দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (হাবিপ্রবি) দুই ছাত্রলীগ কর্মীকে গুলি করে হত্যার চার বছর পেরিয়ে গেল গত ১৬ এপ্রিল মঙ্গলবার। এ ঘটনায় দায়ের করা তিনটি মামলার একটিও আলোর মুখ দেখেনি।
গত চার বছরে অগ্রগতি বলতে ১৫ বার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন হয়ে এখন সিআইডিতে। পরিবারগুলোর খবরও রাখে না কেউ। মামলার বাদীরাও জানাতে পারেনি আগামী তারিখ কবে রয়েছে। তারা এ মামলার বিচার ভার ছেড়ে দিয়েছেন আল্লাহর ওপর।
২০১৫ সালের ১৬ এপ্রিল ভেটেরিনারি অনুষদের নবীন বরণ অনুষ্ঠানে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের একাংশের সঙ্গে ছাত্রলীগের অন্য অংশের সংর্ঘষ চলাকালে গুলিতে বিবিএ দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র জাকারিয়া ও কৃষি বিভাগের ছাত্র মাহমুদুল হাসান মিল্টন নিহত হন। এ ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে অজ্ঞাতনামা ৫০/৬০ জনকে আসামি করে একটি ও দুই পরিবারের পক্ষ থেকে কোর্টে দুটি মামলা দায়ের করা হয়।
দুই মামলায় হাবিপ্রবির সাবেক ভিসি প্রফেসর রুহুল আমিন, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আবু ইবনে রজব, কোতোয়ালি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিত ঘোষ কাঞ্চন, হাবিপ্রবির সাবেক প্রক্টর এটিএম শফিকুল ইসলাম, সার্জারি বিভাগের চেয়ারম্যান ফজলুল হক, কৃষি বনায়ন বিভাগের চেয়ারম্যান হাফিজ আল আমিন পলাশ, ছাত্র উপদেষ্টা শাহাদৎ হোসেন খান লিখন ও ভিসির ড্রাইভার জাহাঙ্গীর আলম এবং ১৮ জন ছাত্রসহ ৩৭ জনের নাম দিয়ে অজ্ঞাত আরও ২৫ জনকে আসামি করা হয়।
এরপর ঘটনার চার বছর পরও খুনিদের বিচারের আওতায় আনতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ১৫ বার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তনের পরও কোনো কূল-কিনারা করতে পারেনি কোতোয়ালি থানা- পুলিশ। অবশেষে আদালতের এক আদেশে এ বছরের মার্চে মামলাটি পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডিতে) স্থানান্তরিত করা হয়েছে।
মামলার বর্তমান তদন্ত কর্মকর্তা দিনাজপুর সিআইডির ইন্সপেক্টর রমজান আলী বলেন, মামলাটি ২০ থেকে ২৫ দিন আগে আমার হাতে এসেছে। তদন্তও ইতোমধ্যে শুরু করেছি।
এদিকে গত চার বছরেও হত্যার বিচার না পেয়ে হতাশ নিহত ওই দুই ছাত্রের পরিবার। বিচারের আশা অনেকটা ছেড়েই দিয়েছেন তারা। তবে হত্যাকারীদের ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরির বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তারা।
নিহতদের পরিবারের অভিযোগ, মামলার আসামিরা দাপটের সঙ্গে ঘুরে বেড়াচ্ছে। রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডেও অংশ নিচ্ছেন। তাদের বিরুদ্ধে পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নেয় না। এ কারণে আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে বলে জানান, নিহতদের পরিবার এবং ওই হত্যা মামলার সাক্ষীরা।
নিহত মিল্টনের মা রেবেকা সুলতানা জাগো নিউজকে বলেন, ছেলে খুনের বিচার আজও পেলাম না। ছেলে ছিল আমার একমাত্র ভরসা। ওকে পড়ালেখা করাতে গিয়ে জমিজমা বিক্রি করেছি। ভেবেছিলাম ও চাকরি করে আমাদের মুখে হাসি ফোটাবে। কিন্তু আমার ছেলেটাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে খুন করলো। কিন্তু কোনো বিচার পেলাম না।
নিহত জাকারিয়ার বাবা গোলাম মোস্তফা বলেন, খুনিরা দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছে। তারা শহরের চেনা মুখ। আমাদের ভয় দেখায় সব সময়। অথচ ওদের আটক করে না পুলিশ। তাদের ভয়ে আমার মেয়ে ঠিকমতো কলেজে যেতে পারে না। আমি ছেলে হত্যার বিচার তো পেলামই না, বরং দিনাজপুর শহরে আমাকে এখন ৪১ জন শত্রু নিয়ে চলাফেরা করতে হয়।
এ বিষয়ে ছাত্রলীগের একাধিক নেতা ও ওই ঘটনায় আহত হয়ে পঙ্গু হয়ে যাওয়া কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করলেও তারা নিরাপত্তার অভাবে কেউ কথা বলে রাজি হননি।
এমএএস/জেআইএম