দেশজুড়ে

কুসুম্বা মসজিদে দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড়

মুসলিম স্থাপত্যের এক অপূর্ব নিদর্শন নওগাঁর কুসুম্বা মসজিদ। ঈদের দিন দুপুরের পর থেকে এখানে দর্শনার্থীদের আনাগোনা শুরু হয়। দুপুর থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত ছিল উপচে পড়া ভিড়। দর্শনার্থীদের আগমনকে ঘিরে প্রশাসন ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। তবে খাবারের ভালো হোটেল (ক্যান্টিন) ও আবাসিক কোনো ব্যবস্থা না থাকায় অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয় বলে জানিয়েছেন দর্শনার্থীরা।

জানা যায়, নওগাঁ জেলা শহর থেকে প্রায় ৩৩ কিলোমিটার দূরে মান্দা উপজেলার নওগাঁ-রাজশাহী মহাসড়কের পাশে অবস্থিত এই মসজিদ। পাঁচ টাকার কাগজের নোটে মুদ্রিত এ মসজিদটি স্থান পেয়েছে। ১৫৫৮ খ্রিস্টাব্দে সুলতান গিয়াস উদ্দিন বাহাদুর শাহের রাজত্বকালে সুলতান সোলায়মান নামে এক ব্যক্তি মসজিদটি নির্মাণ করেন। যার দৈর্ঘ্য প্রায় ৬০ ফুট ৬ ইঞ্চি এবং প্রস্থ প্রায় ৪৪ ফুট ৬ ইঞ্চি। ছয় গম্বুজ বিশিষ্ট মূল্যবান কালো পাথর দিয়ে নির্মিত এই মসজিদটি প্রায় ৪৬১ বছরের ইতিহাস বহন করে। গম্বুজগুলো পিলারের ওপর স্থাপিত। পূর্ব দেয়ালে তিনটি প্রবেশ পথ খাঁজকাটা খিলানযুক্ত। মাঝের প্রবেশ পথের ওপর প্রস্তর ফলকে একটি আরবি ভাষায় লিপি ক্ষোদিত আছে। মসজিদে নারীদের নামাজ পড়ার আলাদা ব্যবস্থা রয়েছে। মসজিদের উত্তর-পূর্ব কোণে মহাকালের সাক্ষী একটি তেঁতুল গাছ আছে।

সামনে রয়েছে বিশাল আকৃতির দীঘি। দিঘীর আয়তন প্রায় ৭৭ বিঘা। এর দৈর্ঘ্য প্রায় ১ হাজার ২৫০ ফুট এবং প্রস্থ প্রায় ৯শ ফুট। দীঘিটি সুগভীর এবং স্বচ্ছ জলরাশি। কথিত আছে- দীঘির তলদেশে পারদ মিশ্রিত থাকায় পানিতে কচুরি পানা বা অন্য কোনো আগাছা জন্মে না। দীঘিতে নামার জন্য দুটি দৃষ্টিনন্দন সিড়ি রয়েছে। দীঘির হৃদয় শীতল করা পানিতে অজু করেন মুসল্লিরা। দর্শনার্থীরা হাত-মুখ ধুয়ে দূর করেন ক্লান্তি।

প্রতি বছরে ঈদের দিন থেকে শুরু করে কয়েকদিন পর্যন্ত ঘুরতে আসেন হাজারো নারী-পুরুষ। অনেকে সপরিবারে ছুটে আসেন। এছাড়া অন্যান্য দিনেও দর্শনার্থীরা এসে থাকেন। ঈদুল ফিতর উপলক্ষে মসজিদের চারপাশে বসেছে গ্রামীণ মেলা।

কুসুম্বা মসজিদের পশ্চিম পাশে প্রায় ২শ মিটার দূরে অবস্থিত সোনা দীঘি। দর্শনার্থীদের অনেকের কাছে সোনা দীঘির বিষয়টি অজানা। ফলে তারা সোনা দীঘি না দেখেই মসজিদ ও দীঘি দেখে ফিরে যান। কথিত আছে- সুলতান আলাউদ্দীন হোসাইন শাহ-এর আদরের কণ্যা ছিলেন ‘সোনা’। অকালে তার মৃত্যু হলে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন সুলতান। কণ্যার স্মৃতিকে স্মরণীয় করতে রাখতে ‘সোনা দীঘি’ খনন করা হয়।

সোহাগ হোসেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী। বাড়ি নওগাঁ সদর উপজেলার ডাক্তারের মোড়ে। ঈদের দিনে তিনি কুসুম্বা মসজিদে বন্ধুদের সঙ্গে বেড়াতে আসেন। তিনি বলেন, বাড়ি নওগাঁ জেলায় হলেও কখনো এই মসজিদটি দেখা হয়নি। তাই সময় করে বন্ধুদের নিয়ে বেড়াতে এসেছি। এক কথায় বলতে গেলে অসাধারণ মসজিদ এবং দীঘি। দীঘির পানির স্বচ্ছতা আমাকে মুগ্ধ করেছে। আর ঈদের দিনে এখানে এতো মানুষের ভিড় হবে তা কল্পনাই করতে পারিনি।

জেলার আত্রাই উপজেলার গৃহবধূ পূর্ণিমা রানী বলেন, স্বামী চাকরিজীবী হওয়ায় এখানে আসার সুযোগ হয় না। ঈদের ছুটিতে পরিবারের সবাইকে নিয়ে বেড়াতে এসেছি। যেহেতু মুসলিম সম্প্রদায়ের ঈদ। ধর্ম যার যার উৎসব সবার। এখানে বেড়াতে এসে অনেক অনেক ভালো লেগেছে।

আল-মামুন ও রুবেল হোসেন নামে দুই দর্শনার্থী বলেন, এখানে মসজিদ ও দীঘি দেখার পর বিনোদনের আর কোনো ব্যবস্থা নেই। এখানে যদি পার্ক থাকত তাহলে পর্যটকরা একটু সময় কাটাতে পারত। এছাড়া খাবারের ভালো কোনো হোটেল নেই। নেই আবাসিক কোনো সু-ব্যবস্থা। ফলে বাহিরের জেলা বা বিদেশ থেকে কোনো পর্যটক আসলে থাকার জন্য নওগাঁ শহরের বা রাজশাহীতে যেতে হবে। এখানে একটি পর্যটন স্পট, বিশ্রামাগার ও সংগ্রহশাল স্থাপন করার দাবি জানান তারা।

মান্দা কুসুম্বা মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম বলেন, ঈদকে ঘিরে কয়েকদিন পর্যন্ত চলে দর্শনার্থীদের আনাগোনা। দর্শনার্থীদের আগমনকে ঘিরে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। মসজিদের চারপাশে ও দীঘিতে নামার সিঁড়িতে টাইলস বসানো হয়েছে। লাইটিং করে দৃষ্টিনন্দন করা হয়েছে। এছাড়া আরও উন্নয়নমূলক কাজ করা হবে বলে জানান তিনি।

আব্বাস আলী/আরএআর/এমএস