খেলাধুলা

যে দশ কিংবদন্তি কখনও বিশ্বকাপ জিততে পারেননি

বিশ্বকাপ, এ যেন এক স্বপ্নের নাম। কারো কারো কাছে পৃথিবীর সবচেয়ে আরাধ্য বস্তু সোনালি সেই ট্রফিটা। আশা আর হতাশার মিশেল যেই শিরোপায়। প্রবল ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও কেউ কেউ ছুঁয়ে দেখতে পারেন না সেই ট্রফি। স্বপ্নের সেই বিশ্বকাপ না ছুঁয়েও কেউ কেউ হয়ে উঠেন কিংবদন্তি। তবুও তাদের সোনালি সেই ট্রফি ছোঁয়ার আক্ষেপ দূর হয় না নিশ্চয়ই। কখনও বিশ্বকাপ না জিতেও কিংবদন্তি হওয়া দশ ক্রিকেটারকে বাছাই করেছে আইসিসি। কারা সেই দশ ক্রিকেটার? চলুন দেখে নেওয়া যাক।

১. গ্রাহাম গুচ : ইংল্যান্ডইংল্যান্ডের সাবেক এই কিংবদন্তি ক্রিকেটার খেলেছেন তিন বিশ্বকাপের ফাইনাল। যার মধ্যে ১৯৯২ সালের বিশ্বকাপে ছিলেন দলের অধিনায়ক। ১৯৮৭ সালের বিশ্বকাপে মুম্বাইয়ে ভারতের বিপক্ষে তার সেই ঐতিহাসিক সেঞ্চুরি ইংলিশদের বিশ্বকাপ ইতিহাসেরই অন্যতম সেরা ইনিংস। আর ১৯৭৯ সালের বিশ্বকাপ ফাইনালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে হেরে যায় ইংল্যান্ড। লিস্ট 'এ' ক্রিকেটে সর্ব্বোচ্চ ২২,২১১ রানের রেকর্ডও গুচের দখলে।

২. ইয়ান বোথাম : ইংল্যান্ডক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা এই অলরাউন্ডার খেলেছেন দুই বিশ্বকাপের ফাইনাল (১৯৭৯ ও ১৯৯২)। ১৯৯২ সালের বিশ্বকাপে তার ১০ ম্যাচে ১৬ উইকেটের সঙ্গে শেষ দিকের ঝড়ো ব্যাটিং ইংল্যান্ডকে তুলে আসরের ফাইনালে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ফাইনালে গিয়ে হেরে যেতে হয় পাকিস্তানের কাছে। শিরোপা ছাড়াই ক্যারিয়ার শেষ করতে হয় কিংবদন্তি স্যার ইয়ান বোথামকে।

৩. ওয়াকার ইউনুস : পাকিস্তানইনজুরির কারণে পাকিস্তানের ১৯৯২ সালের বিশ্বকাপজয়ী দলে ছিলেন না পাকিস্তানের সাবেক এই তারকা পেস বোলার। বিরানব্বইয়ের সেই আসরে সবচেয়ে বেশি ১৮ উইকেট শিকার করেন তার সতীর্থ বোলার ওয়াসিম আকরাম। তবে ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপে দলে থাকলেও ফাইনালে উঠে তার দলে হেরে যায় অস্ট্রেলিয়ার কাছে। ওয়ানডে ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি বার ৫ উইকেট নেওয়ার কৃতিত্বও ওয়াকারের দখলে।

৪. সৌরভ গাঙ্গুলি : ভারতভারতের ক্রিকেটকে বদলে দেওয়া এই অধিনায়ক বিশ্বকাপ খেলেছেন তিনটি। যার মধ্যে ২০০৩ বিশ্বকাপে ছিলেন দলের অধিনায়ক। সেবার ফাইনালেও উঠে তার দল। ব্যক্তিগতভাবেও দারুণ খেলেন সৌরভ। সেই আসরে তুলে নেন তিন সেঞ্চুরি। কিন্তু ফাইনালে গিয়ে হারতে হয় অস্ট্রেলিয়ার কাছে। বিশ্বকাপে সর্বমোট ২২ ম্যাচ খেলে ৫৫.৮৮ গড়ে তিনি করেন ১০০৬ রান। তবুও বিশ্বকাপ শিরোপা ছাড়াই ক্রিকেটকে বিদায় বলতে হয় এই কিংবদন্তিকে।

৫. ব্রায়ান লারা : ওয়েস্ট ইন্ডিজইতিহাসের যে অল্প কয়েকজন ক্রিকেটার ওয়ানডেতে ১০ হাজার রান করেছেন তিনি তাদের মধ্যে অন্যতম। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে তিনবার ১৫০ রানের ইনিংস খেলা ব্যাটসম্যানদের ছোট্ট তালিকায়ও আছে তার নাম। তবুও কখনও বিশ্বকাপ জিততে পারেননি ক্যারিবীয় এই ব্যাটিং কিংবদন্তি।

৬. ল্যান্স ক্লুজনার : দক্ষিণ আফ্রিকা ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপে সেমিফাইনাল থেকেই বিদায় নেয় দক্ষিণ আফ্রিকা। কিন্তু অসাধারণ অলরাউন্ডার নৈপূণ্যের জন্য টুর্ণামেন্ট সেরার পুরস্কার জিতেন ক্লুজনার। ব্যাটিংয়ে ৪১ ও বোলিংয়ে ২৯ গড়ে ক্যারিয়ার শেষ করেন প্রোটিয়া এই কিংবদন্তি। ইতিহাসের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার হয়েও কখনও ছুঁয়ে দেখতে পারেননি বিশ্বকাপের সোনালি ট্রফিটি।

৭. জ্যাক ক্যালিস : দক্ষিণ আফ্রিকাওয়ানডে ইতিহাসে একই সঙ্গে ১০ হাজার রান ও ২৫০ উইকেট আছে মাত্র দুইজন ক্রিকেটারের। তার মধ্যে একজন দক্ষিণ আফ্রিকার কিংবদন্তি ক্রিকেটার জ্যাক ক্যালিস। তবে তিনিও কখনও জিততে পারেননি বিশ্বকাপ ট্রফি।ওয়ানডেতে ১৭ সেঞ্চুরি ও ৮৬ ফিফটিতে ১১ হাজারের বেশি রান ও ২৭৩ উইকেট নিয়েও ক্যালিসকে অবসর নিতে হয়েছে বিশ্বকাপ না জেতার আক্ষেপ নিয়ে।

৮. কুমার সাঙ্গাকারা : শ্রীলঙ্কাকুমার সাঙ্গাকারার শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণে ২০১৫ সালের বিশ্বকাপই যথেষ্ট। নিজের শেষ বিশ্বকাপে হাঁকিয়েছেন টানা চার সেঞ্চুরি। নিজের ওয়ানডে ক্যারিয়ার যখন শেষ করেছেন তখন তার চেয়ে বেশি রান কেবল শচিন টেন্ডুলকারের। ২০০৭ ও ২০১১ সালের বিশ্বকাপের ফাইনালে খেললেও বিশ্বকাপের শিরোপা ছুঁয়ে দেখা হয়নি লঙ্কান এই কিংবদন্তি উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যানের।

৯. এবি ডি ভিলিয়ার্স : দক্ষিণ আফ্রিকাএকদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ৫৩.৫০ গড় ও ১০০ এর বেশি স্ট্রাইক রেট। ৩১ বলে হাঁকিয়েছেন ওয়ানডে ইতিহাসের সবচেয়ে দ্রুততম শতক। এসব পরিসংখ্যান ডি ভিলিয়ার্সের ব্যাটিং মাহাত্ম্য বুঝানোর জন্য যথেষ্ট। প্রোটিয়া এই কিংবদন্তিরও কখনও ছুঁয়ে দেখা হয়নি বিশ্বকাপের সোনালি ট্রফি।

১০. শহীদ আফ্রিদি : পাকিস্তানওয়ানডে ইতিহাসে পঞ্চম সর্ব্বোচ্চ উইকেটের মালিক। তার গড়া ৩৭ বলে সেঞ্চুরি ওয়ানডে ইতিহাসের দ্রুততম হিসেবে টিকে ছিল অনেকদিন। তবুও আফ্রিদি নিজের ক্যারিয়ার শেষ করেছেন বিশ্বকাপ না জেতার আক্ষেপ নিয়ে।

এমএইচবি/এমএমআর/জেআইএম