দেশজুড়ে

কমছে তাপমাত্রা, বাড়ছে দুর্ভোগ

পঞ্চগড়ে মাঝারি পর্যায়ের শৈত্যপ্রবাহে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) সকাল ৯টায় সর্বনিম্ন ৬ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে তেঁতুলিয়া আবহাওয়া অফিস। গতকাল মঙ্গলবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৯ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

এদিকে সকাল ৯টা পর্যন্ত জেলা শহরসহ এর আশপাশ এলাকা ঘন কুয়াশায় ঢেকে ছিল। এরপর সূর্যের মুখ দেখা মেলে। ধীরে ধীরে কেটে যায় ঘন কুয়াশা। সকাল ১০টার পর থেকে চারপাশে ঝলমলে রোদের কারণে শীতের তীব্রতা কিছুটা কমতে থাকে। তবে উত্তরের হিমেল বাতাসের কারণে কনকনে শীত অনুভূত হচ্ছে বলে জানান স্থানীয়রা।

এতে দুর্ভোগে পড়েছেন রিকশা-ভ্যান চালকসহ খেটে খাওয়া মানুষ। বিশেষ করে নদীতে নেমে পাথর সংগ্রহ করা পাথর শ্রমিকদের অবস্থা নাজুক। ঠান্ডার কারণে তারা পানিতে নামতে পারছেন না। দৈনন্দিন আয় কমে গেছে রিকশা-ভ্যান চালকদের। যারা প্রতিদিন রিকশা চালিয়ে সাধারণত ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা আয় করতেন। তাদের আয় নেমে এসেছে ২০০ থেকে ২৫০ টাকায়। পরিবার-পরিজন নিয়ে তারা দুর্ভোগে দিনযাপন করছেন।

জেলা শহরের রামের ডাংগা এলাকার কুলি শ্রমিক মো. বুলু বলেন, আমরা গাড়ি থেকে পণ্য ওঠানো নামানোর কাজ করি। অনেক সময় আমাদের রাতেও কাজ করতে হয়। কিন্তু ঠান্ডার কারণে ঠিকমতো কাজ করতে পারছি না। আগে প্রতিদিন ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা পর্যন্ত আয় হতো। এখন অর্ধেকও আয় করতে পারি না। শীতবস্ত্রের পাশাপাশি আমাদের আর্থিক সহায়তাও প্রয়োজন।

এদিকে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সরকারি বরাদ্দসহ এ পর্যন্ত ৩৩ হাজারের বেশি শীতবস্ত্রসহ কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। প্রতিদিন গভীর রাতে প্রত্যন্ত এলাকার এতিমখানাসহ শীতার্তদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে কম্বল বিলি করছেন জেলা প্রশাসক সাবিনা ইয়াসমিন, পুলিশ সুপার মো. ইউসুফ আলী, ১৮ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল খন্দকার আনিসুর রহমানসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। এছাড়া জেলা এবং জেলার বাইরে থেকে দানশীল ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকেও বিভিন্ন এলাকায় শীতবস্ত্র বিতরণ করা হচ্ছে। তবে জেলার প্রায় দুই লাখ শীতার্ত মানুষের জন্য সরকারিভাবে আরও শীতবস্ত্র বরাদ্দ প্রয়োজন বলে জানান স্থানীয়রা।

তেঁতুলিয়া আবহাওয়া অফিসের সিনিয়র পর্যবেক্ষক জিতেন্দ্রনাথ রায় বলেন, আবহাওয়া অফিসের তথ্যমতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৬ থেকে ৮ এর মধ্যে থাকলে মাঝারি এবং ৮ থেকে ১০ এর মধ্যে অবস্থাকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়। বুধবার সকালে তেঁতুলিয়ায় সর্বনিম্ন ৬ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এই অবস্থাকে মাঝারি পর্যায়ের শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়ে থাকে। মঙ্গলবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৯ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। একই দিন দিনের তাপমাত্রা (সর্বোচ্চ তাপমাত্রা) রেকর্ড করা হয় ২২ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

জেলা প্রশাসক সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, সরকারিভাবে বরাদ্দসহ এ পর্যন্ত ৩৩ হাজার শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। আমরা নিজেও দুস্থ শীতার্ত ও এতিম শিশুদের কাছে গিয়ে তাদের হাতে শীতবস্ত্র তুলে দেয়া চেষ্টা করছি। এছাড়া বিভিন্ন ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানকে শীতার্তদের পাশে দাঁড়াতে আহ্বান জানানো হয়েছে। তাদের পক্ষ থেকেও জেলার বিভিন্ন এলাকায় শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হচ্ছে।

সফিকুল আলম/আরএআর/জেআইএম