ্রেস’র চেয়ে আলোচনার তুঙ্গে আছেন ‘রাজনীতি মাঠের’ মাশরাফি বিন মর্তুজা।

আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে মাশরাফির প্রার্থিতার বিষয়ে চূড়ান্ত ঘোষণা না হলেও ইতোমধ্যে তার পক্ষে নড়াইলে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা শুরু করেছেন ভক্তসহ দলীয় নেতাকর্মীরা।

পাশাপাশি নড়াইল-২ আসনে কে হচ্ছেন মাশরাফির প্রতিদ্বন্দ্বী? এ নিয়ে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা ও আলোচনা। বিশেষ করে ২০ দলীয় জোট তথা ঐক্যফ্রন্টের মনোনীত প্রার্থী কে হচ্ছেন তা নিয়ে চলছে তুমুল আলোচনা।

এরই মধ্যে মাশরাফির সঙ্গে লড়তে নড়াইল-২ আসনে বিএনপির মনোনয়ন কিনেছেন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম, জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি তবিবুর রহমান মনু জমাদ্দার, জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক শাহরিয়ার রিজভী জর্জ, সাবেক এমপি মরহুম শরীফ খসরুজ্জামানের ছেলে মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্মের দলের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম-সম্পাদক শরীফ কাসাফুদ্দোজা কাফী, ডক্টর অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যাপক ডা. সেখ মোহাম্মাদ আখতার-উজ-জামান, জেলা বিএনপির যুগ্ম-সম্পাদক খন্দকার ইজাজুল হাসান বাবু ও শাহরিয়ার আলম। তবে মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে আছেন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম।

জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শাহরিয়ার রিজভী জর্জ বলেন, দলীয় মনোনয়ন কিনেছি। তরুণ প্রার্থী হিসেবে নড়াইল-২ আসন থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশা করছি।

বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী শরীফ কাসাফুদ্দোজা কাফী বলেন, দলীয় মনোনয়নের ব্যাপারে আশাবাদী। এ ব্যাপারে সোমবার সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠিত হয়েছে। মাশরাফির প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী কে হচ্ছেন তা দেখতে আরও অপেক্ষা করতে হবে।

বিএনপি নেতা মনিরুল ইসলাম বলেন, এবারের নির্বাচনে জোট থেকে মনোনয়ন না দিয়ে বিএনপি থেকে মনোনয়ন দেয়ার প্রত্যাশা করছি। নড়াইলে বিএনপি শক্তিশালী অবস্থানে থাকা সত্ত্বেও ২০০১ সালে জোট থেকে মনোনয়ন দেয়ায় আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। তাই এবার নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়ার দাবি জানাই। আশা করি, আমি মনোনয়ন পাব।

এদিকে, নড়াইল-২ আসনে মাশরাফির সঙ্গে লড়তে আওয়ামী লীগের ১৭ জন মনোনয়ন কিনেছেন। এরা হলেন- আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় যুব ও ক্রীড়া উপ-কমিটির সদস্য শিল্পপতি শেখ আমিনুর রহমান হিমু, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট সুবাস চন্দ্র বোস, সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন খান নিলু, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি স্বেচ্ছাসেবক লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শেখ নূরুজ্জামান, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সৈয়দ আইয়ূব আলী, এসএম আসিফুর রহমান বাপ্পি, সাবেক সংসদ সদস্য এস কে আবু বাকের, শিল্পপতি বাসুদেব ব্যানার্জি, লোহাগড়া আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা লে. কর্নেল সৈয়দ হাসান ইকবাল, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য হাসানুজ্জামান, রাশিদুল বাসার ডলার, অ্যাডভোকেট শেখ তরিকুল ইসলাম, যুব মহিলা লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক শারমিন সুলতানা শর্মী, ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর আওয়ামী লীগ নেতা মুন্সী কামরুজ্জামান কাজল, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রনেতা হাবিবুর রহমান তাপস ও সুজন রহমান।

এছাড়া এই আসন থেকে মহাজোটের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির জেলা সভাপতি বর্তমান সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট শেখ হাফিজুর রহমান ও জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি অ্যাডভোকেট ফায়েকুজ্জামান ফিরোজ দলীয় মনোনয়ন কিনেছেন।

এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগ নেতা শেখ আমিনুর রহমান হিমু বলেন, দলীয় মনোনয়ন কিনেছি। তবে মনোনয়ন কাকে দেবেন বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী ভালো জানেন। সামর্থ্য অনুযায়ী আমি নড়াইলবাসীর জন্য সবসময় কাজ করে যাব।

জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট সুবাস চন্দ্র বোস বলেন, দল যাকে মনোনয়ন দেবে তার পক্ষেই আমরা কাজ করব।

স্বেচ্ছাসেবক লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শেখ নূরুজ্জামান বলেন, নড়াইল-২ আসনে মনোনয়ন কিনেছি। দলীয় প্রধান জননেত্রী শেখ হাসিনা যাকে মনোনয়ন চূড়ান্ত করবেন, তার জন্য নির্বাচনী মাঠে নামব।

জাপা নেতা ফায়েকুজ্জামান ফিরোজ বলেন, রাজনীতির মাঠে নির্বাচনী প্রস্তুতি রয়েছে আমার। নড়াইল-২ আসনে রাজনৈতিক নেতারাই দলীয় মনোনয়ন পাবেন- এমনটি প্রত্যাশা করছি।

এদিকে, আওয়ামী লীগের মনোনয়ন কেনার পর মাশরাফি ভক্তসহ দলীয় নেতাকর্মীরা তার পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেছেন। আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও যুব মহিলা লীগের আয়োজনে শনিবার বিকেলে নড়াইল সদর উপজেলার বেনাহাটি গ্রামে মাশরাফির জন্য ভোট চেয়ে উঠান বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে বক্তারা বলেন, মাশরাফি দলীয় মনোনয়ন কিনেছেন। আশা করছি প্রধানমন্ত্রী মাশরাফিকে নড়াইল-২ আসনে আওয়ামী লীগের চূড়ান্ত প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দেবেন। আপনারা তাকে ভোট দেবেন।

হাফিজুল নিলু/এএম/এমএস