আজ ১২ জানুয়ারি, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় দিবস। খ্যাতি আর গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টি পদার্পণ করল ৪৯ বছরে। ১৯৭১ সালের ঠিক এই দিনে আনুষ্ঠানিকভাবে এই বিশ্ববিদ্যালয়টির উদ্বোধন করা হয়। এরপর থেকে প্রতি বছর এই দিনটিকে বিশ্ববিদ্যালয় দিবস হিসেবে পালন করে আসছে কর্তৃপক্ষ।
১৯৭০ সালের ২০ আগস্ট তৎকালীন সরকার এক অধ্যাদেশের মাধ্যমে ঢাকার পূর্বনাম অনুসারে রাজধানীর অদূরে সাভারে ‘জাহাঙ্গীরনগর মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়’ নামে এ বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করে। স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালে বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ পাস হলে মুসলিম শব্দটি বাদ দিয়ে এর নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়’। বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে প্রতিবারের মতো এবারও নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
৪৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষীকি উপলক্ষে বর্ণিল সাজে সাজানো হয়েছে ক্যাম্পাস। এছাড়া দিবসটি পালন উপলক্ষে রোববার সকালে বিজনেস স্টাডিজ অনুষদ চত্বরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের কর্মসূচি উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর উপাচার্যের নেতৃত্বে বর্ণাঢ্য আনন্দ শোভাযাত্রা বের হয়ে সেলিম আল দীন মুক্তমঞ্চে গিয়ে শেষ হয়।
দুপুরে সেলিম আল দীন মুক্তমঞ্চে শিক্ষার্থী কল্যাণ ও পরামর্শদান কেন্দ্রের আয়োজনে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, দেশের ঐতিহ্যবাহী পুতুলনাট্য প্রদর্শন করা হবে। বিকেলে ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের উদ্যোগে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করা হবে। এরপর ‘রঙ্গন মাইম একাডেমি’ পরিবেশিত মূকাভিনয়: ‘হৃদয়ে বাংলাদেশ ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ’ এবং সন্ধ্যায় ‘নকশীকাঁথা ব্যান্ড’র সঙ্গীতানুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়টি শুরুতে মাত্র চারটি বিভাগ নিয়ে যাত্রা শুরু করলেও বর্তমানে ছয়টি অনুষদের অধীনে ৩৪টি বিভাগ ও ৪টি ইনস্টিটিউটে এখানে প্রায় ১৬ হাজার শিক্ষার্থী পড়াশুনা করছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন প্রখ্যাত রসায়নবিদ অধ্যাপক মফিজ উদ্দিন আহমেদ। এরপর আরও ১৭ জন উপাচার্যের পদে আসীন হয়েছেন। সর্বশেষ ২০১৪ সালে দেশের প্রথম নারী হিসেবে অধ্যাপক ফারজানা ইসলামকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্ব দেয়া হয়। তিনি দ্বিতীয় মেয়াদে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করছেন।
সংস্কৃতির রাজধানী খ্যাত এই বিশ্ববিদ্যালয়কে স্মৃতিধন্য করেছেন সেলিম আল দীন, হুমায়ুন ফরিদী, মুশফিকুর রহিম, মাশরাফি বিন মুর্তজা, আনু মুহাম্মদসহ আরও অনেকে। এখানেই রয়েছে দেশের সর্বোচ্চ শহীদ মিনার। কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে রয়েছে বিখ্যাত স্থপতি হামিদুজ্জামান খানের নকশায় মুক্তিযুদ্ধের স্মারক ভাস্কর্য ‘সংশপ্তক’। আর প্রধান ফটক হয়ে একটু সামনে এগোলেই দেখা যাবে ‘অমর একুশে’ ভাস্কর্য। নাট্যাচার্য সেলিম আল দীনের নামে রয়েছে দৃষ্টিনন্দন মুক্তমঞ্চ।
৪৯ বছরের পথচলায় শিক্ষা ও গবেষণা ক্ষেত্রে অসামান্য অবদান রেখে চলেছে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। মহান মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের। দেশের ক্রান্তিলগ্নেসহ নানা যৌক্তিক আন্দোলনে প্রতিবাদের আরেক নাম ছিল জাহাঙ্গীরনগর। সকলের প্রত্যাশা নানা প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে সাফল্যের ধারা অব্যাহত রেখে এগিয়ে যাবে জাহাঙ্গীরনগর। শুভ জন্মদিন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।
ফারুক হোসেন/আরএআর/পিআর