মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গণের সাহসী সন্তান বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখ ১৯৩৬ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি নড়াইল সদর উপজেলার প্রতন্ত অঞ্চল মহিষখোলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালের ৫ সেপ্টেম্বর যশোরের গোয়ালহাটি ও ছুটিপুরে পাকবাহিনীর সঙ্গে সম্মুখ যুদ্ধে মৃতুবরণ করেন তিনি।
যশোরের শার্শা উপজেলার কাশিপুর গ্রামে তাকে সমাহিত করা হয়। মুক্তিযুদ্ধে বীরোচিত ভূমিকা ও আত্মত্যাগের স্বীকৃতিস্বরূপ তাকে ‘বীরশ্রেষ্ঠ’ খেতাবে ভূষিত করা হয়। আগামীকাল ২৬ ফেব্রুয়ারি বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখের ৮৩তম জন্মবার্ষিকী। জেলা প্রশাসন ও বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ ট্রাস্টের উদ্যোগে নানা কর্মসূচির মধ্যদিয়ে এদিন বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ শেখের ৮৩তম জন্মবার্ষিকী পালিত হবে। এদিকে জাতির এ শ্রেষ্ঠ সন্তানের সম্মানে প্রতন্ত গ্রামে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ করা হয়েছে। ২০০৮ সালে ‘মহিষখোলা’র নাম পরিবর্তন করে ‘নূর মোহাম্মদ নগর’ করা হয়। নির্মাণ করা হয়েছে গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর। সেই থেকে উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে নূর মোহাম্মদ নগরে। নড়াইলে ‘বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ নগর’ এখন প্রায় শহরে রুপ নিয়েছে। শহরের সব সুযোগ সুবিধাই পাচ্ছে এলাকার সাধারণ মানুষ।
এলাকাবাসী জানান, কয়েক বছর আগে এলাকায় বিদুৎ ছিল না, রাস্তা-ঘাট ছিল মাটির, বর্ষার সময় চলাচল করা যেত না। এখানে কোনো স্কুল কলেজ না থাকায় ১০ কিলোমিটার দূরে নড়াইল শহরের স্কুল, কলেজে পড়াশুনা করতে হতো ছেলে-মেয়েদের। ২০০৮ সালে ‘মহিষখোলা’ থেকে ‘নূর মোহাম্মদ নগর’ নাম পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগতে শুরু করে এ এলাকায়। এর পরেই এলাকার ঘরে ঘরে পৌঁছেছে বিদুৎ। গ্রামের কাচা রাস্তাগুলোও পাকা করা হয়েছে। তার স্মৃতি রক্ষার্থে নির্মাণ করা হয়েছে গ্রন্থাগার ও জাদুঘর, স্মৃতিস্তম্ভ, ক্লাব ও পাঠাগার।
বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ শেখের আত্মীয় মো. মশিয়ার রহমান জানান, বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ শেখ গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘরে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের বই-পুস্তক ও পত্রিকা। জ্ঞান অর্জনের ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করছে লাইব্রেরিটি।
এদিকে, নূর মোহাম্মদের বসতভিটায় স্মৃতিস্তম্ভের পাশে একটি বিশ্রামাগার নির্মাণের দাবি করেছেন নূর মোহাম্মদের নাতি রাজু আহম্মেদসহ এলাকাবাসী।
বাবা মোহাম্মদ আমানত শেখ ও মা জেন্নাতুন্নেছা। মতান্তরে জেন্নাতা খানম। বাল্যকালেই বাবা-মাকে হারান জাতির এই শ্রেষ্ঠ সন্তান। লেখাপড়া করেছেন সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত। তবে, মতান্তর রয়েছে। ১৯৫৯ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি পূর্ব পাকিস্তান রাইফেলসে (ইপিআর, বর্তমানে বর্ডার গার্ড অব বাংলাদেশ-বিজিবি) যোগদান করেন।
দিনাজপুর সীমান্তে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করে ১৯৭০ সালের ১০ জুলাই বদলি হন যশোর সেক্টরে। পরবর্তীতে তিনি ল্যান্স নায়েক পদোন্নতি পান। মুক্তিযুদ্ধের সময় যশোর অঞ্চল নিয়ে গঠিত ৮নং সেক্টরে অংশগ্রহণ করে যুদ্ধ করেন। যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে ক্যাপ্টেন নাজমুল হুদার নেতৃত্বে যশোরের শার্শা উপজেলার কাশিপুর সীমান্তের বয়রা অঞ্চলে পাক হানাদারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন নড়াইলের এ সাহসী সন্তান (নূর মোহাম্মদ)।
এ সময় এপ্রিল থেকে আগস্ট পর্যন্ত ৮নং সেক্টর কমান্ডার ছিলেন কর্নেল (অব) আবু ওসমান চৌধুরী এবং সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত কমান্ডার ছিলেন মেজর এস এ মঞ্জুর। এদের নেতৃত্বে প্রাণ-পণ লড়েছেন নূর মোহাম্মদ। ৫ সেপ্টেম্বর পাকবাহিনীর গুলিতে সহযোদ্ধা নান্নু মিয়া গুরুতর আহত হলেও সহযোদ্ধাকে কাঁধে নিয়েই এলএমজি হাতে শত্রুপক্ষের সঙ্গে যুদ্ধ করেছেন। গুলি ছুঁড়েছেন। হঠাৎ করে পাকবাহিনীর মর্টারের আঘাতে নূর মোহাম্মদের হাঁটু ভেঙ্গে যায়। তবুও গুলি চালান। শক্রমুক্ত করার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যান এই সাহসী সন্তান। জেলা প্রশাসক আনজুমান আরা জানান, বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ শেখের স্মৃতি রক্ষার্থে এলাকাটিতে ব্যাপক উন্নয়ন করা হয়েছে, আগামীতে আরও উন্নয়নের পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। কলেজটি জাতীয়করণের জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে।
হাফিজুল নিলু/এমএএস/এমএস