দেশজুড়ে

তালিকায় ভুয়া কৃষক, লটারি বর্জন করলেন প্রকৃত কৃষকরা

মেহেরপুরের গাংনী উপজেলায় সরকারিভাবে আমন ধান কেনার লক্ষ্যে কৃষক বাছাইয়ে অনিয়ম হয়েছে। ভুয়া কৃষকের দিয়ে তালিকা করা হয়েছে। এ অবস্থায় প্রকৃত কৃষকদের নিয়ে লটারি অনুষ্ঠান বর্জন করেছেন পৌর মেয়র আশরাফুল ইসলাম।

মঙ্গলবার (০৩ ডিসেম্বর) সকাল ১০টার দিকে গাংনী উপজেলা পরিষদ হল রুমে উপজেলা কৃষি অফিস ও খাদ্য অফিস আয়োজিত লটারি অনুষ্ঠানে অনিয়মের এ অভিযোগ ওঠে। এই পরিপ্রেক্ষিতে আগামী ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত কৃষক বাছাইয়ে লটারি কার্যক্রম স্থগিত করা হয়।

স্থানীয় সূত্র জানায়, গাংনী উপজেলায় এ বছর সকারিভাবে কৃষকদের কাছ থেকে ১ হাজার ৬৮৮ মেট্রিক টন ধান কেনা হবে। কৃষিকার্ডের আওতাভুক্ত জনপ্রতি চাষির কাছ থেকে প্রতিকেজি ২৬ টাকা দরে এক মেট্রিক টন করে ধান কেনা হবে।

মঙ্গলবার সকালে লটারি অনুষ্ঠান চলাকালে গাংনী পৌর মেয়র আশরাফুল ইসলাম অভিযোগ করেন সরকারি নিয়মনীতি উপেক্ষা করে কৃষি কর্মকর্তা মনগড়াভাবে অফিসে বসেই কৃষকদের নামের তালিকা প্রস্তুত করেছেন। এতে প্রকৃত চাষিদের বাদ দেয়া হয়েছে। ভুয়া কৃষকদের দিয়ে তালিকা করা হয়েছে। এ নিয়ে অনুষ্ঠানে উপস্থিত অতিথি, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও কৃষকদের তোপের মুখে পড়েন কৃষি কর্মকর্তা কেএম শাহাবুদ্দিন আহমেদ।

পাশাপাশি বিভিন্ন কৃষক অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে তালিকার অনিয়ম নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। এ সময় কৃষি কর্মকর্তাকে কৃষকদের বিভিন্ন প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়। পরে লটারি অনুষ্ঠান বর্জন করেন কৃষকরা।

এ ব্যাপারে কৃষি কর্মকর্তা কেএম শাহাবুদ্দীন বলেন, সময়ের স্বল্পতার কারণে কৃষকের নামের তালিকা প্রস্তুতে কিছুটা অসঙ্গতি থাকতে পারে। চলতি মাসের ১২ ডিসেম্বরের মধ্যে সঠিক তালিকা করা হবে। কেউ যেন কোনো প্রশ্ন তুলতে না পারে সে ব্যাপারে ব্লক সুপারভাইজারদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

লটারি অনুষ্ঠান বর্জন করে কৃষকদের বিক্ষোভ

গাংনী উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা মো. খলিলুর রহমান বলেন, কৃষকদের তালিকা প্রস্তুতের ব্যাপারে খাদ্য অফিসের কোনো হাত নেই। এ ব্যাপারে কৃষি অফিস তালিকা করে থাকে। সেই তালিকা অনুযায়ী খাদ্যশস্য কেনা হয়।

এদিকে, লটারি পরিচালনা অনুষ্ঠানের সভাপতি গাংনী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দিলারা রহমান কৃষি কর্মকর্তাকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং সব ধান চাষিকে তালিকাভুক্ত করার লক্ষ্যে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতায় নতুন করে তালিকা প্রস্তুতের নির্দেশ দিয়েছেন।

সেই সঙ্গে আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে আগামী ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত লটারি কার্যক্রম স্থগিত করা হয়। আগামী ১২ ডিসেম্বর উন্মুক্ত লটারি হবে বলেন জানান তিনি। এছাড়া কৃষি অফিসের ব্লক সুপারভাইজারদের কৃষকের বাড়ি বাড়ি গিয়ে স্বচ্ছ তালিকার তৈরির নির্দেশ দেন তিনি।

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এম এ খালেক বলেন, যেহেতু কৃষকের তালিকা নিয়ে কিছু মতবিরোধ উঠেছে সেহেতু সঠিক তালিকা করে পুনরায় লটারি করা হবে।

মেহেরপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ সাহিদুজ্জামান খোকন বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত লটারি বন্ধ করেছেন, এতে আমার কোনো দ্বিমত নেই। আমিও চাই দুই-একদিন দেরি হলেও প্রকৃত কৃষকরা সরকারি মূল্যে ধান বিক্রি করুক। এতে আমার এলাকার কৃষক উপকৃত হবে।

অনুষ্ঠানে গাংনী থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওবাইদুর রহমান, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ফারহানা ইয়াসমিন, রাইপুর ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম সাকলায়েন সেপু, মটমুড়া ইউপি চেয়ারম্যান সোহেল আহম্মেদ, বামুন্দি ইউপি চেয়ারম্যান শাহিদুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।

আসিফ ইকবাল/এএম/এমকেএইচ